ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে ভালো চাকরি পাননি, মাল্টা চাষে মুন্নার বাজিমাত
মা-বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়বে। সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন ছেলে। আজ ছেলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু মন মতো চাকরি পাননি। তাতে মন খারাপ হলেও অলস বসে থাকেননি। চিন্তা-ভাবনা করে নিজেদের জমিতে শুরু করেন মাল্টা চাষ। মাল্টা চাষে সফলতাও পেয়েছেন। বলছিলাম মাগুরা সদরের জগদল ইউনিয়নের রূপাটি গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা আশিকুর রহমান মুন্নার কথা।
সরেজমিনে মুন্নার বাগানে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি গাছেই ২০-২৫ করে মাল্টা ধরে আছে। বাজারে সাধারণত হলুদ রঙের মাল্টা দেখা যায়। কিন্তু মুন্নার বাগানের মাল্টা বারি-১ জাতের হওয়ায় তা দেখতে সবুজ রঙের। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এই জাতের মাল্টার পুষ্টিগুণ অনেক বেশি।
জানতে চাইলে আশিকুর রহমান মুন্না বলেন, ২০১৬ সালে যশোরের ঝুমঝুমপুর নার্সারি থেকে ৩৫০টি চারা গাছ সংগ্রহ করে নিজেদের ৭৫ শতক জমিতে প্রথম চাষ শুরু করি। আর প্রথম বছরেই সাফল্য পাই। তারপর ২০১৭ সালে ৯৫ শতকে শুরু করি আরেকটি মাল্টা বাগান। দুটি বাগানে মাল্টা চাষে আমার খরচ হয়েছে ২-৩ লাখ টাকা। মাল্টা বিক্রি করে আমার আয় হয় সাড়ে ৪ লাখ টাকা।
তিনি আরও বলেন, এ বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে যখন গাছে ফুল আসে তখন আবহাওয়া ভালো ছিল না। গাছের ফুল যখন ঝরে পড়ছিল, তখন গাছের পরিচর্চা বাড়িয়ে দেই। সার ও সেচ নিয়মিত দেওয়ার ফলে গাছ ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠে। এরপর গাছের গোড়া থেকে আগাছা পরিষ্কার করি। মে-জুন থেকে গাছে ফল আসতে শুরু করে। এ ফল পরিপূর্ণ হয় সেপ্টেম্বর মাসে। তবে এবার ফলন কম হওয়ায় বিক্রি কম হবে। দুই বাগানে এবার ৭০-৮০ মণ মাল্টা হবে। এসব মাল্টা ২-৩ লাখ টাকায় বিক্রি হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মাল্টার রঙ সবুজ হলেও ভেতরে সাদা, রসে পরিপূণ ও মিষ্টি। ঢাকার ব্যাপারিরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাগান থেকে মাল্টা নিয়ে যায়। তাছাড়া টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, কুষ্টিয়া ও রাজশাহীতে মাল্টা যাচ্ছে। আমাদের ফলের চাহিদা বেশি হওয়ায় স্থানীয় বাজারের অনেক ফল ব্যবসায়ী বাগানে এসে মাল্টা কিনে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, মাল্টা চাষের জন্য আমি নিয়মিত কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগোযোগ রক্ষা করে চলেছি। মাল্টা চাষের জন্য মাটি এবং আবহাওয়া ভালো হওয়া দরকার। নিয়মিত সঠিক পরিচর্চার মাধ্যমে গাছে ভালো ফল পাওয়া যায়। মার্চ মাসে যখন গাছে ফল আসে তখন পরিচর্চা বাড়াতে হয়। কাঠের গুঁড়া, গোবর সার, ইউরিয়া, টিএসপি সার নিয়মিত দিতে হয়।
মুন্না বলেন, আমি মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টারের সাবেক উদ্যান তত্ত্ববিদ মো. মনিরুজ্জামানের কাছ থেকে অনেক পরামর্শ পেয়েছি। তারা আমাকে নানাভাবে চাষের কলাকৌশল সর্ম্পকে সহযোগিতা করেছে। আমার বাগান দেখে এখন এলাকার অনেক যুবক মাল্টা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়েও ভালো চাকরি পায়নি বলে মনে কোনো দুঃখ নেই।
মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামানিক বলেন, জেলায় চলতি বছরে ১০ হেক্টর জমিতে বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ হয়েছে। এ মাল্টা একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল। এ ফলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’, যা শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন। মাল্টা চাষে জেলার তরুণদের বেশি বেশি এগিয়ে আসতে হবে। কৃষি বিভাগ থেকে মাল্টা চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাল্টা চাষ করলে নিজেদের সঙ্গে সঙ্গে দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে।
এসপি