তিস্তার পাড়ে চীনের সুকিয়ান সিটি দেখতে চায় উত্তরের মানুষ
বাংলাদেশের সবচেয়ে দরিদ্র বিভাগ রংপুর। আর দেশের সবচেয়ে দরিদ্র ও গরিব জেলাগুলোর পাঁচটিই রয়েছে সর্বনাশা তিস্তাজুড়ে। পাগলা নদীখ্যাত তিস্তা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার লাখ লাখ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার নাম। ২৩৪ বছর বয়সী তিস্তার প্রবাহ এই পাঁচ জেলার বুক চিরে প্রতিবছরই ডেকে আনছে বন্যা ও খরা। এতে মানুষের দীর্ঘশ্বাস ভারী হচ্ছে, প্রতিনিয়ত পাল্টে যাচ্ছে দুই পাড়ের জীবন চক্র।
নদীপাড়ের মানুষের বসতভিটা, ফসল-ফলাদি, সুখ-শান্তি কেড়ে নেওয়া তিস্তা নিজেও ভালো নেই। শুকনা মৌসুমে তিস্তার চারদিকে দেখা যায় ধু-ধু বালুচর। আবার বর্ষাকালে প্রবল পানির তোড়ে ঝুঁকির মুখে পড়ে তিস্তাতীরবর্তী মানুষ।
চীনের দুঃখ হোয়াং হো নদী। আর ভারতের উজান থেকে ভাটির দেশ বাংলাদেশের নরম মাটিতে তিস্তাও এক অভিশপ্ত নদী। এই অভিশাপ থেকে মুক্তির বার্তা শোনা গেছে বহুবার। সেমতো বছর তিনেক আগে জানা যায় তিস্তা নদীর বিস্তৃত ব্যবস্থাপনা ও পুনর্জীবনে একটি মহাপরিকল্পনার কথা। তা হলো, তিস্তার দুই পাড় গড়ে উঠবে পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির আদলে। এ জন্য ব্যয় হতে পারে আনুমানিক ৯ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয় 'তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন'। এরপর থেকে দিন যায়, মাস যায়, বছর ঘুরে বছর আসে। তবু শুরু হয়নি বহুল আকাঙিক্ষত সেই মহান পরিকল্পনা।
আমরা ত্রাণ চাই না। আমাদের নদী খনন করা হোক। বাঁধ দেওয়া হোক। শুনেছি চীনের সঙ্গে সরকার চুক্তি করবে। তিস্তার পাড়ের দুই ধারে খনন, বাঁধ, বড় বড় রাস্তা করবে। শহরের মতো এখানে বিদেশিরা আসবে, পর্যটন হবে। তিস্তা পাড় হয়ে উঠবে পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির মতো সুন্দর নগরী। আমরা তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ দেখতে চাই।
চলতি বছর চলতি মুজিব শতবর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুরুর দাবি জানিয়েছেন রংপুর অঞ্চলের বিশিষ্টজনরাসহ তিস্তাপারের মানুষ। তাদের বিশ্বাস, এই শুভ সময়ে যদি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে সরকার, তা হবে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন হলে পানির জন্য ভারতের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। বরং বিজ্ঞানসম্মত সুরক্ষায় যেমন বাঁচবে তিস্তা নদী, তেমনি মরুভূমি হওয়ার আশঙ্কা থেকে বাঁচবে এ অঞ্চল। একই সঙ্গে তিস্তা নদী নির্ভরশীল প্রায় এক কোটি মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে। সৃষ্টি হবে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। বদলে যাবে কৃষিনির্ভর নদী পারের জীবনরেখা। মিলবে সুদিন, টেকসই মুক্তি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।
তিস্তা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ এলাকায় পানি নেই। নদীতে অসংখ্য চর পড়েছে। কোথাও কোথাও পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নদী দুই ভাগ, তিন ভাগ হয়ে সরু নালার মতো প্রবাহিত হচ্ছে। অথচ গত মাসের মধ্যভাগেও তিস্তার পেট ফুলেছিল বন্যার পানিতে। এখন সেই তিস্তায় অসংখ্য চর জেগেছে। শুকনা মৌসুমে ভারতের পানির ওপর নির্ভরতা থাকায় তিস্তা অববাহিকার পাঁচ জেলা নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় পানির জন্য হাহাকার দেখা দেয়। তখন এ অঞ্চলের মানুষের হাড়ভাঙা পরিশ্রমে তিস্তার ধু-ধু বালুচর হয়ে উঠবে সবুজময়। পানির জন্য কষ্ট হলেও কৃষিনির্ভর মানুষগুলো ব্যস্ত হবে নদীর বুকে ফসল উৎপাদনে।
তিস্তাবেষ্টিত নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা বলেন, আমরা ত্রাণ চাই না। আমাদের নদী খনন করা হোক। বাঁধ দেওয়া হোক। শুনেছি চীনের সঙ্গে সরকার চুক্তি করবে। তিস্তার পাড়ের দুই ধারে খনন, বাঁধ, বড় বড় রাস্তা করবে। শহরের মতো এখানে বিদেশিরা আসবে, পর্যটন হবে। তিস্তা পাড় হয়ে উঠবে পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির মতো সুন্দর নগরী। আমরা তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ দেখতে চাই।
একই দাবি তিস্তা নদীর রংপুরের পীরগাছা, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া উপজেলার, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী উপজেলার, কুড়িগ্রামের উলিপুর, রাজারহাট, চিলমারী, গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মানুষের।
তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন’ নামের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তিস্তা নদীর ডান-বাম উভয় তীর ঘেঁষে ২২০ কিলোমিটার উঁচু গাইড বাঁধ, রিভার ড্রাইভ, হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁ, আধুনিক শহর ও পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠবে। সেই সঙ্গে তৈরি হবে ১৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্পকারখানা, ইপিজেড।
তিস্তা মহাপরিকল্পনায় যা থাকবে
প্রকল্পটিতে তিস্তার উপকূল ব্যবস্থাপনাবিষয়ক নানা অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়াও বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও গ্রীষ্মকালে পানিসংকট দূর করতে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যেহেতু তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব রয়েছে, সেটি কাটিয়ে শুকনা মৌসুমে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। প্রকল্পটিতে এখন পর্যন্ত যে বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে তার মধ্যে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ—নদীগর্ভে ড্রেজিং করা, রিভেটমেন্ট বা পাড় সংস্কার ও বাঁধানো এবং ভূমি পুনরুদ্ধার। এ ছাড়া বন্যা বাঁধ মেরামতেরও পরিকল্পনা রয়েছে।
‘তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন’ নামের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তিস্তা নদীর ডান-বাম উভয় তীর ঘেঁষে ২২০ কিলোমিটার উঁচু গাইড বাঁধ, রিভার ড্রাইভ, হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁ, আধুনিক শহর ও পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠবে। সেই সঙ্গে তৈরি হবে ১৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্পকারখানা, ইপিজেড। এ ছাড়া কয়েক লাখ হেক্টর কৃষিজমি উদ্ধার, বনায়ন করা হবে। এ প্রকল্পের অধীনে তিস্তার মূলপ্রবাহ থাকবে দুই কিলোমিটার, যা নাব্য ধরে রাখবে সারা বছর। কয়েকটি ক্যানেল দ্বারা থাকবে সংযুক্ত, যার সুফল পাবে তিস্তাপাড়ের কোটি মানুষ। বলা চলে মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে চীনের হোয়াং হো নদী ও সুকিয়ান সিটির আদলে তিস্তার দুই পাড়কে আধুনিকভাবে গড়ে তোলা হবে। বাঁধের দুই পাশে থাকবে মেরিন ড্রাইভ। তৈরি হবে আধুনিক সেচ প্রকল্প ও যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ কৃষি খামার। একই সঙ্গে নদীর দুই পাড়ে গড়ে উঠবে স্যাটেলাইট শহর।
নদী রক্ষাবিষয়ক সংগঠনের বক্তব্য
তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে নদীর ভাঙন প্রতিরোধ, বন্যানিয়ন্ত্রণ ও কৃষিনির্ভর অর্থনীতি বাঁচানোসহ ছয় দফা দাবিতে আগামী ১৫ নভেম্বর লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদ। এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন নদী নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠনের নেতারা।
নদী রক্ষাবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক ও বেরোবির শিক্ষক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৭৮৭ সালে ভয়াবহ বন্যার সময় তিস্তা নদীর প্রবাহের সৃষ্টি। ২৩৪ বছর আগে তৈরি হওয়া এ নদীর আজ অবধি কোনো পরিচর্যা করা হয়নি। ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান পর্ব ও বাংলাদেশ যুগের কোনো সময়েই এ নদীর সঠিক পরিচর্যা হয়নি। বরং দফায় দফায় এ নদীর সর্বনাশ করার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে যে নদী হয়ে ওঠার কথা ছিল উত্তরের জীবনরেখা, সেটা হয়ে উঠেছে অভিশাপ। নদীকে যদি আমরা অভিশাপের হাত থেকে আশীর্বাদে পরিণত করতে চাই, তাহলে এই তিস্তা নদীর সুরক্ষা অত্যন্ত প্রয়োজন।
দুই পাড়ের মানুষের জীবন, সম্পদ ও কৃষিজমি সব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এই দুরবস্থা লাঘবে তিস্তা নদী বিজ্ঞানসম্মতভাবে সুরক্ষা জরুরি। দুই কিলোমিটার প্রস্থের নদী এখন ১০-১২ কিলোমিটারে পরিণত হয়েছে। ভাঙন, বন্যা ও খরার হাত থেকে এ অঞ্চলের মানুষকে রক্ষায় মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
