বান্নীর মেলার অন্যতম আকর্ষণ ‘পীরে হাটের পুকুরের পানি’

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের পূর্ব প্রান্তে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী পীরে হাটের বান্নীর মেলা। শত বছরের পুরনো এই মেলা স্থানীয়দের কাছে শুধু একটি উৎসব নয়, এটি একটি পুণ্যভূমি, যেখানে মেলে বিশ্বাস, ভালোবাসা ও আনন্দ।
প্রতিবছর বৈশাখ শুরুর শেষ শনিবারে বসে এই মিলনমেলা। একদিনের মেলা হলেও এর আমেজ শুরু হয় আগের দিন বিকেল থেকেই। দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয়স্বজন আসেন, হয় সাক্ষাৎ, চলে গল্প-আড্ডা। স্থান সংকুলান না হওয়ায় মেলাটি এখন বিভিন্ন অংশে ভাগ করে আয়োজন করা হয়।
মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট-বড়, তরুণ-প্রবীণ সকল বয়সের মানুষের মিলনমেলা। হরেক রকম দোকানে ভরে উঠেছে মাঠ, যেখানে পাওয়া যায় মাটির ও প্লাস্টিকের খেলনা, গৃহস্থালির সামগ্রী, মেয়েদের প্রসাধনী, শিশুদের নাগরদোলা, নানা মুখরোচক খাবার—জিলাপি, বাতাসা, বুন্দা, বড় মাছ, এমনকি কাঁচা মসলাও।
মেলার অন্যতম আকর্ষণ ‘পীরে হাটের পুকুরের পানি’। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই পানি পান করলে মনস্কামনা পূরণ হয়। অনেকে বোতলে করে পানি নিয়ে যান পরিবারের সবার জন্য।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সোহরাব বলেন, এই মেলায় এসেছি একটি নিয়ত করে পানি খেতে। পানি খেয়ে মানত করেছি। যদি পূরণ হয়, মাজারে মুরগি দিয়ে খিচুরি করে দেব।
কথিত আছে, এই স্থানে এক সময় ৪১ জন পীর একত্রিত হয়ে মিলনমেলা করতেন। তাদের অনুসারীদের পদচারণায় মুখরিত হতো চারপাশ। সেই থেকেই শুরু এই মেলার ইতিহাস। আজও এখানে রয়েছে একাধিক পীরের মাজার, যেখানে মানুষের গভীর শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস বিদ্যমান।
মেলায় ঘুরতে আসা স্কুলছাত্র সুমন জানায়, আমরা প্রতি বছর এই মেলার জন্য অপেক্ষা করি। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরি, নাগরদোলায় চড়ি, নানা খেলনা কিনি। মেলায় এসে খুব ভালো লাগে।
সন্তানসহ মেলায় আসা গৃহবধূ আলেমা বেগম বলেন, ছেলেমেয়েরা মেলায় খুব আনন্দ পায়। আমি নিজেও দরকারি কিছু জিনিস কিনেছি—মাটির হাঁড়ি ও কাঁচা মসলা। এই মেলা শুধু কেনাকাটা না, এখানে এসে মনে শান্তি লাগে।
মেলার সুষ্ঠু আয়োজন নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পাশাপাশি মেলা ইজারাদার কর্তৃপক্ষও রেখেছে বাড়তি নজরদারি।
আয়োজক কমিটির সদস্য জালাল বলেন, এই মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। ঘরে ঘরে হয় নানা আয়োজন, জামাই-আত্মীয়দের দাওয়াত দিয়ে আতিথেয়তা জানানো হয়। মেলার দিন পুরো এলাকা এক ধরনের পারিবারিক মিলনমেলায় পরিণত হয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে, ধর্মীয় বিশ্বাস আর সংস্কৃতির সম্মিলনে পীরে হাটের বান্নীর মেলা হয়ে উঠেছে এক অনন্য ঐতিহ্য। এই মেলা শুধু বিনোদন নয়, এটি মানুষের হৃদয়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক আবেগ, বিশ্বাস ও সম্প্রীতির প্রতীক।
এমএএস