পুরি-সিঙ্গারা বিক্রি করে সুলতানের মাসে আয় দেড় লাখ

ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে মাদারীপুরে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে বিভিন্ন মসজিদে ইমামতি করেছেন ক্বারী মুহাম্মদ সুলতান। বিয়ে করার পর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পরিবারের সদস্য সংখ্যা। সংসারে বাড়ে অভাব। পরে ইমামতি ছেড়ে জেলা শহরের কোটের মোড়ে ভ্রাম্যমাণ দোকানে পুরী, সিঙ্গারা, আলুর চপ, বেগুনি, পেঁয়াজু, ছোলা দিয়ে মুড়ি মাখানো বিক্রি শুরু করেন।
এখন এই ব্যবসার ওপরই চলছে তার ৬ সদস্যের সংসার। প্রথমে চাহিদা কম থাকলেও বর্তমানে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এসব খাবার বিক্রি করে প্রতি মাসে তিনি আয় করেন প্রায় দেড় লাখ টাকা।
জানা যায়, মাদারীপুর পৌর শহরের পুরাতন কোটের মোড়ে ভ্রাম্যমাণ দোকান করেন বরগুনা জেলার পাথরঘাটা এলাকায় হাফেজ ক্বারী মুহাম্মদ সুলতান। স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তার সংসার। লেখাপড়া শেষে ১৯৯০ সালে জীবনের তাগিদে চলে আসেন মাদারীপুরে। সন্তানেরা আস্তে আস্তে বড় হওয়ায় মসজিদ থেকে যতটুকু সম্মানী পেতেন তাতে সংসার চলা বড়ই দুষ্কর। পরে ২০১২ সালে গুরুজনদের মতামতে ৩ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ভ্রাম্যমাণ একটি মুড়ির দোকান দেন। পরে সেখানে ভালো বিক্রি হওয়ায় সিঙ্গারা, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি ও মুড়ি ভর্তা বিক্রি শুরু করেন। এরপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে যেখানে প্রত্যেকটা পণ্যের দাম বাড়লেও এখনো তিনি ৫ টাকা হারে বিক্রি করে যাচ্ছে এসব খাবার। এ সব খাবার বিক্রি করে যে টাকা লাভ হয় তা দিয়ে সংসার পরিচালনা করার পরও তা দিয়ে হজ করেছেন তিনি ও তার স্ত্রী।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দুপুর ৩টা থেকে শুরু করে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে তার দোকানে খাবার বিক্রি। প্রতিনিয়তই ভিড় করে এই খাবারের জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে আসে খাবার প্রেমিরা। কেউ রিকশায় বসে, কেউ পাশে দাঁড়িয়ে, কেউ আবার বাড়ির জন্য নিয়ে যাচ্ছে প্যাকেটে করে। এখানে তার সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হল পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, ছোলা দিয়ে মুড়ি ভর্তা। তার মুড়ি ভর্তা খাওয়ার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন আসেন কোর্টের মোড়ে ভ্রাম্যমাণ দোকানে।
স্থানীয় জানান, এখনকার যুগে ভেজাল খাদ্যের অভাব নেই। কিন্তু এই কোর্টের মোড়ে হুজুর যা বিক্রি করে এগুলো ভালো মানের খাবার। তার খাবারে কোনো ভেজাল নেই। প্রতিদিনের খাবার প্রতিনিয়তই শেষ হয়ে যায়। অনেক সুস্বাদু খাবার হয়। তাই আমরা এখানে খেতে প্রতিদিন আসি।
গোপালগঞ্জ জেলা ও রাজৈর উপজেলা থেকে মুড়ি খেতে এসেছেন আসাদ ও সাব্বির। তারা বলেন, এই হুজুর অনেক সুন্দর মুড়ি বানায় এবং তার পেঁয়াজু, আলুর চপ বেগুনি, পুরি অনেক ভালো। তার মতো আর কেউ এরকম পরিপাটি করে খাবার বিক্রি করে না।
শরীয়তপুর থেকে মুড়ি ভর্তা খেতে আসা রুবেল আহমেদ বলেন, আমি কাজ শেষে মাঝে মাঝেই এই হুজুরের দোকানে মুড়ি ভর্তা খেতে আসি। তার মুড়ি ভর্তা অনেক সুন্দর। এরকম সুন্দর করে কেউ আর বানাতে পারে না।
কোটের মোড়ে পুরি সিঙ্গারা বিক্রেতা ক্বারী মুহাম্মদ সুলতান বলেন, ইমামতি করে যা পেতাম এতে সংসার চলা বড় দুষ্কর হয়ে পড়েছিল। কোর্টের মোড়ে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে পুরি সিঙ্গারা বিক্রি করে ভালো টাকা লাভ হচ্ছে। এ টাকা দিয়ে মেয়েদেরকে হাফেজ এবং ক্বারী বানিয়েছি এবং ছেলেকে মুফতি মাওলানা বানাইতে পারছি। মহান আল্লাহতালার কাছে শুকরিয়া তার রহমতে এ ব্যবসায় সফলতা পেয়েছি। বর্তমানে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এসব খাবার বিক্রি করে প্রতি মাসে খরচ বাদে ৫০ হাজার টাকার মতো লাভ থাকে।
আকাশ আহম্মেদ/আরকে