টিকটক নেটওয়ার্কে রাজশাহীর ৫০০ তরুণ-তরুণী, আটক ৯
ভিডিও শেয়ারিংয়ের চীনা অ্যাপ টিকটক নেটওয়ার্কে জড়িয়েছেন রাজশাহীর অন্তত ৫০০ তরুণ-তরুণী। সেলিব্রেটি হওয়ার নেশায় এই ফাঁদে আটকে গেছেন তরুণীরা। এদের অনেকেই জড়িয়েছেন নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে। কিশোর অপরাধ নির্মূলে ও যুব সমাজকে রক্ষায় সংঘবদ্ধ এই চক্র ভাঙতে মাঠে নেমেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি)। এরই মধ্যে ছয় তরুণ ও তিন কিশোরীকে আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
মঙ্গলবার (১ জুন) নগরীর বিভিন্ন বিনোদন স্পট থেকে আপত্তিকর টিকটক ভিডিও ধারণ করা অবস্থায় তাদের আটক করা হয়। বুধবার (২ জুন) দুপুর রাজশাহী মহানগর পুলিশ সদর দফতরে সাংবাদিকদের সামনে আটকদের হাজির করা হয়।
এ সময় আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক জানান, মেয়েদের বয়স ১৬ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। তারা নবম ও দশম শ্রেণিতে পড়ুায়। আর তরুণদের কয়েকজন প্রাপ্তবয়স্ক। কিশোরীদের ভিকটিম হিসেবে ধরে তরুণদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। এ সময় অপ্রাপ্ত বয়স্ক তরুণদের সংশোধনাগারে পাঠানোর কথাও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, পুলিশ হেফাজতে থাকা এক কিশোরীর সঙ্গে আমি কথা বলেছি। ওই কিশোরীর টিকটক ফলোয়ার ১৭ হাজারের মত। ওই কিশোরী জানিয়েছে, তাকে সেলিব্রেটি বানানোর প্রলোভন দেখানো হচ্ছিল। তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়ারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ওই কিশোরী ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছিল।
আরএমপি কমিশনার জানান, টিকটক ভিডিও করে রাজশাহীতে এমন তরুণ-তরুণী রয়েছে অন্তত ৫০০ জন। টিকটক ভিডিওতে অংশ নেওয়া মেয়েদের সবার বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। মূলত অসচ্ছল পরিবারের কিশোরী ও তরুণীদের টার্গেট করে টিকটক ভিডিও তৈরিকারীরা। পরে তাদের নিয়ে নগরীর বিভিন্ন স্পটগুলোতে বিভিন্ন আঙ্গিকে ভিডিও ও ছবি তোলে। এসব ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করে কিছু আয়ও করেন তারা। এর সামান্য একটি অংশ মেয়েদের দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, রাতারাতি জনপ্রিয়তা পাওয়ার আশায় অনেকেই এ ধরনের ভিডিও তৈরি করে নৈতিকভাবে ধ্বংসের পথে পা বাড়াচ্ছে। অশ্লীল ও আপত্তিকর টিকটক, লাইকি ও বিগো লাইভ ভিডিও সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ও যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
অপর দিকে দুষ্টচক্রের হাতে পড়ে অনেক নারী শ্লীলতাহানিসহ কোমলমতি শিশু-কিশোররা পাচার হচ্ছে। এমনকি অনেকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়াসহ মাদক সেবন এবং মাদক ব্যবসায় জড়িত হচ্ছে। টিকটক কিশোর অপরাধের মতো ঘটনা উস্কে দিচ্ছে।
এ সময় বিপথগামী সন্তানদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। অন্যথায় অপরাধ নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর