কোনো কাজ না করেও বহুতল ভবনের মালিক, জানা গেল রহস্য
প্রায় ৪৫ শতাংশ জমির ওপর বহুতল ভবন। সুরক্ষার জন্য আছে ১২ ফুট উঁচু সীমানা প্রাচীর। তার ওপরে কাচের টুকরো গেঁথে দেওয়া হয়েছে। এর ওপরে লোহার পাত দিয়ে চার ফুট উঁচু করে তারকাঁটার বেড়া দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য আছে অন্তত ৩০টি সিসি ক্যামেরা।
এখানেই শেষ নয়, জার্মান শেফার্ডের তিনটি কুকুরও আছে প্রতিরক্ষার জন্য। আছে ঘরের বাথরুমের কাঁচ সরিয়ে পালানোর পথ। চিলেকোঠার ঘরের সিলিংয়ে আছে আত্মগোপন করে থাকার সুব্যবস্থা। বিদেশি কবুতর, অসংখ্য গাছ এবং মেঝেতে মাছ চাষের জন্য বড় আকৃতির জলাধার। এমন বিলাসবহুল বাড়ি যার তার নাম মাসুদ পারভেজ (৫১)। তিনি পাঁচটি মাদক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি।
দৃশ্যমান তেমন কোনো কাজ করেন না মাসুদ পারভেজ। তবে কীভাবে তিনি এই বিলাসবহুল বাড়ি করেছেন তা নিয়ে ফরিদপুর শহতলীর মাহমুদপুর মহল্লার বাসিন্দাদের আগ্রহের যেন শেষ ছিল না। অবশেষে সেই রহস্যের জট খুলেছে। মাসুদ পারভেজের স্ত্রী রিনা বেগমকে (৩৫) গ্রেফতারের পর জানা গেল ইয়াবার ব্যবসা করে এসব করেছেন মাসুদ।
শনিবার (০২ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) জামাল পাশা।
তিনি বলেন, মাসুদ পারভেজের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আটটি মামলা রয়েছে। এ মামলাগুলো হয়েছে ২০১৩ সালের ১৩ জুন থেকে ২০১৯ সালের ২৬ আগস্টের মধ্যে। এ আটটি মামলার মধ্যে পাঁচটিতে গ্রেফতারি পরওয়ানা রয়েছে মাসুদ পারভেজের নামে। এর মধ্যে দুটি মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত।
গতকাল শুক্রবার (০১ অক্টোবর) রাতে মাদক মামলার পলাতক আসামি মাসুদ পারভেজকে গ্রেফতারে পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালায়। তবে মাসুদ পারভেজকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তার বাড়ি থেকে ১৯৮টি ইয়াবা ট্যাবলেটসহ স্ত্রী রিনা বেগমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রীনার নামেও মাদক আইনে দুটি মামলা রয়েছে। একটি মামলা ২০১২ সালের এবং অপরটি ২০১৩ সালের।
পুলিশ জানায়, অভিযানে বিপুল পরিমাণ ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ও সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। বাড়িটির চিলেকোঠার সুরক্ষিত কক্ষে মাদক সেবন ও ডিজে পার্টির আয়োজন করা হতো।
জানা গেছে, মাসুদ পারভেজ দৃশ্যমান কোনো কাজ করেন না। তার পরিবারও তেমন সচ্ছল ছিল না। মাসুদ পারভেজ শহরের গুহলক্ষ্মীপুর এলাকার বাসিন্দা। মামুদপুরে তার অলিশান বাড়ি নির্মাণ স্বাভাবিকভাবেই এলাকাবাসীর মনে কৌতূহলের জন্ম দেয়। পরে জানা গেল ইয়াবার ব্যবসা করেই তিনি এই বিশাল বাড়ি নির্মাণ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার, ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমএ জলিল, পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল গফ্ফার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল গফ্ফার বলেন, শুক্রবারের অভিযান ও মাদক উদ্ধারের ঘটনায় মাসুদ পারভেজ ও রিনা বেগমসহ তিনজনকে আসামি করে মাদ্রকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরেকটি মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিনা বেগমকে শনিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জহির হোসেন/আরএআর