বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিল ছেলেরা, দায়িত্ব নিলেন ইউএনও

৭৫ বছর বয়সী মা থাকতেন বড় ছেলের কাছে। ৯০ বছর বয়সী বাবা থাকতেন একমাস ছোট ছেলে, আরেক মাস মেজো ছেলে কিংবা সেজো ছেলের কাছে। এভাবেই কাটছিল বৃদ্ধ দম্পতির জীবন। কিন্তু সোমবার (০২ আগস্ট) রাতে বৃদ্ধ বাবা-মাকে ছেলেরা ভরণপোষণ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী ওই বৃদ্ধ দম্পতির ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। একইসঙ্গে তিন ছেলেকে আটক করেছে পুলিশ।
উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, পাইকগাছার গদাইপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের ৯০ বছর বয়সী মেছের আলী গাজী ও ৭৫ বছর বয়সী সোনাভান বিবি দম্পতির চার ছেলে। তারা সবাই স্বাবলম্বী। তাদের নামে সব সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন এই বৃদ্ধ দম্পতি। সোমবার (০২ আগস্ট) রাতে বাবা-মায়ের ভরণপোষণ দেওয়াকে কেন্দ্র করে ছেলেরা একে অপরকে দোষারোপ করেন। কেউ বাবা-মায়ের দায়িত্ব নিতে চান না। পরবর্তীতে বৃদ্ধ বাবা-মাকে গভীর রাতে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। প্রতিবেশীরা বিষয়টি ইউএনও এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকীকে জানান।
বিজ্ঞাপন

ঘটনার সত্যতা জানতে তিনি সকালে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষক মো. আলতাফ হোসেনকে দ্রুত ঘটনাস্থলে পাঠান। প্রশিক্ষক আলতাফ হোসেন ইউনিয়ন লিডার মো. ফয়সাল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। পরে ইউএনও তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। খুঁজে বের করেন চার ছেলেকে।
বিজ্ঞাপন
গদাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী জুনায়েদুর রহমান ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে চার ছেলেকে ডেকে ঘটনার বিবরণ শোনেন ইউএনও। পরে বৃদ্ধ বাবা-মাকে বড় ছেলে রওশন গাজীর জিম্মায় রেখে বাকি তিন ছেলে মতলেব গাজী, মশিয়ার গাজী ও মোশাররফ গাজীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পুলিশে সোপর্দ করেন। একই সঙ্গে ওই বৃদ্ধ দম্পতির জন্য বালতি, জগ, মগ, গামছাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং একমাসের খাবার দেন ইউএনও এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী। তাদের আমৃত্যু ভরণপোষণের দায়িত্বও নেন তিনি।
ইউএনও এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাবা-মা অতিকষ্টে সন্তানদের স্বাবলম্বী করে তোলেন। নিজের সহায়-সম্পত্তি সব কিছু সন্তানদের দিয়ে দেন। শেষ বয়সে তাদের কী এমন চাহিদা? শুধু সন্তানদের ভালোবাসা, দেখভাল আর একটু খাবার প্রয়োজন হয়। অথচ ভুক্তভোগী বৃদ্ধ দম্পতিকে ভরণপোষণ না দিয়ে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন সন্তানরা। এই দম্পতির চার সন্তানই স্বাবলম্বী। তাদের খামার, গোডাউন, দালান-কোঠা রয়েছে। কিন্তু বাবা-মাকে থাকতে দেওয়ার মতো জায়গা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, এই বৃদ্ধ দম্পতির খাদ্য, চিকিৎসা, পোশাকসহ যাবতীয় ব্যয়ভার প্রতিমাসে স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসন বহন করবে। আমি যেখানেই থাকি না কেন প্রয়োজনে তাদের সহায়তা করবো ইনশাল্লাহ।
পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এজাজ শফী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মঙ্গলবার (০৩ আগস্ট) বৃদ্ধ দম্পতির তিন ছেলেকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন উপজেলা ইউএনও। আমি তাদের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছি। একই সঙ্গে তাদের পুনর্বাসনের জন্য সমাজসেবা অধিদফতরকে অবহিত করেছি এবং চিঠি পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।
মোহাম্মদ মিলন/আরএআর