‘খ্যাতি’র বিড়ম্বনায় ভাইরাল শ্যামল
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউবসহ ইন্টারনেট দুনিয়ায় এই মুহূর্তে ভাইরাল যুবক শ্যামল চন্দ্র বর্মণ (৩০)। কথায় কথায় ইংরেজি বলা শ্যামলের দুটি বাক্য ‘সি ইউ নট ফর মাইন্ড’ ও ‘হ্যাভ আ রিল্যাক্স’ ব্যাপক আলোচিত হয়।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মনমথ গ্রামে বাড়ি শ্যামলের। পেশায় তিনি রেলওয়ের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। মেসার্স এমএম ট্রেডার্সের অধীনে বামনডাঙা রেলস্টেশনে ২০১৮ সাল থেকে তিন হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন। তার বাবা নেপাল চন্দ্র মাছ ব্যবসায়ী। মা সেফালী রানী গৃহিণী।
ছোটবেলা থেকেই শ্যামল সহজ-সরল ও সৎ। চলনবলন ও কথাবার্তায়ও রয়েছে তার সরলতার ছাপ। সম্প্রতি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পুটিমারী গ্রামে বিয়ে করেন শ্যামল। আলোচনায় আসার পর তার বিয়ের খবরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ হয়েছে।
সরেজমিনে সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনে দেখা হয় শ্যামল চন্দ্রের সঙ্গে। স্টেশন চত্বরে বসে ট্রেনের টিকিট বিক্রি করছেন তিনি। এ সময় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা তার ভক্তরা তার সঙ্গে সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। একটু পর মুক্তি মিললে কথা হয় শ্যামল চন্দ্রের সঙ্গে।
ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমি কীভাবে ভাইরাল হলাম, তা নিজেও জানি না। সব আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা। এত দূর আসা ও ভাইরাল হওয়ার পেছনে রাশেদুল ইসলাম রাশেদ নামের স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর অবদানের কথা বলেন।
বিয়ের প্রশ্ন তুলতেই শ্যামল বলেন, বিয়ে করে প্যারার মধ্যে আছি। চলতি মাসের ১২ তারিখে বিয়ে করেছি। এখন পর্যন্ত বউয়ের মুখ দেখতে পারিনি। বিয়ে উপলক্ষে আত্মীয়স্বজন বাড়িতে থাকায় সব কাজ তিন ভাই মিলে করতে হচ্ছে। যে কারণে ‘জাস্ট ইট ফর অনলি’ চেহারা একটু খারাপ হইছে।
ইংরেজি ছাড়া এবং ভুল বাক্যে কথা বলেন কেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি আসলে ‘ইন আ হাউস টাইম’ ইংলিশ বলি আরকি। বাংলাদেশ রেলওয়ের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। তা ছাড়া বিভিন্ন জায়গা থেকে টুরিস্টরা স্টেশনে আসে, তাদের সঙ্গে কথা বলতে ‘সামথিং টু সামথিং টকিং’ করি।
করোনাভাইরাস বিষয়েও সতর্কতার ক্যাম্পেইন করেন শ্যামল। তিনি বলেন, করোনায় এই সময়ে আমরা অনেক গুণী ব্যক্তিকে হারিয়েছি। সবাই মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি বাসায় যাওয়ার পর ভালোভাবে হাত-মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে বসার কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি যে ভাইরাল হয়েছি, এতে আমার কোনো অনুভূতি নাই। আগের যে শ্যামল দা আপনাদের মাঝে বেঁচে আছে, এখনো সেই শ্যামল দা আছে। যত দিন বাঁচব, শ্যামল হয়ে থাকব। আমার কোনো অহংকার বা ‘মুভমেন্ট’ বা কারও সাথে কোনো খারাপ সম্পর্ক নেই।
আমি ছোট-বড় ‘এভরিথিং’ যারা আছে, আমি সবাইকে সম্মান দিয়ে কথা বলি। আমি আগে থেকেই এমন। ভাইরাল হওয়ার সাথে সাথে না।
শ্যামল চন্দ্র বর্মণ ভাইরাল হওয়ার পেছনে অবদান রাখা রাশেদুল ইসলাম রাশেদ ও জয়ন্ত সাহা জতন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে ‘আড্ডা মিডিয়া ৭১’ নামে। শখের বশে শ্যামল দার সহজ-সরল বক্তব্য ইউটিউবে আপ করি। আপ করার আট মাস পর আমার এক সহকর্মী জয়ন্ত সাহা জতন এক চায়ের আড্ডায় ভিডিওটি দেখে ডাউনলোড করে ফেসবুকে পোস্ট করে। মুহূর্তেই শেয়ার ও লাইক বাড়তে বাড়তে একসময় ভাইরাল হয়ে যায়।
শ্যামল ভাইরাল হওয়ায় খুশি এলাকাবাসীও। শ্যামল যেহেতু রেলওয়ের বেসরকারি খাতে সামান্য একজন কর্মচারী, তার একটা নির্দিষ্ট চাকরির ব্যবস্থা করার দাবি জানান তারা। তার মেধার সঠিক ব্যবহারের কথাও বলেন তারা।
এনএ