রক্ত দিয়ে প্রসূতি ও যমজ সন্তানকে বাঁচালেন দুই সেনাসদস্য

প্রসব বেদনা নিয়ে উর্মি নামে এক গৃহবধূকে সোমবার (৭ এপ্রিল) মধ্যরাতে মাগুরা শহরের বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাৎক্ষণিক তার অস্ত্রোপচারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে দুই ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন পড়ে। রক্ত যোগাড় করতে না পেরে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ভোরে ওই গৃহবধূর স্বামী সজিব হোসেন আর্মি ক্যাম্পে উপস্থিত হন।
সজিব মাগুরা আর্মি ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর শাফিনের কাছে জানান- তার গর্ভবতী স্ত্রীর তাৎক্ষণিক অস্ত্রোপচারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে দুই ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন। যা তিনি রাতভর খুঁজেও জোগাড় করতে পারেননি। এমন পরিস্থিতিতে মাগুরা আর্মি ক্যাম্পের সেনাসদস্যরা তাৎক্ষণিক সাড়া দেন এবং দুইজন স্বেচ্ছাসেবী সেনাসদস্যকে সঙ্গে নিয়ে একটি টহল দল দ্রুত হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে রক্তদান সম্পন্ন করে। এই রক্তদানের কারণে সম্ভব হয় সফল অস্ত্রোপচার এবং সজিব হোসেনের ঘরে জন্ম নেয় সুস্থ যমজ পুত্র সন্তান। বর্তমানে মা ও দুই শিশু সুস্থ আছে।
ঘটনাটি বাংলাদেশ আর্মির ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশ করার পর থেকেই প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন রক্ত দেওয়া মাগুরা আর্মি ক্যাম্পের দুই সেনাসদস্যসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
ওই গৃহবধূর স্বামী সজিব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্ত্রী উর্মির প্রসব বেদনা উঠলে আমরা রাত ২টার দিকে ল্যাবসিটি নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করি। ওই সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক অপারেশনের জন্য তাৎক্ষণিক দুই ব্যাগ ‘ও’ পজেটিভ রক্ত জোগাড় করতে বলেন, কিন্তু রাতভর আত্মীয়-স্বজনসহ সদর হাসপাতাল, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংক, ফেসবুক গ্রুপে জানানোর পরও সাড়া পাইনি। পরে নিরাশ হয়ে মঙ্গলবার ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে মাগুরা আর্মি ক্যাম্পে সরাসরি উপস্থিত হই এবং ক্যাম্প কমান্ডার মেজর শাফিনের কাছে বিষয়টা জানাই। তিনি আমার সব কথা শুনে দুই মিনিটের মধ্যে আমাকে নিয়ে সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে করে হাসপাতালে আসেন। এ সময় আমার স্ত্রী অপারেশন থিয়েটারেই ছিল। দ্রুত সময়ের মধ্যে সৈনিক কাওসার এবং সৈনিক ইমন দুই ব্যাগ রক্ত দেন।
আরও পড়ুন
সফল হয় আমার স্ত্রীর অস্ত্রোপচার। দুটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। আমার যমজ দুটি নবজাতকের কানে তাকবির দিয়ে আজানের ধ্বনি শোনান এক সেনাসদস্য। এছাড়াও মাগুরা আর্মি ক্যাম্পের পক্ষ থেকে আমার স্ত্রী এবং নবজাতকের জন্য ফল সামগ্রী, বেবি বেডশিট উপহার দেওয়া হয়েছে। আমার স্ত্রী এবং দুটি বাচ্চা দুজন সেনাসদস্যের রক্তদানে জীবন ফিরে পেয়েছে। আমি মাগুরা আর্মি ক্যাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নবজাতকের দাদা রবিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ ও জনগণের কল্যাণে এগিয়ে যাবে। এটা আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে প্রত্যাশা করি।
তাছিন জামান/আরএআর