যে কারণে সিরাজগঞ্জে নামানো হচ্ছে ভারত থেকে আসা ২০০ টন অক্সিজেন
দেশে প্রথমবারের মতো ভারত থেকে রেলপথে ২০০ টন তরল অক্সিজেন এসেছে। ১০টি কন্টেইনারে তরল অক্সিজেন নিয়ে ভারত থেকে ছেড়ে আসা ইন্দো-বাংলা ট্রেনটি বেলা পৌনে ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ করে। সেখান থেকেই তরল অক্সিজেন খালাস করা হচ্ছে। এরই মধ্যে তিনটি ট্যাংকলরি ৬০ টন তরল অক্সিজেন নিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। আরও সাতটি ট্যাংকলরি লোডের অপেক্ষায় রয়েছে।
নিরাপত্তা, পরিবহন ব্যবস্থা, লোড পয়েন্টসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে জরিপের মাধ্যমে অক্সিজেন খালাসের জন্য সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশনকে নির্ধারণ করা হয়েছে বলে লিন্দে বাংলাদেশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।
লিন্দে বাংলাদেশের গ্যাস শাখার সরবরাহ ব্যবস্থাপক মো. খাররুম বিন আব্দুল কায়ুম মন্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, অক্সিজেন দেশে আসাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। আমাদের লক্ষ্য হলো দেশের অক্সিজেনের মজুতকে সেই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যাতে পরবর্তী কোভিড-১৯ এর যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশে অক্সিজেনের সংকট না তৈরি হয়। এছাড়া দেশের মানুষের মাঝে অক্সিজেনের স্বল্পতা নিয়ে একটা ভয় ছিল, যা আজকের পর কেটে যাবে।
তিনি বলেন, লিন্দে বাংলাদেশ এক সময় বাংলাদেশ অক্সিজেন কোম্পানি লিমিটেড নামে ছিল। পরবর্তীতে এটা লিন্দে বাংলাদেশ হিসেবে নামকরণ করা হয়।
লিন্দে বাংলাদেশের গ্যাস বিভাগের বিক্রয় ও বিপণন শাখার মহাব্যবস্থাপক নুরুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, যেহেতু আমরা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে রেলপথে অক্সিজেন আনলাম তাই প্রাথমিকভাবে এই জায়গাটিকেই চূড়ান্ত করেছি। গত দেড় সপ্তাহ আগে আমাদের একটি দল জরিপ করে সব কিছু মিলিয়ে এই জায়গাটিকেই চূড়ান্ত করে।
তিনি বলেন, যেহেতু ট্যাংকলরিতে আনলোডসহ নিরাপত্তার একটা ব্যাপার থাকে, যা আমরা ঢাকার ব্যস্ততম কমলাপুর বা অন্য কোনো রেল স্টেশনে পেতাম না। প্রতিটি ট্যাংকলরিতে ২০ টন করে মোট ১০টি ২০০ টন তরল অক্সিজেন লোড হয়ে রূপগঞ্জে যাবে। অক্সিজেনবাহী প্রতিটি ট্যাংকলরি লোড হতে অন্তত দুই ঘণ্টা সময় লাগে। এখন আনলোড চাপ কম থাকায় প্রায় চার ঘণ্টার মতো করে সময় লাগছে। সেক্ষেত্রে আমরা এই জায়গাটিকেই সবচেয়ে ভালো ও নিরাপদ জায়গা মনে করছি।
লিন্দে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও প্রশাসন বিভাগের ব্যবস্থাপক সুফিয়া আক্তার ওহাব ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বর্তমান কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) পরিস্থিতিতে দেশে অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি করা। যেটা আজ শুরু হয়ে গেল।
তিনি বলেন, সার্বিক দিক বিবেচনা করেই ভারত থেকে আসা অক্সিজেন সিরাজগঞ্জে খালাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেহেতু ২০০ টন অক্সিজেনের বাইরেও ট্রেন ও কন্টেইনারের প্রচুর ওজন আছে তাই বঙ্গবন্ধু সেতুর বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে। এছাড়াও আগামীতে রেলপথে আসা আরও কয়েকটি অক্সিজেনের খালাস এখানেই করা হবে।
সুফিয়া আক্তার ওহাব বলেন, ভালোভাবে আমরা ২০০ টন অক্সিজেন নিয়ে দেশে আসতে পেরেছি। এতো অল্প সময়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনসহ সবার এতো আন্তরিক সহযোগিতা পাব সেটা ভাবিনি। করোনাকালে অক্সিজেনের যে চাহিদা বেড়েছে তা যতটুকু সম্ভব যোগান দিতে লিন্দে চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের বঙ্গবন্ধু সেতু কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, অক্সিজেনবাহী ট্রেনটি সেতু পার হবে- এমন কোনো কথা থাকলে আমাদের সঙ্গে অবশ্যই যোগাযোগ করা হতো।
সিরাজগঞ্জ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকালে লিন্দের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও প্রশাসন বিভাগের ব্যবস্থাপক সুফিয়া আক্তার ওহাব আমাকে ফোনে বিষয়টি জানান। সেখানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে কোনো অবনতি না ঘটে সেজন্য আমরা আগেই ১০ জন সদস্যসহ প্রস্তুত ছিলাম।
শুভ কুমার ঘোষ/আরএআর