রোগী গুরুতর হলে উপায় একটাই
সোমবার সকাল সোয়া ১০টা। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নাজমা বেগমকে (৪০) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে নিয়ে যাচ্ছেন স্বামী ওমর ফারুক। প্রিয়তমা স্ত্রীর কষ্টের ছাপ ওমর ফারুকেরও চোখে-মুখে।
কিন্তু নাজমাকে হাসপাতাল থেকে কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে ওমর ফারুক বলেন, কয়েকদিন আগে নাজমা বেগম করোনায় আক্রান্ত হন। তাকে গতকাল একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত নাজমাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয়নি। এতে করে শ্বাসকষ্ট বেড়ে তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। ফলে বাধ্য হয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এ চিত্র কেবল নাজমা বেগমের একার নয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল করোনা ডেডিকেটেড হলেও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে সেখানে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন কাজ এখনও শেষ হয়নি। রোগীদের উচ্চমাত্রায় অক্সিজেন সরবরাহের জন্য হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাও নেই। এছাড়া আক্রান্ত রোগীর ফুসফুস কত শতাংশ পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছে, সেটি জানার জন্য সিটি স্ক্যান ও পোর্টেবল এক্স-রে সুবিধাও নেই। এর ফলে আক্রান্ত রোগীদের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তাদের ঢাকায় রেফার করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না কর্তৃপক্ষের।
ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৩৮০ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৬৬ জন। জুলাই মাসের শুরু থেকেই সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৩০ জনের বেশি নতুন রোগী সনাক্ত হচ্ছে। সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য জেলার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ২১৪টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ৫০টি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০টি শয্যা রয়েছে। আর বাকি শয্যাগুলো বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তবে এখন শুধুমাত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চলছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসোলেশন ওয়ার্ডের অর্ধেকেরও বেশি শয্যা খালি পড়ে আছে। গতকাল রোববার পর্যন্ত এ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ২১ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। সোমবার সকালে নাজমা বেগম ও নুরুল হক নামে দুই রোগীকে ঢাকায় রেফার করা হয়।
তবে কোনো কিছুরই সংকট নেই উল্লেখ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, এখন পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা আমাদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ চলতি মাসেই শেষ হবে। এরপর আমরা হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ব্যবহার করতে পারব। এখন আমরা ম্যানিফোল্ড পদ্ধতিতে অক্সিজেন সরবরাহ চালিয়ে যাচ্ছি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, রোগী যদি অনেক বেড়ে যায় তাহলে আমাদের শয্যা সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। এখন যেখানে যে পরিমাণ শয্যা আছে, সেখানে তার দ্বিগুণ করা হবে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অল্প কজনেরই আইসিইউয়ের প্রয়োজন হয়। আর কম সংখ্যক রোগীর হাই ফ্লো অক্সিজেন লাগে। জেলা হাসপাতাল ছাড়াও আমাদের প্রত্যেকটি উপজেলায় তিনটি করে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আছে।
আইসিইউয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আইসিইউয়ের বিষয়ে গত এক বছর ধরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি চালাচালি করছি। কিন্তু শুধু শয্যা বসালেই হয় না। আইসিউ ইউনিটের জন্য অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। আমরা প্রতি মুহূর্তে আমাদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।
আজিজুল সঞ্চয়/এনএফ