দাঁড়ান, কোথায় যাচ্ছেন?
টানা আট দিন বিরতির পর সরকারের পূর্বঘোষিত ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। করোনার বিস্তার রোধে দেশের অন্যান্য জেলার মতো রংপুরেও বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে ব্যাপক তৎপর প্রশাসন। সকাল থেকেই মাঠে কাজ করছে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
শুক্রবার (২৩ জুলাই) ভোর ছয়টা শুরু হওয়া বিধিনিষেধে বেশির ভাগ সড়ক ফাঁকা থাকতে দেখা গেছে। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতসহ শপিংমল ও বিপণিবিতানগুলো।
জরুরি সেবার আওতাভুক্ত ওষুধ, হোটেল, রেস্তোরাঁ, খাদ্যসামগ্রীর দোকান খোলা রয়েছে। চলাচল করছে রিকশা, অটোরিকশা, প্রাইভেট কারসহ বিধিনিষেধের আওতামুক্ত যানবাহন। তবে অলিগলিতে, মোড়ে মোড়ে ও বাজারে মানুষের অহেতুক ঘোরাফেরা ও উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।
রংপুর মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ ২০টি পয়েন্ট ছাড়াও জেলা-উপজেলার প্রবেশপথে বসানো হয়েছে পুলিশি চেকপোস্ট। প্রয়োজনছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া মানুষের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। মাস্কছাড়া বের হওয়া মানুষের করা হচ্ছে জেরা।
চেকপোস্টগুলোতে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অহেতুক ঘোরাফেরা বন্ধে মানুষকে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে। ‘দাঁড়ান, কোথায় যাচ্ছেন? মুখে মাস্ক নেই কেন? কাগজপত্র দেখান? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছে ঘর থেকে হওয়া মানুষজনকে।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরের মডার্ন অর্জন মোড়, শাপলা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, ডিসির মোড়, বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার বাহিনী মাঠে কাজ করছে।
শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হওয়াতে হাট-বাজারে মানুষের উপস্থিতি লক্ষ করার মতো ছিল। তবে পরিবহন সেবা পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষজনকে। বাড়তি ভাড়ার আশায় গ্রামগঞ্জের রিকশা, অটোরিকশা এখন রংপুর নগরমুখী।
এতে পুরো নগরে রিকশার দৌরত্ম্য বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে তর্কাতর্কির ঘটনাও। ঢাকা থেকে আসা যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তির মুখে।
ঘর থেকে বের হওয়া মানুষজনকে বিভিন্ন সড়কে পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হয়েছে। পরিচয়পত্র যাচাই-বাছাই করে ছাড়ছে ট্রাফিক পুলিশ। সীমিত লকডাউনে মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার চলতে দেওয়া হলেও এখন তা চলতে দেওয়া হচ্ছে না।
রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অনেকটাই ফাঁকা রয়েছে। আঞ্চলিক সড়কগুলোতে নেই পরিবহনের চাপ। তবে পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যানসহ হালকা যানবাহন চলাচল করছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ অভিমুখে আসা যাত্রীবাহী পরিবহনগুলো রংপুরে ঢুকতে দেখা গেছে।
রংপুর জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে রংপুর নগরে ২ পাল্টুন বিজিবি ৪টি ভাগে বিভক্ত হয়ে টহল দিচ্ছে। রংপুরের ৮ উপজেলায় আটটি এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি টহল টিম কাজ করছে। এছাড়া জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে মাইকিংসহ টহল অব্যাহত রয়েছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মেনহাজুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া বিধিনিষেধ কার্যকর করতে মহাসড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে পুলিশ চেকপোস্ট বসানো রয়েছে। কোনো গণপরিবহন চলতে দেওয়া হচ্ছে না। জরুরি প্রয়োজনে কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে। অহেতুক ঘোরাঘুরি বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, আজ থেকে শুরু হওয়া কঠোর বিধিনিষেধ আগামী ৫ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে। এবারের বিধিনিষেধ গতবারের চেয়ে কঠোর হবে বলে আগেই জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসআর