বয়লারের পানিতে দগ্ধ শ্রমিকের মৃত্যু
সাভারের আশুলিয়ায় একটি ডায়িং কারখানার বয়লারের পানিতে দগ্ধ হয়ে আহত পাঁচ শ্রমিকের একজন মারা গেছেন। বুধবার (০৯ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিহতের পরিবারের সঙ্গে বিষয়টি রফদফা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। নিহতের ভাই হাসমত এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দগ্ধ শ্রমিক হাসানের মৃত্যু হয়।
হাসান কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানার হযরত আলীর ছেলে। তিনি আশুলিয়ার কুটুরিয়া এলাকায় ভাড়া থেকে এসডিএস ইয়ার্ন ডায়িং কারখানায় কাজ করতেন।
নিহতের ভাই হাসমত ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃহস্পতিবার (০৩ জুন) আমার ভাইসহ বেশ কয়েকজন আশুলিয়ার কুটুরিয়া এলাকায় এসডিএস ইয়ার্ন ডায়িং কারখানায় কাজ করছিলেন। এ সময় দুর্ঘটনাবশত বয়লারের গরম পানিতে পাঁচজন দগ্ধ হয়। তাদের প্রথমে সাভারের এনাম মেডিকেলে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। এখানেই আমার ভাই মারা যায়।
রফাদফার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসমত বলেন, আমাদের সঙ্গে তারা বসেছিল। প্রথমে মরদেহ কৌশলে দিতেই চাইনি। কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের শান্ত্বনামূলক দেড় লাখ টাকা দিতে চেয়েছেন। আমার ভাইয়ের লাশ অক্ষত দিলেই আমাদের কোনো অভিযোগ নেই।
এ ব্যাপারে কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ শফিকুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসান মারা যাওয়ার বিষয়টি সঠিক। আমরা বিষয়টি সমাধান করেছি। তাদের কোনো অভিযোগ নেই। দুইজন শ্রমিক সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। একজন মারা গেল আর চিকিৎসাধীন আছেন একজন। সেও ২-১ দিনের মধ্যে বাড়ি যেতে পারবে। ক্ষতিপূরণের বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। বলেন, আপনি একদিন কারখানায় এসে দেখে যাবেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারখানার এক শ্রমিক বলেন, বয়লারের ত্রুটি দীর্ঘ দিন ধরে ছিল। এই বয়লারের পানি গায়ে পড়ে প্রায়ই শ্রমিকরা আহত হয়। কিন্তু কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয় না কারখানা কর্তৃপক্ষ। ঈদের আগে একজনের শরীরে গরম পানি পড়ে সে আহত হয়। এই বয়লার মেরামত কিংবা পরিবর্তন না করা পর্যন্ত এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার হোসেন বলেন, কারখানা মালিকের অবহেলার কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর দায় কোনোভাবেই কারখানা কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। চিকিৎসার সময়ও তারা যথেষ্ট অবহেলা করেছে।
তিনি আরও বলেন, হাসান মারা যাওয়ার পরও কারখানা কর্তৃপক্ষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে যথেষ্ট মানসিক চাপ দিয়েছে। দেড় লাখ টাকায় রফাদফা না করলে মরদেহ হস্তান্তর করবে না। এটা অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়। একটি জীবনের মূল্য কারখানা মালিকের কাছে দেড় লাখ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (৩ জুন) আশুলিয়ার কুটুরিয়া এলাকায় এসডিএস ইয়ার্ন ডায়িং কারখানায় কাজ করার সময় ত্রুটিজনিত কারণে বয়লারের গরম পানিতে দগ্ধ হন শ্রমিক হাসান (২৪), রাশেদুল (২২), আনোয়ার (২৪), ওয়াসিম (৩৫)। এদের মধ্যে হাসান মারা যায়। একজন এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন ও বাকি তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
মাহিদুল মাহিদ/এসপি