সেই পরিত্যক্ত ঘরেই মারা গেলেন জনপ্রিয় শিক্ষক
দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের বুড়িরবাঁধ এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিত্যক্ত ঘরে বাস করেছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার খড়িবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক জয়নুল আবেদিন। অবশেষে সেই ঘর থেকেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
সোমবার (০২ আগস্ট) ভোরে মারা যান এই মানুষ গড়ার কারিগর। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মণ।
গত ১২ ফেব্রয়ারি ‘১৫ বছর ধরে ভিক্ষা করছেন জনপ্রিয় শিক্ষক’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় অনলাইন নিউজপোর্টাল ঢাকা পোস্টে। এরপর সেই শিক্ষকের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন অনেকেই। থাকার জন্য ভালো একটি ঘরসহ তার চিকিৎসার জন্য অনেক চেষ্টা করা হলেও তিনি রাজি হননি।
মানুষ গড়ার কারিগর জয়নুল আবেদিন ১৯৭৫ সালে সদর উপজেলার খড়িবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সেই বিদ্যালয়ে ইংরেজি পড়াতেন তিনি। অল্প সময়ের মধ্যে ভালো শিক্ষক হিসেবে সবার প্রিয় হন তিনি।
জানা যায়, কিছু দিন ধরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন শিক্ষক জয়নুল আবেদিন। কারো সঙ্গে কথা বলতেন না তিনি। সোমবার সকালে স্থানীয় এক বাসিন্দা ওই শিক্ষকের ঘরের পাশে গিয়ে তাকে অনেকবার ডাকেন। কোনো সাড়া না পেয়ে ঘরের ভেতরে যান। দেখেন শিক্ষক জয়নুল মারা গেছেন। পরে তিনি স্থানীয়দের বিষয়টি জানান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও তার ছাত্র রঘুনাত, আনোয়ারসহ বেশ কয়েকজন বলেন, এই ঘরেই এক সময় স্যারের কাছে আমরা প্রাইভেট পড়তাম। আজ সেই ঘরেই স্যারের মরদেহ। স্যার অনেক দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। আমরা যে যখন সময় পেয়েছি, স্যারের কাছে এসেছি। স্যারের মৃত্যুতে আমরা অনকেটাই শোকাহত।
সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মণ জানান, দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন শিক্ষক জয়নুল আবেদিন। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি তাকে নিয়ে মানবিক সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে আমাদের সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন তাকে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন। সেইসঙ্গে একটি ঘর দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু শিক্ষক সেই ঘর নিতে আপত্তি জানান।
তিনি আরও বলেন, না খেয়ে থাকতে থাকতে তার হাত-পা শুকিয়ে গেছিল। ঠিকমতো হাঁটতে পারতেন না। কথা বলতে পারতেন না। আজ বিকেলে তার জানাজা শেষে বকেশের হাট কবরস্থানে দাফন করা হবে।
মানুষ গড়ার এই কারিগরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন।
নাহিদ রেজা/এসপি