ইউটিউব দেখে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করি
অনেক টাকা ধারদেনা করে বিদেশে গেলেও বেশির ভাগ সময় আর্থিক অনটনের মধ্যেই থাকতে হতো আব্দুল মাবুদের পরিবারকে। পরিবার-পরিজন ছেড়ে পরাধীন প্রবাসজীবনে নানা কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। বিদেশে বসে তখন স্বপ্ন দেখেন দেশে ফিরে কৃষিকাজে স্বাবলম্বী হবেন। ইউটিউবে দেখতে থাকেন কৃষি প্রকল্পের নানা অনুষ্ঠান। সিদ্ধান্ত নেন দেশে ফিরে ফলের চাষ করার। সেই স্বপ্ন নিয়েই একদিন দেশে ফিরে আসেন আব্দুল মাবুদ।
আব্দুল মাবুদ পাঁচ বছরের দুর্বিষহ প্রবাসজীবন ফেলে দেশে ফিরেই ড্রাগন ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হন। পরে কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী শুরু করেন ড্রাগন ফলের চারা সংগ্রহ। এ ফল চাষ করে তিনি দেখেছেন সফলতার মুখ। এলাকায় তরুণ সম্প্রদায়ের কাছে হয়ে উঠেছেন অনুকরণীয়।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মহিষা খোলা গ্রামের আকবর আলীর ছেলে আব্দুল মাবুদ। বাবার সংসারের হাল ধরতে পাঁচ বছর আগে মালয়েশিয়ায় যান তিনি। পরিবারে তারা তিন বোন ও এক ভাই।
জানা গেছে, শুরুতে এক বিঘা জমিতে ড্রাগন ফল এবং কয়েক বিঘা জমিতে মাল্টা-বাগান শুরু করেন আব্দুল মাবুদ। ড্রাগন ফল চাষ লাভজনক হওয়ায় পরে তিন বিঘা জমিতে শুরু করেন চাষ। তার সফলতা দেখে এলাকার অন্য যুবকরাও ড্রাগন ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
উদ্যোক্তা আব্দুল মাবুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি পাঁচ বছর মলয়েশিয়ায় ছিলাম। প্রবাসজীবন অনেক কষ্টের। সেখানে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়। বিদেশে আগের মতো আর আয়রোজগার নেই। সেখানে বসেই আমি স্বপ্ন দেখি, প্রবাসে যদি হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়, তাহলে দেশে ফিরে সেই পরিশ্রম করতে পারলে অনেক টাকা আয় করা সম্ভব। ইন্টারনেট ও ইউটিউব দেখে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করি।
তিনি বলেন, নাটোর জেলা থেকে ৬৫ টাকা করে প্রতি পিস ড্রাগন ফলের চারা কিনি। নিজের ৪০ শতাংশ জমিতে এবং তা নিয়ম অনুযায়ী রোপণ করি। এক বিঘা জমিতে সিমেন্ট আর রডের পিলার, চারা ও পরিচর্যা বাবদ খরচ হয়েছে তিন থেকে চার লাখ টাকা। তবে ড্রাগনগাছে ফল দেওয়া শুরু করলে তেমন আর খরচ নেই। একেকটি গাছ এক টানা ১০ থেকে ১৫ বছর ফল দেয় গাছ।
মাবুদ বলেন, এখন আমার তিন বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের আবাদ রয়েছে। আমি চারা তৈরি করেছি। অনেকেই ছাদবাগানের জন্য এবং আবাদি জমিতে রোপণের জন্য চারা কিনতে আসছেন। এলাকায় ড্রাগন চাষের পরিধি বৃদ্ধিতে খুব কম মূল্যে চারা বিক্রি করছি। আমি চাই আমার মতো অনেক যুবকই শিক্ষিত হয়ে বাড়িতে বসে না থেকে ড্রাগন ফলের চাষ করে লাভবান হোক।
লাভক্ষতির বিষয়ে উদ্যোক্তা মাবুদ জানান, প্রথম পর্যায়ে লাভের মুখ দেখে এখন তিন বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের আবাদ করেছেন। ড্রাগন ফল দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনী পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। দেশের বিভিন্ন জেলায়ও চাহিদা রয়েছে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়।
মেহেরপুরের কৃষক বানাত আলী বলেন, আমাদের প্রতিবেশী আব্দুল মাবুদ বিদেশ থেকে বাড়ি ফিরে ড্রাগন ফল চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তার কাছে পরামর্শ নিতে এসেছি কারণ আমিও ড্রাগন ফল চাষ করব।
মহিষাখোলা গ্রামের আব্দুল জাব্বার বলেন, আব্দুল মাবুদ ড্রাগন চাষে লাভবান হচ্ছেন, এমন খবর শুনে আমাদের ছেলেদের পরামর্শে বাগান দেখতে এসেছি। আব্দুল মাবুদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় তার কাছ থেকেই ড্রাগন ফলের চারা নিয়ে ড্রাগন চাষ শুরু করব।
বাগানে ড্রাগন ফল কিনতে আসা গাংনীর আমজাদ হোসনে বলেন, এই প্রথম ড্রাগন ফল খেলাম। খেতে সুস্বাদু ও দেখতে সুন্দর। পুষ্টিবিদরাও ড্রাগন ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এতে রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও অনেক বেশি। করোনাকালীন ড্রাগন ফল খাওয়া দরকার মনে করেই এখানে এসেছি ড্রাগন ফল কিনতে।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে এম সাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, ড্রাগন ফল বিদেশি জাতের। এ ফলে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। খেতেও অনেক মজা। বাজারে চাহিদা ও দাম দুটোই ভালো আছে এখন। প্রবাসফেরত যুবক আব্দুল মাবুদ হতাশ না হয়ে ড্রাগন চাষে লাভবান হচ্ছেন। এ জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে সর্বাত্মক পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অনেকেই এই ফল চাষ করার জন্য আমাদের কাছে আসছেন। আমরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছি।
এনএ