বগুড়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক গ্রেফতার
বগুড়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মো. আকতারুজ্জামান সাগর (২৪) নামে এক সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছে সদর থানার পুলিশ। রোববার সকাল ৬টার দিকে সদর থানার পুলিশ সাগরকে গ্রেফতার করে।
এর আগে রোববার বিকেলে বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক শামিমা আকতার থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।
শনিবার (১৭ জুলাই) রাত সাড়ে ১২টায় ফেসবুকে পোস্ট দেখে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে রাতে থানায় অভিযোগ দিলে সদর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
আকতারুজ্জামান সাগর বগুড়া সদরের সাবগ্রাম এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে এবং তিনি বাণিজ্য প্রতিদিন নামে একটি পত্রিকার বগুড়া জেলা প্রতিনিধি। এর পাশাপাশি তিনি সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে সরকারি (এমএইচভি) প্রকল্পে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন।
সাগরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ফেসবুকে ভিন্ন নামে আইডি খুলে ‘বগুড়ায় স্বাস্থ্য স্বেচ্ছাসেবীদের সম্মানী প্রদানে হরিলুট। নেপথ্যে গরিবের ডাক্তার সামির হোসেন মিশু’ সঙ্গে আরও ৩ জনের নাম দিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করে পোস্ট করেছেন।
সদর থানার পুলিশ জানায়, আমরা লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারি এটি ফেসবুকে একটি ফেক আইডি থেকে পোস্ট করা হয়েছে। এরপর পোস্টদাতাকে ধরতে অভিযান চালানো হয়। রোববার সকাল ৬টার দিকে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সাগরকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার থেকে বগুড়া সদর উপজেলার ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য স্বেচ্ছাসেবীদের যথা সময়ে (সিবিএইচসি) সরকারি প্রকল্পে মাল্টিপারপাস হেল্থ ভলিন্টিয়ার (এমএইচভি) স্বেচ্ছাসেবীদের সম্মানী ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।
শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা প্রধান সহকারী কাম-হিসাব রক্ষক শামিমা আকতার দেখেন ফেসবুকে ‘বগুড়ায় স্বাস্থ্য স্বেচ্ছাসেবীদের সম্মানী প্রদানে হরিলুট। নেপথ্যে গরিবের ডাক্তার সামির হোসেন মিশু’ এমন একটি পোস্ট করা হয়েছে। ওই পোস্টে সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামির হোসেন মিশু, অফিসের প্রধান সহকারী কাম-হিসাব রক্ষক শামিমা আকতার, অফিসের কর্মচারী সোহেল রানা সিএইচসিপি, খাদেমুল ইসলাম সিএইচসিপি এবং সুরাইয়া আক্তার সিএইচসিপির নামে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য অপ-প্রচার করা হচ্ছে। যা জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ, উত্তেজনা ও অসন্তোষের সৃষ্টি করে।
প্রধান সহকারী কাম-হিসাব রক্ষক শামিমা আকতার জানান, আমি রাতে ফেসবুকে মানহানিকর মিথ্যা পোস্ট দেখে আমার ঊর্ধ্বতনদের বিষয়টি জানাই এবং নিজেই সদর থানায় অভিযোগ দেই। পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা স্বেচ্ছাসেবীদের টাকা ঠিকমতো দিচ্ছি না। সরকারি নিয়ম মেনে উৎসে কর কর্তন করে স্বেচ্ছাসেবীদের টাকা দেয়া হয়। কারণ কাজটি সরাসরি অনলাইনে সাবমিট হয়। অনলাইনে সাবমিট হলে একজন স্বেচ্ছাসেবী নিজেই জানেন তার কাজের ভাতা কত হয়েছে এবং তাকে সেই ভাতাই প্রদান করা হয়। অতএব লুকোচুরি করে বা হরিলুট করার কোনো সুযোগ এখানে নেই। যেহেতু অনলাইনে অ্যাপের মাধ্যমে কাজ হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সামির হোসেন মিশু বলেন, রাতে প্রধান সহকারী কাম-হিসাব রক্ষক শামিমা আকতার বিষয়টি অবগত করেন। এরপর আমরা আইনের পথে যাই। পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে একজনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারের পর জানা যায়, ফেক আইডি তৈরি করে যে মানহানিকর পোস্ট করেছে সে আমাদের সরকারি প্রকল্পের (এমএইচভি) একজন স্বেচ্ছাসেবী। তবে সে সাংবাদিক কিনা সেটা আমাদের জানা নেই।
বগুড়া সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান, আমরা অভিযোগ পাওয়ার পর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মো. আকতারুজ্জামান সাগরকে গ্রেফতার করেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে যে ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে ‘বগুড়ায় স্বাস্থ্য স্বেচ্ছাসেবীদের সম্মানী প্রদানে হরিলুট। নেপথ্যে গরিবের ডাক্তার সামির হোসেন মিশু’ শিরোনামে পোস্ট করেছে। এ ঘটনায় বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের প্রধান সহকারী কাম-হিসাব রক্ষক শামিমা আকতার বিকেলে বাদী হয়ে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দিয়েছেন। আমরা ওই মামলায় বিকেলে আকতারুজ্জামান সাগরকে গ্রেফতার আদালতে পাঠিয়েছি।
সাখাওয়াত হোসেন জনি/এমএএস