বিএসএফের গুলিতে নিহতদের লাশ ফেরত চেয়ে বুড়িমারীতে বিক্ষোভ
লালমনিরহাটের বুড়িমারী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত দুই যুবকের লাশ ফেরতের দাবিতে বিজিবি চেকপোস্ট অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্বজনরা। এসময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) সকাল থেকে লামনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর চেকপোস্টে নিহতদের বাবা-মাসহ আত্মীয় স্বজনরা অবস্থান নেয়। এ সময় জিরো পয়েন্ট সড়কে ভারত-বাংলাদেশের প্রায় দুই শতাধিক পণ্যবাহী ও খালি ট্রাক আটকে যানজটের সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ২৯ আগস্ট ভোরে বুড়িমারী ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের বুলবুল হোসেনের ছেলে ইউনুছ আলী (২৭) ও নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ধনবর রায়ের ছেলে জগন্নাথ রায় সাগর (৩৮) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়। এর পর লাশ নিয়ে গেছে বিএসএফ।
দুই দিনও লাশ ফেরত না দেয়ায় নিহতদের নিকটাত্মীয়, স্ত্রী, বাবা-মাসহ স্থানীয়রা বুড়িমারী স্থলবন্দরে অবস্থান করছে। এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পে গেলে তারা সঠিক কোনো তথ্য জানাতেও পারছে না।
নিহত ইউনুস আলীর বাবা বুলবুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাতকে সঙ্গে নিয়ে বুড়িমারী বিজিবি কোম্পানি কমান্ডারের কাছে লাশ নেওয়ার জন্য আবেদন করি। কিন্তু বিজিবি সদস্যরা এ ব্যাপারে কিছুই বলছেন না। তাই চেকপোস্টে অবস্থান নিয়েছি।
নিহত জগন্নাথ রায় সাগরের স্ত্রী শামলী রানী বলেন, আমার স্বামীর লাশ ফেরত চাই। না হলে এখানে জীবন দিয়ে দেব। সরকার কি আমাদের দিকে দেখছে না?
জগন্নাথ রায়ের বাবা ধনবর রায় বলেন, ছেলের মুখ দেখার জন্য পড়ে আছি। কেউ আমাদের কথা শোনে না। দুই দিন গত হলো লাশ পাব কীনা জানি না।
বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বিজিবি ক্যাম্পে গিয়ে কথা বলেছি। বিজিবি বলে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনো আদেশ দেয়নি।
তিনি বলেন, শুনেছি বিএসএফ লাশ ময়না তদন্ত করেছে। তারা লাশ ফেরত দিতে চায়, কিন্তু আমাদের এদিক থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছে না। লাশ পাওয়া যাবে কীনা বলতে পারছি না।
পাটগ্রাম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজনরা বুড়িমারী স্থলবন্দর বিজিবি চেকপোস্ট অবরোধ করে অবস্থান নিয়েছিল। খবর পেয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর ফাঁড়ি পুলিশ গিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এতে কোনো ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেনি। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ৬১ (বিজিবি) বুড়িমারী কোম্পানি কমান্ডার বেলাল হোসেন বলেন, লাশ ফেরতের জন্য নিহত ব্যক্তিদের স্বজনরা বুড়িমারী স্থলবন্দর বিজিবি চেকপোস্টে কিছু সময় অবরোধ করেছিল। গুলিতে দুইজন বাংলাদেশি নিহতের ব্যাপারে বিএসএফ জানিয়েছে। পরিবার থেকে অভিযোগও পাওয়া গেছে। অভিযোগগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশনা আসলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ৬১ (বিজিবি) রংপুর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মীর হাসান শাহরিয়ার মাহমুদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
নিয়াজ আহমেদ সিপন/এমএএস