বিশেষ মহলের নির্দেশে সাক্ষ্য দিচ্ছেন সাক্ষীরা : প্রদীপের আইনজীবী
কক্সবাজারের টেকনাফে আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার নির্ধারিত দ্বিতীয় ধাপের চার দিনের সাক্ষ্যগ্রহণের দ্বিতীয় দিন শেষ হয়েছে। এ দিন সাক্ষ্য দিয়েছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক কামাল হোসেন। তাকে জেরাও শেষ করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
সোমবার (০৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে শুরু হওয়া এ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয় সন্ধ্যায়। তারপর আদালত চত্বরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন আসামি ওসি প্রদীপের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত।
তিনি বলেন, বিশেষ মহলের নির্দেশে মামলাটি করা হয়েছে। একই সঙ্গে যারা সাক্ষ্য দিচ্ছেন তারাও সেই মহলের নির্দেশে সাক্ষ্য দিচ্ছেন।
রানা দাশ গুপ্ত বলেন, সাক্ষী কামাল হোসেন যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সঙ্গে পূর্বে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দির মিল নেই। শুধুমাত্র বিশেষ মহলের নির্দেশে তারা ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য উপস্থাপন করছেন। প্রত্যেক সাক্ষীরই একই অবস্থা।
মিডিয়া ট্রায়ালের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রসিকিউশনে যা লেখা হচ্ছে তা চলে আসছে গণমাধ্যমে। যার ফলে টেলিভিশন টকশোতে এসব নিয়ে মনগড়া তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে।
বিষয়টি আদালতের নজরে কারা এনেছে জানতে চাইলে রানা দাশ গুপ্ত বলেন, কেউ নজরে আনেনি। আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে গণমাধ্যমে কথা বলার ক্ষেত্রে সংযত হতে বলেছেন।
গেল দুইদিনে সাক্ষী মোহাম্মদ আলী ও কামাল হোসেনের জবানবন্দি গ্রহণ এবং জেরা শেষ হয়েছে। ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ধাপের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য আছে। যথা নিয়মে এ মামলার ১৫ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল।
এর আগে গত ২৩, ২৪ ও ২৫ আগস্ট তিন দিনে মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস ও দুই নম্বর সাক্ষী শাহেদুল ইসলাম সিফাতের জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত। পরে তাদের দীর্ঘ সময় জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে পুলিশ আটক করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করা হয়। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এই দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান।
সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।
আসামিদের মধ্যে পুলিশের ৯ জন সদস্য রয়েছেন। তারা হলেন, বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেব নাথ।
অপর আসামিরা হলেন- আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
গ্রেফতার হওয়া আসামিদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এর আগে আসামিদের তিন দফায় ১২ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।
মুহিববুল্লাহ মুহিব/আরএআর