অর্থসহায়তা চেয়ে ফেসবুকে কলেজ শিক্ষকের আকুতি
যশোর উপশহর মহিলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক শরিফুল ইসলাম। অনার্স-মাস্টার্স কোর্সে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৫ সাল থেকে কলেজটিতে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি। এমপিওভুক্ত না হওয়ায় কলেজ থেকে যে সামান্য বেতন পেতেন করোনায় কলেজ বন্ধ থাকায় সেটিও পাচ্ছেন না পাঁচ মাস ধরে। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবারের চার সদস্য নিয়ে পড়েছেন চরম অর্থসংকটে।
সামাজিক মর্যাদার কারণে এতো দিন কারও কাছে সহায়তার জন্য হাত না পাতলেও এবার নিরুপায় হয়ে আর্থিক সহায়তা চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন শরিফুল ইসলাম।
নিজের ফেসবুক আইডিতে শরিফুল ইসলাম লিখেছেন, আমি শরিফুল ইসলাম। প্রভাষক উপশহর মহিলা কলেজ, যশোর। আমি একজন নন এমপিও অনার্স শিক্ষক। বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে কলেজ থেকে যে সামন্য বেতন পেতাম তা দীর্ঘদিন ধরে পাচ্ছি না। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাকে কিছু নগদ অর্থ বা খাদ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে উপকৃত হব। আমার বিকাশ নম্বর ০১৭২৪-৯০৬৮২০।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শরিফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাকালে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন আদায় বন্ধ রয়েছে। আয় না থাকায় কলেজের ননএমপিও বেসরকারি শিক্ষকদের বেতনভাতা সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও কলেজের ফান্ড শূন্য থাকায় আমাদের বেতন দিচ্ছে না। আমি শুধু একা নয়, আমার মতো ননএমপিও শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পরিবার নিয়ে দিন পার করাই এখন দায়। অনেকে ত্রাণ বা সরকারের আর্থিক সহায়তাও পাচ্ছেন না। বিশেষ করে সামাজিক মর্যাদার কারণে অনেকেই ত্রাণের জন্য বাইরে যোগাযোগ করছেন না। দীর্ঘদিন ধরে স্বজনদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে সংসার চালিয়ে আসছি।
তিনি আরও বলেন, করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন বন্ধ থাকায় এবং সরকার থেকে আর্থিক সাহায্য না পাওয়ায় যশোরের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নন এমপিও শিক্ষকরা বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসা ও দিনমজুরের কাজ করছেন। অনেকে টিউশনি করার চেষ্টা করছেন, কেউবা মাছ ধরে ব্যবসা করছেন।
এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফোরাম যশোর শাখার আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম বলেন, যশোরে মহামারি করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন যশোরের ২৫টি বেসরকারি কলেজের অনার্স কোর্সের ননএমপিও তিন শতাধিক শিক্ষক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতনও নেওয়া যাচ্ছ না।
আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘদিন ধরে বেতন বন্ধ। গত বছর সরকার ননএমপিও শিক্ষকদের পাঁচ হাজার করে টাকা দিয়েছিল। কিন্তু সেটি চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। করোনকালে সরকারিভাবে বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদার কারণে অনেকে ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়াতে পারছেন না। তাই অনেক শিক্ষক তাদের পেশা বদল করে কৃষি কাজে যোগ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন এমপিওভুক্ত না হওয়া ও প্রতিষ্ঠান থেকে শতভাগ বেতন পরিশোধ না করায় এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজসমূহের অনার্স-মাস্টার্স কোর্সে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদেরকে অবিলম্বে ‘জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮’ তে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান এই শিক্ষক নেতা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান বলেন, যশোর উপশহর মহিলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক শরিফুল ইসলামের বিষয়টি ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানতে পেরে তাকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওনার মতো যারা আরও কর্মহীন ও অসহায় রয়েছেন তাদেরও ত্রাণ কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে। এছাড়াও জেলায় চলমান কঠোর বিধিনিষেধে যারা কর্মহীন হয়েছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাদের ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।
জাহিদ হাসান/আরএআর