অবরুদ্ধ চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করে পুলিশ, চেয়ারম্যান বললেন ‘না’
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় কাদরা ইউনিয়নে গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান পলাশকে অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীয়রা। তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর তাকে উদ্ধার করে সেনবাগ থানা পুলিশ।
বুধবার (৪ আগস্ট) বিকেলে উপজেলার কাদরা ইউনিয়নের চাঁদপুর পাটোয়ারী বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাটোয়ারী বাড়ির মৃত মো. হেলালের স্ত্রী হাফিজা বেগম বেবী তার পথের জায়গা সম্প্রসারণ করতে ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান পলাশের সহযোগিতা চায়। ৪ আগস্ট দুপুর আড়াইটায় চেয়ারম্যান ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ২৫ থেকে ৩০ জনের দলবল নিয়ে অতর্কিতভাবে একই বাড়ির মো. বেলাল হোসেনের (৬০) আম, জাম, কাঁঠাল, সুপারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৩০টি গাছ কেটে ফেলে।
এ ঘটনা দেখে স্থানীয়রা পাটোয়ারী বাড়িতে ডাকাত পড়েছে বলে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়। এ সময় এলাকার শত শত লোক ধাওয়া করলে দুর্বৃত্তরা দৌড়ে হাফিজা আক্তার বেবীর ঘরে ঢুকে যায়। এরপর স্থানীয় জনতা দলবদ্ধ হয়ে বাড়ির চারপাশে অবস্থান করে দুর্বৃত্তদেরসহ কাদরা ইউপির চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান পলাশকে একটি ঘরে প্রায় তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে।
এ বিষয়ে সেনবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম জানান, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আবদুল খালেক চেয়ারম্যান বাড়ির বেলাল হোসেন (৬০) ও একই বাড়ির হাফিজা বেগম বেবীর (৪৬) মধ্যে সম্পত্তি-সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। গত বুধবার পথের জায়গা নিয়ে উভয় পক্ষের মনোনীত ব্যক্তিদের সিদ্ধান্তে ৩ জন আমিন দিয়ে সীমানা নির্ধারণের কথা ছিল। যথারীতি আমিনরা কার্যক্রম শুরু করলে দুপক্ষের মধ্যে তর্কবিতর্ক শুরু হয়। এ নিয়ে দুপুর পর্যন্ত উত্তেজনা বিরাজ করছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
একই বাড়ির বাসিন্দা জুয়েল বলেন, ঈদের পরে সম্পত্তি পরিমাপ করার কথা ছিল। সে অনুযায়ী ৪ আগস্ট দুই পক্ষের দুইজন আর তৃতীয় পক্ষ একজনসহ তিনজন সার্ভেয়ার নিয়ে সকালে সম্পত্তি পরিমাপের কাজ শুরু হয়। একপর্যায়ে হাফিজা আক্তার বেবী সরকারি রাস্তাসহ ভূমি পরিমাপ করতে বললে এ নিয়ে তর্কবিতর্কের পর আর সম্পত্তি মাপা হয়নি। এরপর আমরা যে যার কাজে চলে যাই। দুপুরে তিনি তার ইচ্ছেমতো বহিরাগত লোক নিয়ে অন্যায়ভাবে প্রতিবেশী বেলায়েত মিয়ার গাছ কেটেছেন। এরপর এ বিতর্কিত ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে।
বেলায়েত হোসেনের ছেলে মিশু বলেন, চেয়ারম্যান পলাশের সঙ্গে হাফিজা আক্তার বেবীর সুসম্পর্ক রয়েছে। বেবী নিজেকে আওয়ামী লীগ নেত্রী পরিচয় দিয়ে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এবং চেয়ারম্যান পলাশের সহযোগিতায় বিভিন্ন সময় আমাদের ওপর জুলুম-নির্যাতন করেন। ঘটনার দিন ভূমি পরিমাপের কথা ছিল কিন্তু মাপ হয়নি। হাফিজা আক্তার বেবী পূর্বপরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী ভাড়া করে অন্যায়ভাবে আমাদের অনেকগুলো গাছ কেটে ফেলেছেন। গ্রামবাসী প্রতিবাদ করেছে। বর্তমানে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এ বিষয়ে হাফিজা আক্তার বেবী বলেন, আমি চট্টগ্রামে থাকি, মাঝেমধ্যে বাড়িতে এলে এই পথে চলাচল করি। এখন তারা পথের মধ্যে গাছ লাগিয়েছে। আমি মহিলা মানুষ। চলাচল করতে অসুবিধা হয়। এরপর বলেছি এই চলাচলের পথটা আমাকে দিলে আমি তাদের অন্য অংশে জায়গা বদল করে দেব অথবা তারা টাকা চাইলে টাকা দিয়ে দেব।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান পলাশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি পরিষদের চেয়ারম্যান, আর চেয়ারম্যান কেন অন্যের গাছ কাটতে যাবে? আমি ইউএনও অফিসে করোনা বিষয়ক মিটিংয়ে ছিলাম। যখন শুনি গন্ডগোল হচ্ছে, তখন আমি ঘটনাস্থলে যাই। কিন্তু উত্তেজিত জনতা না বুঝে মসজিদের মাইকে মাইকিং করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছে।
তিনি আরও বলেন, অবরুদ্ধের বিষয়টি সঠিক নয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম বিষয়টি মীমাংসা করতে তাকে সেখানে পাঠান। আমি এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছি। সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছি আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে।
সেনবাগ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল বাতেন মৃধা বলেন, কামরুজ্জামান পলাশকে পুলিশ উদ্ধার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাসিব আল আমিন/এনএ