গুলিবর্ষণের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি আ.লীগের
ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে দলের নেতাকর্মীরা এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টায় বরিশাল নগরীর কালীবাড়ি রোডের সেরনিয়াবাত ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তারা।
এ সময় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু।
তিনি বলেন, বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আওয়ামী লীগের সব অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। আগস্ট মাসের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষায় বুধবার রাতে নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে টানানো ভুইফোঁড় নেতাদের ব্যানার অপসারণ করতে যান সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ইউএনও তার বাসভবন থেকে বের হয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের কাজে বাধা দেন। তিনি সিটি করপোরেশনের কর্মীদের বলেন, আমার কমপ্লেক্সের মধ্যে কোনো ‘মেয়রগিরি’ চলবে না। তোমরা বের হয়ে যাও। এই খবর সিটি মেয়রকে জানান দায়িত্বরত কর্মচারীরা। খবর পেয়ে মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহামুদ বাবু ও প্রচার সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়াকে ঘটনাস্থলে পাঠান।
তারা সেখানে গেলে তাদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন ইউএনও এবং তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের গুলি করার নির্দেশ দেন। আনসার সদস্যরা গুলি করতে নিবৃত্ত থাকলেও তাদের অস্ত্র ইউএনও নিজে নিয়ে গুলি করেন। তাতে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসসহ ছয়-সাতজন গুলিবিদ্ধ হন।
মেয়র এ ঘটনা জানার পর বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে মেয়রকে দেখে আবারও গুলি করেন ইউএনও। তখন মেয়র নিজে পরিচয় দেন। তারপরও ইউএনও সহনশীলতা প্রকাশ করেননি।
মেয়রকে গুলি করা হয়েছে, এমন খবর প্রচার হয়ে গেলে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন সিএন্ডবি রোডে। সেখানেও গুলি করা হয়। এতে প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকনসহ বেশ কয়েকজন নেতা আহত হন। তার শরীরে ৩৯টি স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়। এ ছাড়া আরও কয়েকজন নেতা চোখসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে বিএমপির দাঙ্গা পুলিশ সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালায়। এতে ৬০ জন গুলিবিদ্ধ এবং ৫০ জনের বেশি পুলিশের মারধরে আহত হয়েছেন। পরে বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) সকাল ১১টায় দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি সভা ছিল। কিন্তু তিন শতাধিক পুলিশ এই বাড়ির নিরাপত্তার নামে ঘিরে রাখে। এখনো নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। শোকাবহ আগস্টে প্রশাসনের এমন আচরণ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে বলে আমরা মনে করি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস। তিনি বলেন, ওখানে এমন কোনো পরিস্থিতি হয়নি যে গুলি ছোড়ার নির্দেশ দিতে হবে। এই শোকের মাসে গুলির ঘটনা একটি মানবতাবিরোধী কাজ বলে আমি মনে করি। বরিশালের শান্তির পরিবেশকে বিঘ্নিত করার জন্যই এমন আচরণ করছে প্রশাসন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, যেসব নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। যে দুটি মামলা করা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে। আহত কর্মীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এই নেতা বলেন, ইউএনওর বাসভবনে কোনো নেতাকর্মী প্রবেশ করেনি। ইউএনও যে দাবি করেছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
যদিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, অনেক নেতাকর্মী উপজেলা পরিষদে প্রবেশ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুখ হোসেন, বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের সময়ে বিসিসি মেয়র নিজ বাসভবনে থাকলেও তিনি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এনএ/জেএস