সবার ভালোবাসায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরুক ওমর, প্রয়োজন ৫ লাখ টাকা

জন্ম থেকেই জীবনের সঙ্গে লড়াই করছে সাড়ে চার বছর বয়সী ওমর সামী। যে বয়সে বাড়ির উঠানে অন্য শিশুদের মতো দুরন্তপনা করার কথা সেই বয়সে ১৫ সেন্টিমিটার ছোট ডান পা নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছে এই শিশু। মাঝেমধ্যে ঘরের সামনে খুব কষ্ট করে হাঁটে, তা না হলে মায়ের কাছেই বসে থাকা। কখনো নিজের মনে খেলাধুলা করা। তবে দিন যত যাচ্ছে ওমরের পায়ের যন্ত্রণা তত বাড়ছে, রাত হলেই পায়ের যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে ওমর।
এভাবেই বড় হচ্ছে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামের মো. মুরাদ ও সাগরিকা দম্পতির একমাত্র ছেলে। ওমরের বাবা-মায়ের নিজেদের কোনো জমি নেই, সাগরিকার বাবার জমিতে টিনশেড ঘর করে কোনোমতে বসবাস করেন। ওমরের বাবা স্থানীয় বাজারে খুচরা মাছ বিক্রি করে দিনে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করেন। আর মা বাড়ির কাজের পাশাপাশি সেলাই মেশিন চালিয়ে কিছু টাকা আয় করেন। দুইজনের আয়ে ভালোভাবে সংসার চালানোই কঠিন হলেও গেল দুই বছরের বেশি সময় ধরে ছেলের ১৫ সেন্টিমিটার ছোট পা স্বাভাবিক করতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা করিয়েছেন। নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছেন ছেলেকে সুস্থ করার। লক্ষাধিক টাকা ঋণও করেছেন ছেলেকে সুস্থ করার জন্য। বর্তমানে টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ থাকায় পায়ের হাড়টি ভেতরে বাঁকা হয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে দিন যত যাচ্ছে সমস্যা তত জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, ওমরের পা স্বাভাবিক করতে দুইটি অপারেশন লাগবে, যাতে ব্যয় হবে ৫ লক্ষাধিক টাকা। তবে এই টাকা ব্যবস্থা করা অসম্ভব মাছ বিক্রেতা বাবা ও বাড়িতে সেলাই মেশিন চালানো মায়ের জন্য। ওমরের চিকিৎসা করাতে স্থানীয় বাসিন্দারাও বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করেছেন। তবে একসঙ্গে এত টাকার প্রয়োজন হওয়ায় বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা মনিরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওমরকে সুস্থ করতে তার পরিবার সব চেষ্টাই করেছে, কিন্তু অর্থের অভাবে তারা হেরে গেছেন। যদি আমরা সবাই মিলে একটু সহযোগিতা করি তাহলে ওমরের ভবিষ্যৎ বদলে যেতে পারে।
শামীম হাসান রাবু নামের আরেক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, পাঁচ লাখ টাকা অনেকের কাছেই তেমন কিছু নয়, কিন্তু এই টাকায় স্বাভাবিক জীবন পেতে পারে সামী। সমাজের সামর্থ্যবানরা যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে সে হাঁটতে পারবে, স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে।
তবে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সামীকে লেখাপড়া শেখানোর চেষ্টা করছেন মা সাগরিকা। এতে সামীরকে সহযোগিতা করছেন কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার। তিনি বিনামূল্যে সামীকে পড়াশুনা করান।
ঢাকা পোস্টকে তামান্না বলেন, ওমরের মেধা অসাধারণ। যদি সে সুস্থ হয়, একদিন দেশ ও সমাজের জন্য কিছু করতে পারবে। আমরা যদি একটু সাহায্য করি, সে তার স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে পারবে।
সামীর মা সাগরিকা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছেলেটির ডান পা জন্মগতভাবেই ১৫ সেন্টিমিটার ছোট। হাঁটতে গেলে কষ্ট হয়, মাঝেমধ্যে এতটাই ব্যথা হয় যে রাতেও ঘুমাতে পারে না। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরছি, কিন্তু আমার ছেলেটাকে সুস্থ করতে পারিনি। ডাক্তাররা শেষ ভরসা দিয়েছেন অপারেশন, তাও একটি নয় দুইটি অপারেশন করতে হবে। এতে প্রয়োজন পাঁচ লাখ টাকা, কিন্তু এত টাকা আমি কোথায় পাব?
সাগরিকা বেগম আরও বলেন, আমি চাই না কেউ আমার ছেলেকে ‘প্রতিবন্ধী’ বলুক। আল্লাহ ওকে সুস্থ রেখেছেন, শুধু পাটা বাদে। যদি একটু সাহায্য পাই, আমার ছেলেটাও স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারবে।
ছেলের চিকিৎসার জন্য সরকার ও বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন অসহায় এই মা।
কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মনি শঙ্কর পাইক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওমর সামীর একটি পা ছোট, এটা জন্মগত হাড়ের রোগ। এতে হাড়টি বাঁকাভাবে বৃদ্ধি পায়, খুব অল্প বয়সে এটা ধরা পড়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে আমরা ঢাকায় রেফার্ড করেছিলাম। আসলে কয়েকটি ধাপে বাচ্চাটির চিকিৎসা প্রয়োজন। যেহেতু কয়েকটি ধাপে চিকিৎসা প্রয়োজন তাই অনেক ব্যয়বহুল চিকিৎসা। পাঁচ লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন হবে। শিশুটির পরিবার খুবই গরিব। যদি সরকার বা কোনো বিত্তবান মানুষ শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন তাহলে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে।
শেখ আবু তালেব/এমজেইউ