রংপুরে পশুর হাটে ভিড়, নেই স্বাস্থ্যবিধি
রংপুরে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার থেমে নেই। প্রতিদিন লম্বা হচ্ছে আক্রান্তের সঙ্গে মৃত্যুর সারি। এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রশাসন কঠোর হলেও বাড়ছে না সচেতনতা। বরং সরকারি বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় শহর-গ্রাম সবখানেই স্বাভাবিক চিত্র।
অবাধ চলাফেরার সঙ্গে গাদাগাদি করে বসছে পশুর হাট। আর এসব হাটে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি। নির্দেশনা অনুযায়ী হাটে-বাজারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কিন্তু রংপুরে পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
মাস্কছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছেন বহু মানুষ। অনেকই জানেন না সামাজিক দূরত্বের বিষয়টিও। পশুর হাটে হাজারো মানুষের ভিড়ে অসহায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযোগ রয়েছে অতিরিক্ত টোল আদায়েরও।
বুধবার (১৪ জুলাই) দুপুরে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালারহাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রচুর মানুষ। এটি এলাকার নিয়মিত গরুর হাট। সেখানে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে অবাধে চলছে কেনাবেচা। হাট ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ থেকে সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতা কারো মধ্যে নেই করোনাভীতি।
হাট ঘুরে চোখে পড়ল, বেশির ভাগ মানুষই মাস্কবিহীন। যারা মাস্ক ব্যবহার করছেন, তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরছেন না। ইজারাদারের পক্ষ থেকেও নেই কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা, প্রবেশপথে রাখা হয়নি হাত ধোয়ার জন্য পানি ও সাবান।
নেই শরীরের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্রও। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে দিনভর ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে তিলঠাঁই ছিল না। হাটজুড়ে শিশু থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সী মানুষের ছিল অবাধ সমাগম।
এদিকে, অভিযোগ উঠছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ভারতীয় গরু হাটে নিয়ে আসছে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। সরেজমিনেও দেখা মিলল দেশি গরুর পাশাপাশি ভারতীয় গরুতে ভরা হাটের মাঠ।
পুরো হাটে কেউবা দঁড়ি হাতে গরু নিয়ে, কেউবা আবার বাঁশের খুঁটিতে সারি সারি বেঁধে রেখেছে গরু। সবার চোখে ক্রেতার দিকে। হাটের একপ্রান্তে চলছে ছাগল-ভেড়ার বেচাকেনা। সেখানেও ক্রেতা-বিক্রেতার জটলা। আছে মৌসুমি ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও দালালের উপদ্রব।
হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলেও অতিরিক্ত টোল আদায়ে ইজারাদারের নির্দেশনা মানাচ্ছে একটি চক্র। টোল আদায়ের নামে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। বালারহাট ছাড়াও উপজেলার শঠিবাড়ী, শুকুরেরহাট, বৈরাতিহাট, জায়গীরহাট, বড়বালা, ছড়ানহাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
নিয়মানুযায়ী, গরু প্রতি পাঁচ শ ও ছাগলে দেড় শ টাকা টোল আদায় করতে নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু, ইজারাদার মনোনীত প্রতিনিধিরা জোর করে নিচ্ছেন অতিরিক্ত টোল। তবে এ অভিযোগ মানতে নারাজ হাট কর্তৃপক্ষ। হাটে প্রশাসনের লোকেরা থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না তারা।
হাটে গরু বিক্রি করতে আসা মশিয়ার রহমান বলেন, একেকটা গরুর জন্য ক্রেতার কাছে ৬০০ ও বিক্রেতার কাছে ৩০০ টোল নিচ্ছেন ইজারাদারের লোকজন। এই টাকা তারা জোরপূর্বক আদায় করছে। হাটে ছাগল ক্রয় করতে আসা মিঠু মিয়া ও আলী হোসেন জানান, তারা দুজনে দুটি ছাগল কিনেছেন। তাদের কাছ থেকে ৪০০ ও বিক্রেতার কাছে নিয়েছে ৩০০ টাকা নিয়েছে হাট কর্তৃপক্ষ।
সাহেদুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা জানান, ঈদে কোরবানির জন্য গরু কিনতে এসেছি। কিন্তু হাটে তো কোনো স্বাস্থ্যবিধি নেই। এত মানুষ দেখে ভয়ও লাগছে। পুরো হাটে মানুষে মানুষে একাকার। যেহেতু লকডাউন নেই, এ কারণে হাটে-বাজারে মানুষ বেড়েছে।
এদিকে হাটে ভারতীয় গরুর আমদানি প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রংপুরের পার্শ্ববর্তী জেলা কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে বালারহাটসহ জেলার প্রত্যেক হাটে ভারতীয় গরু আনা হয়। এর বেশির ভাগই আসে চোরাই পথে। ভারতীয় চোরাকারবারিও গরু নিয়ে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে হাটে ঢুকে পড়ে।
ইজারাদাররা এই অভিযোগ স্বীকার করেননি। তারা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং চোরাচালানের ব্যাপারে তারা যথেষ্ট সতর্ক। বালারহাটের ইজারাদার প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান খোকা বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। এখন মানুষ না মানলে করার কিছু নেই।
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন ভূঁইয়াকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। একই অবস্থা রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসানেরও। তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।
এদিকে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন বলছেন, সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি উপক্ষিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসআর