নন্দিতার সাতকাহনে হরেক রকমের নাড়ু
নাড়ু খেতে কার না ভালো লাগে। আর তা যদি হয়, হরেক রকম তাহলে তো কথাই নেই। নাড়ু অনেকেরই প্রিয় খাবার। আবার এটি গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যও। গ্রামে নাড়ু সহজে মিললেও শহরে বসে নাড়ু পাওয়া খুব একটা সহজ নয়। তবে দিনবদলের সঙ্গে বদলে গেছে নাড়ুর বিচরণও। এখন শহর-গ্রাম সবখানেই মজাদার এ খাবার পাওয়া যায়। বিশেষ করে অনলাইনে তো আরও সহজ। তেমনি অনলাইনে হরেক রকমের নাড়ু করছেন নন্দিতা সাহা। চাকরির পাশাপাশি শুধু নাড়ু বিক্রি করে প্রতি মাসে তার বাড়তি আয় ১০-১২ হাজার টাকা।
নন্দিতা সাহা দিনাজপুর সদরের বালুবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। নানা রকমের নাড়ু তৈরি ও বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রয়েছে ‘নন্দিতার সাতকাহন’ নামে একটি পেজ। যাতে নাড়ু প্রিয় মানুষের ব্যাপক সাড়া রয়েছে।
দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে অনলাইনে নাড়ুর ব্যবসা করছেন নন্দিতা। বিভিন্ন উৎসব বিশেষ করে দুর্গাপূজায় যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। প্রতি মাসে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ কেজি বিভিন্ন পদের নাড়ু বিক্রি করছেন নন্দিতা। এবার দুর্গাপূজাকে ঘিরে ইতোমধ্যে ৩০০ কেজি নাড়ুর বাড়তি অর্ডারও পেয়েছেন।
নন্দিতার সাতকাহনে শুধু নারকেলের নাড়ুই নয়, রয়েছে তিলের নাড়ু, ক্ষীরের সন্দেশ, নারিকেল চিনির নাড়ু, চিড়ার মোয়া, ঝুড়ির নাড়ু, মুড়ির মোয়া, ছোট নিমকি, মুগের পাঁপড় ও আলুর চিপস।
নন্দিতা সাহা পেশায় একজন রেডিওগ্রাফার। তিনি ২০১৪ সালে রংপুর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি থেকে ডিপ্লোমা পাস করেন। এরপর দিনাজপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চাকরিতে যোগ দেন। চাকরির পাশাপাশি নাড়ু বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন তিনি।
সরেজমিনে নন্দিতা সাহার বাসায় গিয়ে চোখে পড়ে তার কর্মব্যস্ততা। ঘরের মেঝেতে বসে নাড়ু তৈরি করছেন নন্দিতা, তার মা ও বৌদি। পাশের ঘরে নাড়ু প্যাকেটজাত করতে ব্যস্ত নন্দিতার ছোট ভাই। এটা তাদের প্রতিদিনের চিত্র।
নন্দিতা সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুই বছর আগে মায়ের তৈরি নাড়ুর ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছিলাম। সেই ছবি দেখে অনেকে নাড়ুর প্রশংসা করেন। কেউ কেউ নাড়ুর অর্ডার করেন। সেই থেকে নাড়ু বিক্রি শুরু। শুরুর দিকে পুঁজি ছিল মাত্র এক হাজার টাকা। সেই টাকা দিয়ে নারিকেল, গুড়, চিনি কিনে শুরু করি নাড়ু বানানোর কাজ। তখন থেকে প্রতি মাসে ১০-১৫ কেজি নাড়ু বিক্রি করে আসছি।
তিনি আরও বলেন, এ বছর জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে দিনাজপুরের উদ্যোক্তাবর্গ নামে ফেসবুকভিত্তিক অনলাইন গ্রুপে যুক্ত হই। সেখানে গ্রাহকের কাছে নাড়ুর প্যাকেট পাঠানোর সময় সেটির ছবি তুলে উদ্যোক্তা গ্রুপে পোস্ট করতাম। এতে করে অর্ডার পেতাম বেশি করে।
গত ছয় মাসে দেড় লাখ টাকার বেশি নাড়ু বিক্রি করেছি। আমার হাতে বানানো নাড়ু শুধু দিনাজপুর ও ঢাকায় না, দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। বাবার সীমিত আয়। ফলে চাকরির পাশাপাশি এই নাড়ু বিক্রির টাকা সংসারেরও কাজে লাগাতে পারি। ছোট ভাইকেও পড়াশোনার খরচ দিতে পারছি। এখন প্রতিমাসে ৫০-৬০ কেজি নাড়ু বিক্রি হয়। চাকরির পাশাপাশি মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বাড়তি আয় হয় প্রতি মাসে। এই টাকায় পরিবারে সচ্ছলতা ফিরেছে। নাড়ু ঘিরে আরও বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখছেন নন্দিতা সাহা।
নন্দিতার সাতকাহনের প্রতি কেজি নারকেলের নাড়ু (গুড়ের তৈরি) ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ঝুড়ির নাড়ু ৬০০ টাকা, নারকেলের নাড়ু (চিনির তৈরি) ৭০০ টাকা, ক্ষীরের সন্দেশ ৮০০ টাকা তিলের নাড়ু ৮০০ টাকা, মুড়ির মোয়া ৫০০ টাকা, চিড়ার মোয়া ৬০০ টাকা, মুগের পাপড় ৫০০ টাকা, ছোট ছোট নিমকি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
নন্দিতার ছোট ভাই পলাশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বোনের নাড়ু শুধু দিনাজপুরে জনপ্রিয় নয়, সারাদেশেই জনপ্রিয়। নন্দিতার সাতকাহনের নাড়ুর জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অর্ডার আসে। পরে কুরিয়ারের মাধ্যেমে পৌঁছে দেই। পড়াশোনার পাশিপাশি বড় বোনের কাজে সহযোগিতা করতে আমার ভালো লাগে।
নন্দিতার মা শ্রীমতী সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাড়িতে খাওয়ার জন্য প্রায়ই নাড়ু বানাতাম। এই নাড়ুর ছবি ফেসবুকে দেওয়াতে মেয়েকে বকাও দিয়েছি। কিন্তু এখন দিনের অধিকাংশ সময় এই নাড়ু তৈরির কাজেই ব্যস্ত থাকতে হয়। ভালোই লাগে। মেয়ে সংসারে বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি করেছে। পরিবারের সবার মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে।
আরএআর