নদীভাঙন রোধে বরাদ্দ পাওয়ায় হাতিয়ায় আনন্দ মিছিল

নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন উপজেলা হাতিয়ায় নদীভাঙন রোধে বরাদ্দ পাওয়ায় আনন্দ মিছিল করেছে এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাতে উপজেলার সোনাদিয়া ইউনিয়নের চরচেঙা বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল করা হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষেরা অংশগ্রহণ করেন।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে হাতিয়ার সন্তান ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ ফেসবুকে লিখেন, ‘দীর্ঘ ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রচেষ্টার পর তীব্র নদী ভাঙনপ্রবণ আমার জন্মভূমি দ্বীপ হাতিয়ার যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত ও শোষিত জনগণের জন্য একটি সুখবর নিয়ে আসতে পেরেছি। এতে সাধারণ জনগণের ভূমি হারানোর দুঃখ-কষ্ট অনেকাংশেই লাঘব হবে, ইনশাআল্লাহ।
অতিদ্রুত বর্ষার পূর্বেই হাতিয়ার চারটি ইউনিয়নের মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় জিও ব্যাগ ও সিমেন্ট ব্যাগ ফেলে হাতিয়ার ভূমি রক্ষার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জরুরি ভিত্তিতে ৮ কোটি টাকার স্পেশাল বরাদ্দ আনতে সক্ষম হয়েছি। বর্ষার পূর্বেই কাজগুলো বাস্তবায়ন করা হবে, ইনশাআল্লাহ।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও লিখেন, হাতিয়ার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নদীভাঙনের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসে হাতিয়ার সাতটি জায়গায় গণশুনানির আয়োজন করে সরাসরি জনম দুঃখী জনগণের কথা শুনে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ম্যামকে অনুরোধ করেছিলাম। পরবর্তীতে আমার হাতিয়ার যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত জনগণের চাহিদা অনুযায়ী নোটশিট রেডি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের টপ টু বটম প্রতিটি অফিসে যোগাযোগ করে কাজটি বাস্তবায়ন করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে গিয়েছিলাম। আপাতত এই চারটি স্পট ছাড়াও আরও ১২টি স্পটে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে হাতিয়ার ভূমিগুলো রক্ষা করা হবে, ইনশাআল্লাহ। খুব দ্রুতই এই কাজগুলোও বাস্তবায়ন করা হবে।
হাতিয়ায় স্থায়ী ব্লক বাঁধ তৈরি করে নদীভাঙন রোধের জন্য ইতোমধ্যে DPP রেডি করা হয়েছে। অতি দ্রুতই যেন স্থায়ী ব্লক বাঁধ নির্মাণের প্রজেক্টটি চূড়ান্ত করা যায়, সে প্রচেষ্টা চলমান রেখেছি। এই প্রজেক্টটি বিগত পাঁচ বছর ধরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে।
বিজ্ঞাপন
উল্লেখ্য যে, বিগত ১০ বছরে কেবল নলচিরা ইউনিয়নের নলচিরা ঘাটে ২৫০ মিটার জিও ব্যাগ ও চরঈশ্বরের বাংলাবাজারে অল্পকিছু জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা ছাড়া হাতিয়ায় কোনো Protective work এর কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। আমার দ্বীপ হাতিয়াবাসী নদীভাঙন থেকে স্থায়ীভাবে যেন মুক্তি পায়, সেজন্য আমার প্রচেষ্টা ও লড়াই জারি থাকবে, ইনশাআল্লাহ। সকলের দোয়াপ্রার্থী। কথা দিয়েছিলাম সুখবর নিয়ে আসব। আনন্দ মিছিলের প্রস্তুতি নিন।’
এদিকে নিজেদের ভিটেমাটি রক্ষায় ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়ায় খুশি হাতিয়াবাসী। তারা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও আব্দুল হান্নান মাসউদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
মো. ইউসুফ রেজা নামের হাতিয়ার এক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিহিংসার জন্য অতীতে হাতিয়া উপজেলা উন্নয়নের ছোঁয়া দেখেনি। তাই যারাই ভালো কাজ করবে তিনি যে দলেরই হোক না কেন এগুলো না দেখে দলমত নির্বিশেষে সকলের উৎসাহিত করা উচিত। আবদুল হান্নান মাসউদ ভাইয়ের চিন্তা-চেতনা এবং হাতিয়া উপজেলার একদম তরুণ নেতা হিসেবে সব কিছুর জন্য আমার পক্ষ থেকে শুভকামনা এবং ফুলেল শুভেচ্ছা।
আনন্দ মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়া হান্নান মাসউদের বড় ভাই হাফেজ মোবারক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আল্লাহ আমার ভাইকে কবুল করেছেন তাই সে এই বরাদ্দ এনে দিতে পেরেছে। যদিও হাতিয়ার জন্য ৮ কোটি টাকা অনেক কম। কারণ পুরো হাতিয়া বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। তাই এই দ্বীপকে টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক বড় বরাদ্দ প্রয়োজন। তবে বর্তমানে এই বরাদ্দ আমাদের মন বড় করে দিয়েছে। আগামী দিনে আরও বরাদ্দ পাব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমার ভাইকে কবুল করুক।
এদিকে আনন্দ মিছিল হওয়ায় আব্দুল হান্নান মাসউদও খুশী। যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার জন্মভূমির মানুষ ভিটেমাটি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এই বরাদ্দ নদীভাঙন রোধে কাজে আসবে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আরও ১২টি স্থানে নদীভাঙন রোধে ইমার্জেন্সি বরাদ্দ পেতে যাচ্ছি। প্রজেক্ট রেডি হচ্ছে। আশাকরি হাতিয়াবাসী খুশী হবে। ইনশাআল্লাহ এই বছরে হাতিয়ার মানুষ সর্বোচ্চটা পাবে।
হাসিব আল আমিন/এমজেইউ