রংপুরে কঠোর লকডাউনেও বাজারে ভিড়, তৎপর প্রশাসন
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সাতদিনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। রংপুরে প্রথম দিন সড়ক ফাঁকা থাকলেও দ্বিতীয় দিনের চিত্র ভিন্ন। রিকশার পাশাপাশি মোটরসাইকেল, থ্রি-হুইলার সিএনজি-ইজিবাইক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার চলাচল করছে। নগরের বাইপাস সড়ক ও অলিগলিতে মানুষের ঘোরাঘুরিও বেড়েছে।
নগরের কাঁচাবাজার ও দোকানপাটে রয়েছে উপচে পড়া ভিড়। সেখানে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। করোনাভীতি ভুলে ঘেঁষাঘেঁষি করে, কোথাও আবার ঠাসাঠাসি অবস্থায় চলছে কেনাবেচা। অধিকাংশ মানুষের মুখে নেই মাস্ক। সাধারণত শুক্রবার অন্যদিনের চেয়ে সিটি বাজারসহ নগরের অন্যান্য বাজারগুলাতে একটু বেশি ভিড় হয়ে থাকে।
শুক্রবার (২ জুলাই) সকাল থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত রংপুর নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ছাড়াও সিটি বাজারে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিভিন্ন অযুহাতে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের মধ্যে ছিল উদাসীনতা। তবে লকডাউনে প্রথম দিনের মতো আজও মহাসড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো ফাঁকা রয়েছে।
দুপুরে রংপুর সিটি বাজারে সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরিধান নিশ্চিতকরণসহ স্বাস্থ্যবিধি মানাতে যৌথভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন। দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সহযোগিতা করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিটি বাজারের সামনের সড়কে অনেক মানুষের উপস্থিতি। বাজারের ভেতরেও ছিল ঠাসাঠাসি করে চলাফেরা। দোকানদার থেকে শুরু করে ক্রেতা, কারও মধ্যেই বিধিনিষেধ মেনে চলার প্রবণতা ছিল না। বাজারে প্রবেশের মূল ফটক ছাড়াও কয়েকটি ছোট রাস্তা দিয়ে লোকজন বাজারে যাওয়া আসা করেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতি টের পেয়ে অনেকে দ্রুত মুখে মাস্ক পরে নেন। কিন্তু সেখানে সামাজিক দূরত্ব কিংবা ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়নি। বরং পুরো বাজারে চলাচলের রাস্তা দখল করে দোকানদাররা তাদের মালামাল সাজিয়েছেন।
অভিযানে বেশ কয়েকজন দোকানদারকে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে দোকান খোলা রাখায় জরিমানা করা হয়। এছাড়া বেশিরভাগ দোকান ও ক্রেতা সাধারণকে সতর্ক করে দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। মাস্ক ছাড়া বাজারে আসা লোকজনকে মাস্ক পরিধানে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বিনামূল্যে তাদের মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হয়।
এদিকে সকাল থেকে কিছুটা বৈরী আবহাওয়া থাকলেও নগরের প্রবেশপথসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং পাড়া-মহল্লার মোড়ে মোড়ে পুলিশের তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে। তবে গতকালের চেয়ে সড়কে রিকশার দৌরাত্ম্য বেড়েছে। বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গাড়ি নিয়ে টহল দিচ্ছেন। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও বিধিনিষেধ মেনে শপিংমল, বিপণী বিতান, মার্কেট বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে পাড়া-মহল্লার ভেতরে ও অলিগলিতে থাকা দোকানপাট ও হোটেল রেস্তোরাঁ খোলা রয়েছে।
দুপুরে মেডিকেল মোড়, ডিসির মোড়, কাচারী বাজার, টাউন হল চত্বর, সিটি বাজার মোড়, সুপার মার্কেট মোড়, পায়রা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, প্রেসক্লাব মোড়, গ্র্যান্ড হোটেল মোড়, শাপলা চত্বর, লালবাগ, বিশ্ববিদ্যালয় মোড়, মডার্ন অর্জন মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের চেকপোস্ট দেখা গেছে। এসব স্থানে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা যানবাহন চলাচলে বাধা দিচ্ছেন। অহেতুক বের হওয়া বন্ধে অনেককেই জেরা করেছেন। মোটরসাইকেল ও গাড়ির কাগজপত্র ছাড়া বের হওয়া চালকদের জরিমানাও করেছেন।
অনেক সড়কে পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যানসহ হালকা যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন সড়কে হাঁড়িভাঙ্গা আম ফেরি করে বিক্রি করতে আসা আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষ্য করার মতো।
করোনার বিস্তার রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জরিমানার চেয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বারোপ করছেন। এ ব্যাপারে রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরুজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিটি বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। মানুষদের সচেতন করা হচ্ছে। অহেতুক ঘোরাঘুরি বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। আমরা মানুষকে ঘরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করছি। কিন্তু একেবারেই যারা বিনা প্রয়োজনে বের হচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে রংপুর জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রায়হানুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলা প্রশাসকের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। বিনা প্রয়োজনে কাউকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। লকডাউনের প্রথম দিনে রংপুর নগরে ৩৮টি মামলা করা হয়েছে। বিধিনিষেধ অমান্য করায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ২২ হাজার ৬৪৫ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি করোনার বিস্তার রোধে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে। কিন্তু মানুষ সচেতন না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
তিনি আরও জানান, লকডাউন বাস্তবায়নে রংপুর নগরে ২ প্লাটুন বিজিবি ৪টি ভাগে বিভক্ত হয়ে টহল দিচ্ছে। রংপুরের ৮ উপজেলায় আটটি এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি টহল টিম কাজ করছে। এছাড়া পুলিশ ও র্যাবের পক্ষ থেকে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে মাইকিংসহ টহল অব্যাহত রয়েছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মেনহাজুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রংপুর নগরের আওতায় থাকা মহাসড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে দায়িত্ব পালন করছি। কোনো গণপরিবহন চলতে দেওয়া হচ্ছে না। জরুরি প্রয়োজনে কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে। অহেতুক ঘোরাঘুরি বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই মামলা দেওয়া হচ্ছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর