নৌকার টিকিট চান সাবেক বিএনপি নেতা
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান সাবেক বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম। নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন নিতে ইতোমধ্যে লবিং ও তদবির করছেন তিনি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তিনি উপজেলা বিএনপির সক্রিয় নেতা ছিলেন।
এদিকে মনোনয়ন চাওয়ার গুঞ্জনে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বলছেন, অনুপ্রবেশকারীরা যদি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান, তাহলে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি হতাশা তৈরি হবে।
বেশ কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সাইফুল ইসলাম উপজেলা বিএনপির একজন সক্রিয় নেতা। তিনি বিএনপির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, সভায়, মিছিলে সক্রিয়ভাবে যোগদান করতেন। সিলেটে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের দিন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান দুদু তার বাসায়ও অবস্থান করেন।
এ ছাড়া সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির মাসুকের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতেও অংশ নেন তিনি। বিএনপির অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার বেশ কয়েকটি আলোকচিত্র ঢাকা পোস্টর হাতে এসে পৌঁছেছে।
জানা যায়, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী বাচাইয়ের লক্ষ্যে গত শনিবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা উপজেলা অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আপ্তাব আলী কালা মিয়ার সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, প্রধান বক্তা ছিলেন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান। তখন সভায় কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের মাধ্যমে সব ইউনিয়নে প্রার্থী বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় উপজেলার ৬ নম্বর দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান সাইফুল ইসলাম, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এম এ হান্নান, প্রচার সম্পাদক এখলাছুর রহমান, সদস্য ইকবাল হোসেন এমাদ, ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি বাবুল হোসেন।
প্রার্থী বাচাইয়ের এই ভোটে কাউন্সিলর ছিলেন ২০ জন। তারা হলেন ৯টি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তবে দুজন কাউন্সিলর আগেই মারা যাওয়ায় নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১৮ জন। পরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ইকবাল হোসেন এমাদ সর্বোচ্চ ১১ ভোট পান। এ সময় সাইফুল ইসলাম ৬ ভোট ও এম এ হান্নান পান ১ ভোট। এখলাছুর রহমান ও বাবুল হোসেন কোনো ভোট পাননি।
তবে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে হেরে গেলেও বসে থাকেননি সাইফুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে বিভিন্ন জায়গায় লবিং ও তদবিরে নেমে পড়েন তিনি।
দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মইন উদ্দিন বলেন, সাইফুল ইসলাম বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিয়েছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সিলেটে ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও সক্রিয় ছিলেন তিনি, যার বিভিন্ন ছবি আছে।
সিলেটে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের দিন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান দুদু তার বাসায় অবস্থান করেন। এ ছাড়া সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির মাসুকের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। এখন যদি বিএনপি নেতা সাইফুল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান, তবে ত্যাগী নেতারা বঞ্চিত হবেন।
তিনি আরও বলেন, আমি আর সাইফুল একসঙ্গে এক রুমে সৌদিতে ছিলাম। আমরা যখন টিভিতে খবর দেখতাম, তখন আওয়ামী লীগের খবর এলে তিনি টিভি বন্ধ করে দিতেন। এ নিয়ে তার সঙ্গে আমাদের দ্বন্দ্ব হয়। পরে আমি আলাদা কক্ষ নিয়ে থাকি।
দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাসিম বলেন, সাইফুল বিএনপির লোক। এখন তিনি টাকার জোরে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রার্থী বাছাইয়ে সাইফুল মাত্র ৬ ভোট পেয়ে হেরেছেন। তবু তার নাম জেলা ও কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। কার স্বার্থে এটা করা হয়েছে, তা আমাদের জানা নেই। আমরা সারাজীবন আওয়ামী লীগ করেও বঞ্চিত আর বিএনপির নেতারা এখন মনোনয়ন পাওয়ার তালিকায়।
তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে নেতাদের তার বিএনপি সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানালেও কোনো লাভ হয়নি। ফলে বাধ্য হয়েই তার নাম কমিটিতে যুক্ত করা হয়। বর্তমানে তিনি ইউনিয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন। সাইফুলের মতো হাইব্রিড যদি নেতৃত্বে আসে তাহলে সপরিবারে আওয়ামী লীগ পরিবার থেকে বিদায় নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি ২০০৪ সালে ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটিতে ছিলাম। রিয়াদেও আওয়ামী লীগ করেছি। এখন উপজেলা কমিটির সদস্য পদে আছি। এমনকি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাসিমের সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন (সিলেট বিভাগ) বলেন, অনুপ্রবেশকারীরা নৌকার মনোনয়ন পাবে না। এটা দলের সিদ্ধান্ত। ত্যাগী ও যোগ্যরা শুধু নৌকার মনোনয়ন পাবেন।
তুহিন আহমদ/এনএ