ঠাকুরগাঁওয়ে ১৪৪ ধারা ভেঙে দফায় দফায় সংঘর্ষ, সতর্ক বিজিবি

১৪৪ ধারা ভেঙে আবারও ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার গেদুড়া ইউনিয়নের আটঘরিয়া গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপজেলার গেদুড়া ইউনিয়নের আটঘরিয়া বাজার ও আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হলেও শনিবার (১২ এপ্রিল) রাত ১০টার পর থেকে দফায় দফায় আবারও দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। প্রশাসন কেন তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সাধারণ মানুষ।
সংঘর্ষে গুরুতর আহতরা হলেন—নুর ইসলাম (৫০), মুজিবর এবং মোহাম্মাদ আলী। তাদের সবার বাড়ি আটঘড়িয়া গ্রামে এবং বর্তমানে তারা ঠাকুরগাঁও জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকিদের নাম পাওয়া যায়নি।
এদিকে, শনিবার বিকেলে হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামানকে বদলি করে দেওয়া হয়। এরপর রাতে স্থানীয় বাসিন্দারা ১৪৪ ধারা ভেঙে একটি মিছিল বের করেন। মিছিলে মালদইয়াদের নিয়ে অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে স্লোগান দেন তারা। এতেই অপরপক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে আবারও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
আরও পড়ুন
অপদিকে, হরিপুরের আটঘরিয়ার মারামারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের কাউন্সিল বাজার ও সীমান্তবর্তী চেকপোস্ট বাজারসহ আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। এতে ওই এলাকার দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে দুই উপজেলায় পরিস্থিতি থমথমে বিরাজ করছে।
রোববার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাণীশংকৈল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাফিউল মাজলুবিন রহমান। তিনি বলেন, বর্তমানে স্থানীয়দের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যানমালের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জানমাল ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
পুলিশ, ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে হরিপুর উপজেলার মরাধার গ্রামের ইয়াসিন আলীর সঙ্গে পাশের আটঘরিয়া গ্রামের মো. মাহাতাবের জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এর জেরে গত বছরের আগস্টে সরকার পতনের পর ইয়াসিন লোকবল নিয়ে ওই জমি দখলে নেন। গত শুক্রবার দুপুরে মাহতাব ও তার লোকজন সেই জমি উদ্ধারে সেখানে যান। এ সময় ইয়াসিনের লোকজনের সঙ্গে তারা সংঘর্ষে জড়ান। এ সংঘর্ষে এলাকার বাড়িতে বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ওই সময় প্রায় ২০টি বসতঘরে আগুন দেওয়া হয়। হামলায় উভয়পক্ষের প্রায় ৫০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতরা জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ভুক্তভোগী আজিমউদ্দিন বলেন, ইয়াসিনের নেতৃত্বে একদল লোক আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে দুটি গরু নিয়ে যান ও ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে সব পুড়িয়ে দেন।
আরেক বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুপক্ষের সংঘর্ষে নিরীহ সাধারণ লোকজনের বাড়িতে কেন হামলা করে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে লুটপাট করা হলো, এর সঠিক তদন্ত করে আইন অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং কাদের ইন্ধনে এই হামলা চালানো হলো তা উদঘাটন করতে হবে।
হরিপুরের আটঘরিয়ার ঘটনাটি কেন পুলিশ-প্রশাসন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না এ নিয়ে নেট দুনিয়ায় জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন নেটিজনেরা। তাদের দাবি প্রশাসনের ব্যর্থতার জন্যই হরিপুর আটঘরিয়ায় এখনো সংঘর্ষ চলছে। এ সময় নেটিজনরা ডিসি-এসপিকে ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে ঠাকুরগাঁও থেকে বিদায় নেয়ারও আহব্বান জানান।
হরিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকারিয়া মণ্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক আছে। প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। ঘটনার তদন্ত চলছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আটঘরিয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সীমান্তে নিরাপত্তার বিষয়ে ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল তানজীর আহম্মেদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারের পক্ষেই আমরা সবসময় কাজ করি। দুই জায়গায় ঝামেলা হয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি থমথমে। বিজিবি পুলিশের সঙ্গে কাজ করছে। তবে বিজিবি স্ট্রং আছে।
রেদওয়ান মিলন/এএমকে