এসএসসিতে অনুপস্থিত ১৭ কিশোরী, বাল্যবিয়েতে ঝরে গেল ১৫ জনের স্বপ্ন

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রথম দিনে অনুপস্থিত ছিল ২০ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ১৭ জনই কিশোরী। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য অনুযায়ী, এসব অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৫ জন কিশোরীর বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তারা পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। তাদের মধ্যে ৮ জন এসএসসি ও ৭ জন দাখিল পরীক্ষার্থী।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ফুলগাজীর ৩৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১ হাজার ৮৫৯ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) উপজেলার চারটি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রথম দিনেই ১৩টি প্রতিষ্ঠানের ২০ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বয়স ছিল ১৮ বছরের নিচে।
সূত্র জানায়, গত বছর উপজেলায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ১১২ জন। সেই তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী কমেছে ২৫৩ জন
আরও পড়ুন
দাখিল পরীক্ষার ক্ষেত্রে মুন্সীরহাট ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসা কেন্দ্রে ১০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭ জন মেয়ে বিয়ের কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। এর মধ্যে তিনজন ছিল ওই মাদরাসারই ছাত্রী।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মো. ইসমাইল হোসেন জানান, শিক্ষার্থীদের বিয়ে হওয়ায় তারা পরীক্ষায় বসেনি। অভিভাবকদের সচেতন করতে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, তবে নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে বাল্যবিয়ে রোধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ফুলগাজী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মহি উদ্দিন বলেন, কারিগরি শাখার একজন ছাত্রী বিয়ের কারণে পরীক্ষা দিতে পারেনি।
তিনি জানান, বিদ্যালয় থেকে নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হলেও দারিদ্র্যের কারণে অনেক সময় এই বিষয়টি গোপনে ঘটে যায়। এছাড়া নিকাহ নিবন্ধন করা কাজিদের কঠোর নজরদারিতে রাখতে হবে। ভুয়া জন্মসনদ ঠেকাতে সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা রাখতে হবে।
নিলক্ষ্মী হাজী আমির হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনির হোসেন বলেন, তাদের বিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী বিয়ের কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।কোনো শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের খবর পেলে প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে বন্ধের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ঘটনা এত গোপনে ঘটে যে পরবর্তী তথ্য পেলেও কিছু করার থাকে না।
এছাড়া উপজেলার খাজুরিয়া মমতাজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, জিএমহাট উচ্চ বিদ্যালয়, পৈথারা উচ্চ বিদ্যালয়, করইয়া কালিকাপুর মাদরাসা, ফুলগাজী দারুল উলুম দাখিল মাদরাসা, বশিকপুর মাদরাসা ও শ্রীপুর ইস্কান্দারিয়া মাদরাসার একজন করে ছাত্রী বাল্যবিয়ের কারণে পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল। সব মিলিয়ে মোট ১৫ জন কিশোরী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।
জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক (অ. দা.) নাছরীন আক্তার বলেন, গতবছর ফেনীতে ভয়াবহ বন্যার কারণে মানুষের অর্থকষ্ট ও দারিদ্রতা বেড়েছে। এছাড়া মোবাইল আসক্তির কারণেও এভাবে মেয়েরা ঝরে পড়তে পারে। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সমাজে বাল্যবিয়ে বন্ধে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) নাছরীন আক্তার বলেন, গত বছর ভয়াবহ বন্যার কারণে ফেনীতে দারিদ্র্য বেড়েছে। মোবাইল আসক্তির কারণেও শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়তে পারে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, উপজেলায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে একটি কমিটি রয়েছে। তথ্য পেলে তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান চালিয়ে বিয়ে বন্ধ করা হয়। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো-এ ধরনের তথ্য খুব কম পাওয়া যায়।
গত দুই-তিন মাসে বাল্যবিয়ের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।
বাল্যবিয়ের কারণে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া প্রসঙ্গে ইউএনও বলেন, এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কোনোভাবেই এটি গ্রহণযোগ্য নয়। প্রশাসনিকভাবে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।
তারেক চৌধুরী/এমএসএ