পদ্মা-মেঘনার ইলিশ চিনবেন যেভাবে
বাজারে গিয়ে অনেকেই পদ্মা নদীর ইলিশ খোঁজেন। কারণ পদ্মার ইলিশ স্বাদে অনন্য। আর তা হতে হবে চাঁদপুরের পদ্মা নদীর। তবে ইলিশ গবেষকরা বলছেন- পদ্মা ও মেঘনার ইলিশের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
ফলে সেরা ইলিশ কোনটি- এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে ইলিশ গবেষক, মৎস্য কর্মকর্তা, মৎস্য বণিক সমিতির নেতা ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানিয়েছেন কোথাকার ইলিশ সেরা।
জানা গেছে, ইলিশের মৌসুমে অনেকেই সর্ষে ইলিশের আয়োজন করেন, কারো ঘরে হয় ইলিশ পোলাও। ইলিশ ভাজা, ইলিশ পাতুরি, ইলিশ দোপেঁয়াজা, ভাপা ইলিশ, স্মোকড ইলিশ, ইলিশের মালাইকারি-এসবও পছন্দ করেন অনেকে। ইলিশকে ঘিরে এসব আয়োজন যেন বাংলার সংস্কৃতিতে মিশে আছে।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ বিষয়ক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইলিশ বিষয়ে যারা অভিজ্ঞ তারা দেখেই আসল ইলিশ চিনতে পারেন। সাগরের ইলিশ আর নদীর ইলিশ সহজেই আলাদা করতে পারেন। নদীর ইলিশে উজ্জ্বলতা বেশি থাকে এবং রূপালী হয়। পরিবেশের কারণে ইলিশের স্বাদে কিছুটা ভিন্নতা থাকে।
পদ্মা-মেঘনার ইলিশের কোনো পার্থক্য নেই। নদীর মিঠাপানি আর খাদ্যের কারণে স্বাদের পার্থক্যটা হয়। আসল স্বাদের পার্থক্যটি হয় পরিবেশ ও খাদ্যের কারণে। মিঠাপানি অর্থাৎ পদ্মা ও মেঘনার পরিবেশ এবং খাদ্যের মান ভালো থাকায় এখানকার ইলিশ স্বাদে ভিন্ন। মূলত পদ্মা ও মেঘনার ইলিশের মধ্যেই স্বাদ থাকে। শুধু যে পদ্মার ইলিশ সেরা সেটি নয়, মেঘনার ইলিশও সুস্বাদু। প্রচলিত কারণে সবাই পদ্মার ইলিশ বলে। পদ্মা-মেঘনা দুই নদীর ইলিশেই স্বাদ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সাগরের ইলিশের স্বাদ সম্পূর্ণ আলাদা। সেখানে পরিবেশ ও খাদ্যাভ্যাসগত পরিবর্তন থাকে। যার কারণে সেখানকার ইলিশে উজ্জ্বলতা কম থাকে ও শরীরে লালচে ভাব থাকে এবং ধূসর বর্ণের হয়। এই ইলিশের শরীরে যে মাংসপেশী তৈরি হয় সেখানে পদ্মা-মেঘনা নদীর ইলিশের সঙ্গে গঠনগত পার্থক্য থাকে। যার কারণেই সাগরের ইলিশ স্বাদ কম হয় এবং নদীর ইলিশ স্বাদ বেশি হয়।
ড. আনিসুর রহমান বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এখন ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইলিশের উৎপাদন ২০০২-২০০৩ সালে যেখানে দুই লাখ মেট্রিক টনেরও নিচে ছিল, এখন সেটি সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টনে চলে আসছে। আমরা আশা করতে পারি, মা ইলিশের ডিম ছাড়ার সুযোগ, অভয়াশ্রম বাস্তবায়ন, জাটকা সুরক্ষা এবং সাগরের যে ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা চলে সেটি মেনে চলা চললে ৫ লাখ থেকে ৬ লাখ মেট্রিক টন ইলিশের উৎপাদন হবে।
চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটের ব্যবসায়ী রুবেল গাজী ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাঁদপুরের পদ্মার ইলিশ চিনার উপায় হচ্ছে চোখ থাকবে কালো, মাছটি চওড়া, মাথা গোলগাল ও ছোট হবে। শরীর চকচক করবে। আর সাগরের ইলিশের শরীরে লালচে লালচে দাগ থাকে ও লম্বা হয়। লেজের আকৃতিও ভিন্ন। লেজের পাশে পিচ্ছিল থাকবে। অনেকেই এই বিষয়গুলো না জানার কারণে সাগরের ইলিশ কিনে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় ক্রেতারা এসব জানলে বাইরের ইলিশের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পান। অনেক ব্যবসায়ী বাইরের ইলিশ চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ইলিশ বলে বিক্রি করেন। আমাদের কাছে সবাই পদ্মার ইলিশ খোঁজে। মূলত পদ্মা-মেঘনার ইলিশের কোনো পার্থক্য নেই।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি শবে বরাত সরকার বলেন, চাঁদপুরের ইলিশ চেনার উপায় আছে। চাঁদপুরের ইলিশ দুটি কালারের হয়। ওপরের কালার হবে কালো আর নিচের অংশ সাদা। শরীরের আকৃতি একটু চ্যাপ্টা, মাথা ছোট, গাড় ও চওড়া হয়।
তিনি বলেন, গবেষকরা যাই বলুক, আসলে পদ্মার ইলিশই আমাদের কাছে সেরা। এখানে একটি বিষয় হলো ইলিশ পদ্মা-মেঘনা উভয় নদীতেই চলাচল করে। আর ঘাটে যা আসে আমরা পদ্মার ইলিশ বলে থাকি। আর সাগরের ইলিশ যেটা আমরা লামার ইলিশ বলে থাকি। এই ইলিশ দেখতে লালচে, টাটকা হয় না। শরীর ঘোলাটে থাকে।
এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের মধ্যে ইলিশের সবচেয় বড় ল্যান্ডিং সেন্টার চাঁদপুর। সারাদেশে এই জেলা ইলিশের শহর হিসেবেই পরিচিত। যার কারণে এখান থেকে আসল ও সুস্বাদু ইলিশ ক্রয় করে নিয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে মানুষের। এখানে যে শুধু চাঁদপুরের ইলিশ বিক্রি হয় তা কিন্তু নয়, এখানে বিভিন্ন জেলা থেকে জেলেরা মাছ ধরে নিয়ে আসে। মূলত পরিবেশ ও খাবার ভিন্ন হওয়ার কারণে একেক জেলার ইলিশ একেক রকম স্বাদ হয়। অনেক ক্রেতা আসল ইলিশ না চিনে অন্য ইলিশ কিনে হতাশ হচ্ছেন।
আরএআর