তিনি আরও বলেন, তিস্তা নদীতে বিজ্ঞানসম্মত খনন ও এর সুরক্ষা চাই। এই সুরক্ষা দিতে গিয়ে এটি মহাপরিকল্পনার নামে হবে, নাকি অন্য কোনো পরিকল্পনায় হবে, তা আমাদের অজানা। আমরা জানি না এর অর্থায়ন বিদেশ থেকে নিতে হবে, নাকি দেশ থেকে। দেশের একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে বাঁচাতে হলে এ নদীর পরিচর্যা করতেই হবে। এ অঞ্চলের অর্থনীতিসহ তিস্তা নদী ও নদীপাড়ের মানুষকে বাঁচাতে সুপরিকল্পিত ও বিজ্ঞানসম্মত সুরক্ষার বিকল্প নেই। প্রথমত, এটা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা থাকা দরকার। ঐতিহাসিক মুজিব শতবর্ষে তিস্তার মহাপ্রকল্পে কাজের শুরু দেখতে এখন নদীপাড়ের মানুষ মুখিয়ে আছে।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, তিস্তা নদী এ অঞ্চলের মানুষের জীবনসঞ্চারি। তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে দুই পাড়ের মানুষের জীবন, সম্পদ ও কৃষিজমি সব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এই দুরবস্থা লাঘবে তিস্তা নদী বিজ্ঞানসম্মতভাবে সুরক্ষা জরুরি। দুই কিলোমিটার প্রস্থের নদী এখন ১০-১২ কিলোমিটারে পরিণত হয়েছে। ভাঙন, বন্যা ও খরার হাত থেকে এ অঞ্চলের মানুষকে রক্ষায় মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিদেশি অর্থসহায়তা না মিললে পদ্মা সেতুর মতো দেশের টাকায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও পাউবো যা বলছে
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করার কথা রয়েছে চীনা প্রকৌশলীদের। তাদের একটি প্রতিনিধি দল ডালিয়া ব্যারাজ ও তিস্তার নদীর বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। বর্তমানে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে আটকে আছে। এই প্রকল্পে অর্থায়ন কে করবে, বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় ফাইল পরিকল্পনা কমিশনের লালফিতাতেই বন্দী হয়ে আছে। নাম না প্রকাশের শর্তে ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য জানিয়েছেন রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা।
সম্প্রতি (২৫ সেপ্টেম্বর) একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আয়োজন করেছিল ‘উত্তরের উন্নয়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ বিষয়ক বিশেষ টক শো। সেখানে আলোচনায় অংশ নেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। ওই অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিস্তা নদী খনন করে পানির প্রবাহ সঠিক মানে রাখতে প্রধানমন্ত্রী চিন্তাভাবনা করেছেন। এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যখন চীন সফরে গিয়ে সেখানকার প্রেসিডেন্টকে এ নিয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন। এখন সেই মোতাবেক কাজ হচ্ছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত পেলে পরে কাজ শুরু করতে পারব। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে শুষ্ক মৌসুমে সৃষ্ট খরায় পানিশূন্যতা থেকে রেহাই মিলবে।
একই অনুষ্ঠানে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি সরকারের ওপর মহলের। তবে চায়না পাওয়ার কোম্পানি নির্মিতব্য প্রকল্প বাস্তবায়নে নকশা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করছেন। এটি ২০২২ সালের মধ্যে কাজ শুরু করা গেলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দ্রুত এ প্রকল্পের অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত হবে।
প্রসঙ্গত, ভারত থেকে বাংলাদেশে যে ৫৪টি নদী প্রবেশ করেছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে তিস্তা। এটি ভারতের সোলামো লেক থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রংপুর অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পরে এটি কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীর কাছে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। দীর্ঘ বছর ধরে তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে একটি তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের দাবি উঠে আসছে। কিন্তু ভারতের কালক্ষেপণ আর নানা অজুহাতে আটকে আছে সেই চুক্তি। এ কারণে রংপুর অঞ্চলের মানুষ এখন তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন।
গত ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় তিস্তা চুক্তি সই হওয়ার ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার মুখে তা আটকে যায়। এরপর ২০১৫ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে বাংলাদেশ সফর করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তিনি আশ্বস্ত করেন যে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো হবে। এরপর কেটে গেছে পাঁচটি বছর, কিন্তু সমাধান হয়নি তিস্তা সমস্যার। সবশেষ ২০১৯ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে মীমাংসা আসার সম্ভাবনা থাকলেও সেটি আর হয়নি।
এনএ