ভাবির সঙ্গে পরকীয়া করায় বন্ধুকে হত্যা
গত বছরের ১০ জুলাই গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের পাবুরিয়া গ্রামের মো. জমির আলীর ছেলে রাসেল (১৯) বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। নিখোঁজের পাঁচদিন পর ১৫ জুলাই সকালে তার বাড়ির এক কিলোমিটার দক্ষিণে গজারি বনের ভেতর থেকে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে নিহতের বাবা শ্রীপুর থানায় মামলা দায়েরের ১৪ মাস পর হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
রাসেল হত্যা সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতাররা হলেন- শ্রীপুর উপজেলার পাবুরিয়াচালা গ্রামের মো. আইয়ুব আলীর ছেলে মো. রানা (২২), মৃত আব্দুল হকের ছেলে মো. হেলাল (৪৫), মৃত মুক্তার হোসেনের ছেলে মো. কাউছার (২৩)।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গাজীপুর পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো রফিকুল ইসলাম জানান, নিহত রাসেলের বাবা মো. জমির উদ্দিন বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় প্রথমে অপমৃত্যু মামলা করেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে পূর্বপরিকল্পিতভাবে গলায় ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে জানানো হয়। পরে শ্রীপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত হত্যা মামলা করেন রাসেলের বাবা জমির উদ্দিন।
রফিকুল ইসলাম আরও জানান, মামলার তদন্তভার নেওয়ার পর নানা দিক বিবেচনায় তদন্ত শুরু করে পিবিআই। তদন্তের একপর্যায়ে হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রানা, কাউছার ও হেলালকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, আসামি কাউছারের প্রবাসী মেজো ভাই মো. ফরিদের স্ত্রীর সঙ্গে রাসেলের পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। রাসেল এবং গ্রেফতার রানা একই সঙ্গে চলাফেরা করতেন। একপর্যায়ে রানার সঙ্গে রাসেলের পরকীয়া প্রেমিকার গোপন সম্পর্ক হয়। এ সম্পর্কের খবর রাসেল জানতে পারায় তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কে ফাটল ধরে।
ঘটনার দিন (২০২০ সালের ১০ জুলাই) দুপুরে রাসেলকে বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে শহুরে টেক নামে গজারি বনের ভেতর মোবাইল ফোনে ডেকে আনেন পরকীয়া প্রেমিকা। এ সময় রানা, কাউছার এবং হেলালের সহযোগিতায় রাসেলকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে গজারি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
এ বিষয়ে গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, ঘটনাটি প্রায় এক বছর দুই মাস আগের। গাজীপুর পিবিআই মামলাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করে তিন আসামিকে গত মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) গ্রেফতার করে।
তিনি আরও বলেন, ভিকটিম রাসেলের সঙ্গে পাবুরিয়াচালার ফরিদের স্ত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঘটনার সময় ফরিদ দেশের বাহিরে কর্মরত ছিল। পরবর্তীতে ভিকটিম রাসেলের ঘনিষ্ট বন্ধু রানার সঙ্গেও ফরিদের স্ত্রীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রানা এই সুযোগে ফরিদের ভাই কাওছারকে রাসেলের পরকীয়া প্রেমের কথা জানায়। কাওছার পরিবারের মান-সম্মানের কথা চিন্তা করে রানা ও হেলালকে সঙ্গে নিয়ে রাসেলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পরবর্তীতে রানা ফরিদের স্ত্রীকে ফোন দিয়ে রাসেলকে পাবুরিয়াচালার শহুরের টেক গজারি বনের ভেতরে যেতে বলে। রাসেল সেখানে গেলে রানা, হেলাল এবং কাওছারের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তারা রাসেলের গলায় রশি লাগিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য গলায় রশি পেঁচিয়ে গাছে ঝুলানোর চেষ্টা করে। না পেরে মাটিতে বসিয়ে রেখে চলে যায়।
গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, গ্রেফতাররা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। রানাকে বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) আদালতে হাজির করা হলে সে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর আসামিদের নাম উল্লেখ করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
শিহাব খান/আরএআর