হাতিয়া থেকে ভাসানচর বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ভাসানচরকে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করেছে হাতিয়াবাসী। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওছখালী জিরো পয়েন্টে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
জানা যায়, হাতিয়া ভাসানচর রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে হাতিয়াবাসী ভাসানচর রক্ষায় প্রতিবাদ সভা ও অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করে। এ সময় হাতিয়া উপজেলা সদরের প্রধান সড়ক দীর্ঘ সময় বিক্ষোভে উত্তাল ছিল। বিক্ষুব্ধ জনতা ভাসানচরের ওপর অবৈধ হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নোয়াখালী থেকে সন্দ্বীপ আলাদা হয় ১৯৫৪ সালে। এরপর সাগরে জেগে উঠা নতুন এসব চর নোয়াখালী জেলার সাথে রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভাসানচরের দিয়ারা জরিপের মাধ্যমে ছয়টি মৌজায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেই ছয় মৌজার একটি ভাসানচর। পরে হাতিয়া উপজেলাধীন বনবিভাগ ২০০২-২০০৩ সালে বনায়ন সৃজন করে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প হিসেবে ভাসানচরকে হাতিয়া উপজেলার প্রশাসনিক এলাকার মধ্যে নিরাপত্তাসহ রাষ্ট্রীয় সকল ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের এই গেজেট উপেক্ষা করে ভাসানচরকে সন্দ্বীপের সাথে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে হাতিয়াসহ জেলা ও রাজধানীতে ভাসানচর রক্ষা আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।
বিক্ষোভ ও অবস্থান ধর্মঘটে সহকারী অধ্যাপক আনম শামীম খান, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, সাবেক রেড ক্রিসেন্ট কর্মকর্তা আজরুল সাফদার, যুবদল নেতা মো. ফাহিম উদ্দিন, ছাত্রদলের আহ্বায়ক আরেফিন আলীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।
অবস্থান ধর্মঘটে বক্তারা বলেন, ভাসানচর একটি মীমাংসিত বিষয়। এটিকে সন্দ্বীপের সাথে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করে আঞ্চলিক দাঙ্গা লাগানোর উসকানি দেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়ে নগ্ন হস্তক্ষেপ করছেন সন্দ্বীপের বাসিন্দা ও বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। যা কোনোভাবে মেনে নেওয়া হবে না।
হাতিয়া দ্বীপ সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. জাহেদুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাসানচরকে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করার অবৈধ হস্তক্ষেপ রোধে আমরা হাতিয়াবাসী ঐক্যবদ্ধ। এই অপচেষ্টার প্রতিবাদে আমাদের নানান কর্মসূচি রয়েছে। আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব। আমাদের ভূমি নিয়ে কোনো অপপ্রচার আমরা মানব না।
এদিকে ভাসানচর নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন হাতিয়ার সন্তান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাসানচর হাতিয়ার ছিল, হাতিয়ারই থাকবে। দরকার শুধু ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ। দলমত নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান আসেন হাতিয়ার স্বার্থে অন্তত নিজেদের ভূমি রক্ষার স্বার্থে এক হই, একসাথে কথা বলি। যে যে অফিসে নক করার দরকার একসাথে গিয়ে করি। এটা পারলে ভূমি আমাদেরই থাকবে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী শামীম ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাতিয়ার মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করেছে। আসলে ভাসানচর সকল কাগজপত্রে হাতিয়ার অন্তর্ভুক্ত। সেখানে থানা, বনবিভাগের জমি সব হাতিয়ার সাথে সম্পৃক্ত। সন্দ্বীপের দাবি এটি তাদের ডুবে যাওয়া চর। সেটি টেকনিক্যাল বিষয়। তবে এই চরটি নতুন করে জেগেছে যার সকল নিয়ন্ত্রণ হাতিয়া থেকে পরিচালিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাসানচর নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। বিজ্ঞ আদালতের রায়ে আগামী ১০ এপ্রিল একটি কমিটির মিটিং রয়েছে। সেদিন তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আশা করি বিষয়টি নিয়ে বিরোধ তৈরি না হয়ে দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। বিতর্ক না করে বিষয়টি নিয়ে সবার অপেক্ষা করার প্রয়োজন।
হাসিব আল আমিন/আরএআর