গাজায় সাংবাদিকসহ গণহত্যা বন্ধের দাবিতে রংপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ

পশ্চিমা বিশ্বের মদদে ফিলিস্তিনের গাজায় চালানো ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদ ও নির্বিচারে সাংবাদিকসহ গণহত্যা বন্ধের দাবিতে রংপুরে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
বুধবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে রংপুর প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব রংপুর, রংপুর সিটি প্রেসক্লাব, রংপুর রিপোর্টার্স ইউনিটি, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-টিসিএ রংপুর, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় কর্মরত গণমাধ্যকর্মীরা অংশ নেন।
রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের সদস্যসচিব লিয়াকত আলী বাদলের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজের সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক, রংপুর প্রেসক্লাবের সাবেক কোষাধ্যক্ষ সুশান্ত ভৌমিক, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর সিটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির মানিক, রিপোর্টার্স ক্লাব রংপুরের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রশিদ জীবন, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আফজাল, টিসিএ রংপুরের আহ্বায়ক আলী হায়দার রনি, মাহিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি বাবলু নাগ প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা গাজায় সাংবাদিক এবং গণহত্যা এখনই বন্ধের দাবি জানান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের মদদে ফিলিস্তিনে চলমান যুদ্ধ বন্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চিঠি দেওয়ার দাবি জানান। সাংবাদিক সমাজসহ সারাবিশ্বের গণমাধ্যমকর্মী এবং বিশ্ববাসীকে মানবতার পক্ষে থেকে গাজায় যুদ্ধ বন্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে বিকেলে রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ সমাবেশে করেছে সাধারণ জনগণ ও শিক্ষার্থীরা। এতে অংশ নেন স্থানীয় ওলামা-মাশায়েখ, ইসলামিক স্কলার অ্যাক্টিভিস্ট, শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর ন্যাক্কারজনক হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদ জানানো হয়। একইসঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের ভূরাজনীতির কৌশল এবং পাতানো ফাঁদ থেকে মুসলিম বিশ্বকে বেরিয়ে এসে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান সাধারণ জনতা ও শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে ইসলামিক স্কলার আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন রংপুর মহানগরের সেক্রেটারি মো. আমিরুজ্জামান পিয়াল, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সংগঠক হাফেজ মওলানা মোহাম্মদ আবু ঈসা, জুম্মাপাড়া করিমিয়া মাদরাসার শিক্ষক আরশাদ ইদ্রিস, আস সাহাবা ফাউন্ডেশনের সদস্য ইজতিহাদ মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক ইমতিয়াজ, শিক্ষার্থী আবু সালেহ মুহিত, শিহুরুল ইসলাম স্মরণ প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, ফিলিস্তিনের গাজায় একের পর এক নারকীয় হত্যাযঞ্জ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। তাদের অব্যাহত বর্বর আগ্রাসন ও হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। ইসরায়েলকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মিশিয়ে দিতে সকল অনৈক্য ও ভেদাভেদ ভুলে সবার আগে মুসলিম বিশ্বকে জাগতে হবে। মুসলমানদের বৃহৎ আন্তর্জাতিক সংস্থা ওআইসিকে ফিলিস্তিনের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। মার্কিন মদদপুষ্ট ইসরায়েলকে শুধু শায়েস্তা নয় ধ্বংস করার এখনই সময়। নয়তো বিশ্বমানবতা ও মুসলিম সম্প্রদায় একটা সময় কোণঠাসা হয়ে পড়বে।
সাধারণ ছাত্র-জনতা বলেন, ১৯৪৮ সালে বেলফোর ঘোষণার মধ্য দিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব ফিলিস্তিনে যে নিধনযজ্ঞ শুরু করেছিল, তার চূড়ান্ত পরিণতি আমরা ২০২৫ এসে দেখতে পাচ্ছি। ফিলিস্তিনের মানুষের বাস্তুভিটা ছাড়া করে মানবাধিকারের করব রচনা করা হয়েছে। ইসরায়েল কোনো রাষ্ট্র নয়, বরং এটা একটি জঙ্গি সংগঠন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতিয়ার। আজকে যেসব মুসলমান রাষ্ট্র নীরব রয়েছে, তাদের যদি ঘুম না ভাঙে তাহলে তাদেরকে একদিন এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।
সমাবেশ থেকে অবিলম্বে গাজায় বর্বরোচিত ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা আরও বলেন, ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে নেতানিয়াহুসহ তার বাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসংঘ এবং ওআইসি নেতৃবৃন্দকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা গাজায় গণহত্যা বন্ধে ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, জায়োনিজম নো মোর; জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস; ট্রাম্পের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে; নেতানিয়াহুর দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে; ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন, হামাসের যোদ্ধারা, লও লও লও সালাম; ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’সহ নানা স্লোগান দেন। তারা ফিলিস্তিনের পতাকাসহ ‘ফ্রি গাজা-ফ্রি প্যালেস্টাইন’ লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