২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা প্রত্যাহার না হলে কর্মসূচির হুঁশিয়ারি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা কমিটির সদস্য তাওরাত ও তাহমিদ সরকার তুর্য নামের দুই শিক্ষার্থীসহ চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে চিকিৎসকের দায়ের করা মামলা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করা না হলে তরাগঞ্জে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ, হরতালসহ লাগাতার কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে চিকিৎসা প্রদানে অনীহা, সেবাপ্রার্থীদের হেনস্তা, বিলম্বে চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের কর্মবিরতি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধনে এ হুঁশিয়ারি দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে তারাগঞ্জের সর্বস্তরে মানুষের ব্যানারে বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চৌপথী বাসস্ট্যান্ডে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক শতাধিক মানুষ অংশ নেয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ, সদস্য সচিব ডা. আশফাক আহমেদ জামিল, মুখ্য সংগঠক রিফাত হাসান, সদস্য আল-আমিন আকাশ, তারাগঞ্জের ব্যবসায়ী একরামুল হক ও স্থানীয় বাসিন্দা রাতুল আহমেদ, আব্দুস সামাদসহ অন্যান্যরা।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ বলেন, চিকিৎসককে মারধরের যে অভিযোগ এনে তারাগঞ্জে দুই ছাত্র ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সেই মারধরের ভিডিও যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রকাশ করতে না পারে, তাহলে তাদের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে মার্চ ফর তারাগঞ্জ থানা গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হবে। সিভিল সার্জন মারধরের ঘটনা প্রমাণ করতে না পারলে তাকে রংপুর থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। প্রয়োজনে লাগাতার কর্মসূচি, অবরোধ, বিক্ষোভ এবং হরতালের মতো কর্মসূচি আমরা পালন করতে বাধ্য হব।
আরও পড়ুন
ইমরান আরও বলেন, দুইজন নিরাপরাধকে তারা সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন। যখন আপনার বাবাকে চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত করে বলবে —“তোর বাপ মারা গেলেও আমি চিকিৎসা দেব না”। তখন মানসিক অবস্থা কি হবে চিন্তা করেন। তখন সেই ছেলে বলেছে—“আপনাকে আমরা দেখে নেব”। এই কথাটা খুব একটা খারাপ বলেছে বলে আমি মনে করি না। এ নিয়ে আমরা কয়েক দফা তাদের সঙ্গে বসেছি। কিন্তু তারা মিথ্যা মামলা দিলো। তারা মারধরের ভিডিও দেখাতে পারেনি। এখন বলে ক্যামেরা নষ্ট।
মানববন্ধনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা কমিটির সদস্য সচিব ডা. আশফাক আহমেদ জামিল বলেন, স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। যেটা পাওয়ার অধিকার প্রত্যেক মানুষের আছে। আপনারা মামলা করেছেন, আইনকে আইনের মতো এগোতে দেন। কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেন।
মানববন্ধনে অন্যান্য বক্তারা হাসপাতালের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, দায়িত্ব অবহেলার কথা উল্লেখ্য করে ওই দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। এ সময় নানা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো চৌপথী এলাকা।
গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা রাধারানী মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আতাউর রহমান বুকে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক সাবরিনা মুসরাত জাহান মৌ (৩০) ওই রোগীকে হৃদরোগে আক্রান্ত হিসেবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। এরপর তিনি অন্য রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত হন। এ সময় সেখানে রোগী আতাউর রহমানের ছেলে তাহমিদ সরকার তুর্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর জেলা কমিটির সদস্য তাওরাতসহ আরও চার-পাঁচজন সেখানে যান।
চিকিৎসক সাবরিনা মুসরাত জাহান মৌয়ের অভিযোগ, তাহমিদ সরকার তুর্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর জেলা কমিটির সদস্য তাওরাতসহ আরো চার-পাঁচজন সেখানে সমন্বয়ক পরিচয়ে ওই চিকিৎসককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে তার শরীরে আঘাত করেন। এ ঘটনায় তুর্য ও তাওরাতসহ অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়। এর পরদিন গত শনিবার সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করে আসছেন ডাক্তাররা। এতে দুর্ভোগে পড়ে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের সেবাপ্রার্থীরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, টানা চার দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করছে তারাগঞ্জ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। সেবা না পেয়ে ভর্তি রোগীরা হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছেন।
এদিকে তারাগঞ্জের আন্দোলনরত চিকিৎসকের প্রতি সংহতি জানিয়ে কাউনিয়া, বদরগঞ্জ ও পীরগাছা হাসাপাতালেও কর্মবিরতি পালন হয়েছে আজ। চিকিৎসকদের দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর জেলা কমিটির সদস্য তাওরাত ও তারাগঞ্জের ছাত্র তূর্যকে গ্রেপ্তার করা না হলে তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবেন না।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএমকে