তিন ঘণ্টা আগে এসেও যুক্তরাজ্যে যেতে পারেননি জামিলা
সিলেটের খাদিমনগর এলাকার প্রবাসী জামিলা চৌধুরী বিমানবন্দরে তিন ঘণ্টা আগে এসেও যুক্তরাজ্য যেতে পারেননি। অতিরিক্ত লাগেজের কারণ দেখিয়ে তাকে বোর্ডিং পাস দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ওই নারী। এমনকি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কোনো ধরণের সহায়তাও পাননি বলে অভিযোগ করেছেন জামিলা।
গত বুধবার (২৮ জুলাই) সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইটে দুপুর ২টা ৪০মিনিটে যুক্তরাজ্য যাওয়ার কথা ছিল তার।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী জামিলা চৌধুরী জানান, তার বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে জরুরিভিত্তিতে তিনি যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে আসেন। বুধবার তার যুক্তরাজ্য ফেরার কথা ছিল। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চেক ইনের সময় তার কাছে তিনটি লাগেজ ছিল। লাগেজগুলোর ওজন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ওজনের চেয়ে বেশি ছিল।
জামিলা চৌধুরী বলেন, আমার তিনটি লাগেজের ওজন বেশি ছিল। তবে আমি একটি লাগেজ নিতে চাইলে তারা আমাকে বলেন যে গেট ক্লোজ হয়ে গেছে। এর আগে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আমাকে বলেছে- আমি যাতে মোট ৫৩ কেজি ওজনের লাগেজ নেই। এর জন্য আমাকে ২৬ হাজার টাকা পরিশোধের কথা বলা হয়েছিল। তবে আমি তা দিতে অস্বীকার করি এবং একটি লাগেজ নেওয়ার কথা জানাই। সেই সময় কর্তৃপক্ষ আমাকে জানায় যে কাউন্টার ক্লোজ হয়ে গেছে। আমি আর যেতে পারব না।
জামিলা চৌধুরীর ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি বিমানবন্দরের অভিযোগ বক্সে অভিযোগ করতে যান। সেখানে এক কর্মকর্তার কাছে অভিযোগপত্র চাইলে সেই কর্মকর্তা তাকে স্টেশন ম্যানেজারের সঙ্গে আলাপ করার পরামর্শ দেন। সেই সময় তিনি স্টেশন ম্যানেজারের সঙ্গে আলাপ করতে গেলে তিনি তিনতলায় রয়েছেন বলে আরেক কর্মকর্তা জানান। এমনকি আরও বেশ কয়েকজনের সঙ্গে এই বিষয়ে সাহায্য চাইলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করার কথা জানানো হয়।
জামিলা চৌধুরী বলেন, আমি বিমানবন্দরে অনেকের কাছেই সাহায্য চেয়েছিলাম। কিন্তু কেউই আমাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেননি। আমি তিন ঘণ্টা আগেই বিমানবন্দরে প্রবেশ করি। তবুও আমি যুক্তরাজ্য ফেরত যেতে পারিনি। এমনকি ডেস্কে বসা একজন কর্মকর্তা আমার মুখের ওপর পাসপোর্ট ফেলে দিয়ে আমাকে পাগল বলেও মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, বিমানবন্দরের ভেতরে চারজন কর্মকর্তা ছিলেন। তাদের অনেক ডেকেও আমি কোনো সাহায্য পাইনি। তারা উল্টো বসেছিলেন কাউন্টারের ভেতরে। তখনও কাউন্টার বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশে এসে আমি যে খারাপ অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছি আর কোনো প্রবাসী যেন এর মধ্য দিয়ে না যান। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার সঙ্গে যা হয়েছে তার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে ফ্লাইট ছিল জামিলা চৌধুরীর। ওই ফ্লাইটে আরও ২১০ জন যাত্রী ছিল। ফ্লাইট ছাড়ার এক ঘণ্টা আগেই যাত্রীদের সুবিধার্থে ও নিরাপত্তার কারণে কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়। জামিলা চৌধুরীর চেক ইনের সময় তার সঙ্গে তিনটি লাগেজ ছিল। যার ওজন ছিল ৮৪ কেজি। আর একজন যাত্রী মাত্র ৪০ কেজি ওজন ফ্রিতে নিয়ে যেতে পারেন। এর বেশি হলে তাকে প্রতি কেজি ওজনের জন্য ২ হাজার ৬১১ টাকা করে পরিশোধ করতে হয়। তবে তিনি সেই টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন। এমনকি কাউন্টর বন্ধের আগে লাগেজের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেননি।
বিমান বাংলাদেশের স্টেশন ম্যানেজার চৌধুরী মো. ওমর হায়াত ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই নারীকে কাউন্টার বন্ধের আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। উনার কাছে যে লাগেজ ছিল সেগুলো নির্ধারিত ওজনের চেয়ে ৪৪ কেজি বেশি ছিল। সেই হিসেবে প্রায় লক্ষাধিক টাকা উনার পরিশোধ করার কথা। তবে তিনি সেটি পারেননি। পরবর্তীতে ১টা ৪০মিনিটে কাউন্টার বন্ধ হওয়ার পর তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে ১০ কেজি ওজনের জন্য ২৬ হাজার টাকা পরিশোধ করতে চান। তবে ওই সময়ে কিছু করার ছিল না। আমাদের কাউন্টার যথারীতি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই যাত্রীর কাছে অতিরিক্ত ওজনের লাগেজ ছিল। এ ব্যাপারে তাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। আমার ধারণা তিনি সঠিক সময়ে সেটি নিতে পারেননি। এই ফ্লাইটে আরও যাত্রী ছিলেন। তাদের যাত্রায় কোনো ধরণের সমস্যা হয়নি। ওই যাত্রীকেও যদি বিমান বাংলাদেশ নিতে পারত তাহলে তাদেরই লাভ হত।
তুহিন আহমদ/আরএআর