বিধিনিষেধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সদলবলে এমপি তুহিনের হাওর বিলাস
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশেই ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। বন্ধ রাখা হয়েছে প্রায় সবকিছুই। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে মানুষকে ঘরে রাখতে। তবে সব কিছুকেই যেন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন খোদ সংসদ সদস্য (এমপি)। বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে তিনি সদলবলে গিয়েছেন হাওর বিলাসে। শুধু তাই নয়, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন তিনি নিজেই।
তিনি হলেন ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনের এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন। শনিবার (২৪ জুলাই) ফেসবুকে ব্যক্তিগত আইডি থেকে মাইক্রোবাসে করে কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওর ভ্রমণের তিনটি ছবি পোস্ট করেন এমপি তুহিন। যেখানে এমপি ছাড়া আর কারো মুখেই নেই মাস্ক।
সেই পোস্টের ক্যাপশনে ওই সংসদ সদস্য লিখেছেন, ‘আমাদের জীবনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আনন্দ ভ্রমণ অনেক কষ্টসাধ্য ও সময় সাপেক্ষ, তাই বাড়ীর কাছে কিশোরগঞ্জের বিশাল জলরাশি উপভোগ করতে যাচ্ছি, সাথে আমার পরিবার, উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার পরিবার, যুবনেতা সোহেল, ছাত্রনেতা ফয়সাল, সালাম, রয়েল, রাজু, সাইমুন ও বিডিআর রুহুল।’
ওই পোস্টে রোববার (২৫ জুলাই) মধ্যরাত পর্যন্ত রিয়েক্ট পড়েছে দুই হাজারের বেশি। কমেন্ট করেছেন তিন শতাধিক ফেসবুক ব্যবহারকারী। যার বেশিরভাগ মন্তব্যই এসেছে সমালোচনা নির্ভর। মানুষ এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াই ব্যক্ত করেছেন।
মাহমুদুল হাসান মিশাদ নামে একজন লিখেছেন, ‘লকডাউন এবং সরকারের বিধিনিষেধ অমান্য করার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আপনি। আপনি জনপ্রতিনিধি হয়ে যদি এমন আইন ও নিয়ম ভাঙেন তাহলে আমরা যারা সাধারণ জনগণ তারা তো সরকারের এমন আইন ও নিয়ম কানুন না মানাটাই স্বাভাবিক।’
সজীব উর রহমান নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘সারা দেশে ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন দিয়েছে সরকার। এই সময় দেশের জনগণকে সচেতন করে ঘরে রাখা প্রত্যেকটা জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব। দায়িত্বশীল যায়গায় থেকে লকডাউন পালন না করে এভাবে দল বেধে ঘুরতে যাওয়াটা খুবই দৃষ্টিকটু দেখায়। আপনার সংসদীয় আসনের সর্বস্তরের জনগণ আপনাকে ফলো করে যদি রাস্তায় বের হয়ে আসে তাহলে তো লকডাউনের ১২টা বাজবে!’
ব্যঙ্গ করে ফারহানা নাসিম নামে আরেক ফেসবুক ব্যবহার করে লিখেছেন, ‘বাহ্! আপনি নিজেই লকডাউন ভাঙছেন? চমৎকার। দলে দেখি সরকার দলীয় নেতাও আছে। সবাইকে এই লকডাউন ভাঙা উৎসবে সামিল হতে দেখে খুবই আনন্দিত হলাম। বেশি করে কোভিড আক্রান্ত হন, পারিবারিক সম্পত্তির ওপর চাপ কমান।’
শাহাদাত শিকদার লাবু নামে আরেকজন উপহাস করে লিখেছেন, ‘এমপি সাহেব, লকডাউনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে পারার জন্য ধন্যবাদ। করোনার কারণে ভীতু ও ক্ষুধার্ত মানুষকে হতাশামুক্ত করার জন্য এমন বিনোদন খুবই প্রশংসনীয়। আপনার মত সাহসী ও জ্ঞানী এমপি/নেতা আছে বলে আওয়ামী লীগ টিকে আছে।’
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সাব্বির আহমেদ শরীফ লিখেছেন, ‘দায়িত্বশীল পদে থাকা অবস্থায় দায়িত্বহীন আচরণ মোটেও কাম্য নয়। মহামারি ঠেকাতে সরকার যেখানে কঠোর লকডাউন দিয়েছে সেখানে সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একজন এমপির ঘুরতে যাওয়া লকডাউনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।’
এ বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকের বাইরেও জেলাজুড়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। একজন নেতা ও জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে এমন কাজ মেনে নিতে পারছেন না কেউই।
ময়মনসিংহের নাগরিক প্ল্যাটফর্ম জনউদ্যোগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই সরকার লকডাউন দিয়েছে। এতে আমাদের কষ্ট হলেও দেশের স্বার্থেই ঘরে অবস্থান করতে হচ্ছে। কিন্তু এই অবস্থায় পরিবার এবং দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে একজন সংসদ সদস্যের হাওর ভ্রমণ খুবই দুঃখজনক বিষয়। আইন প্রণেতারা যদি আইন ভাঙেন তাহলে তাদের যারা অনুসরণ করেন তারা কী করবে। এটা সাধারণ মানুষ মোটেও ভালোভাবে গ্রহণ করবে না, এটাই স্বাভাবিক। সাধারণ মানুষকে আইন মানাতে জনপ্রতিনিধিদেরই বড় ভূমিকা থাকতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন বলেন, মন চেয়েছে তাই ঘুরতে গিয়েছি। সেখানে একজন অসুস্থ রোগীও দেখতে গিয়েছিলাম।
এ ব্যাপারে আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
উবায়দুল হক/ওএফ