রাইডারদের টার্গেট করেন ছিনতাইকারীরা
সিলেটে জীবন ও জীবিকার তাগিদে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেদের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন কিছু তরুণরা। নিজেদের ভালোলাগা ও পরিবারের হাল ধরতেই এই পেশায় নামেন তারা। তবে তাদের আয়-উপার্জন ও মোটরসাইকেলের ওপর চোখ পড়েছে ছিনতাইকারীদের। ছিনতাইয়ের জন্য রাইডারদেরকেই টার্গেট করছেন ছিনতাইকারীরা।
সম্প্রতি এসব ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ হারাতে হয়েছে মোটরসাইকেল রাইডার রেদওয়ান রশিদ চৌধুরী সৌরভকে। সর্বশেষ গত ১০ মে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে এক রাইডারকে প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে মোটরসাইকেল ছিনতাই করে নিয়ে যান ছিনতাইকারীরা।
এছাড়াও জেলার বিভিন্ন জায়গায় প্রায়ই রাইডারদের মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাঝে মধ্যে ছিনতাইচক্রের সদস্যদের আটক করলেও অনেকে থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। যাদের আটক করা হয় তারাও রাজনৈতিক আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে বের হয়ে ফের যুক্ত হন ছিনতাই কাজে।
গত রোব ও সোমবার সিলেটের বিভিন্ন জায়গা থেকে মোটরসাইকেল ছিনতাইচক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারদের মধ্যে তিনজন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানায়, গত ১০ মে সন্ধ্যার সময় কোম্পানীগঞ্জ থানাধীন দয়ারবাজার পয়েন্ট থেকে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল চালক কালিবাড়ী গ্রামের বিলাল আহমদকে এক ছদ্দবেশী ছিনতাইকারী বুড়িডহর গ্রামে যাওয়ার জন্য ৩৫০ টাকায় চুক্তি করে।
রাত সাড়ে ৭টার সময় সাইফুর রহমান ডিগ্রি কলেজের সামনে পূর্বপরিকল্পিত অজ্ঞাত দুইজন ছিনতাইকারী তাদের পথ আটকায়। পরে যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীসহ অজ্ঞাত দুইজন ছুরি দিয়ে প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে মোটরসাইকেল ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
এর আগে গত ১৩ মে দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার থানাধীন হাজিপুর গফুরের বাঁধ এলাকা থেকে রেদওয়ান রশিদ চৌধুরী সৌরভ নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ১৫ মে পুলিশ চার ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হওয়া ছিনতাইকারীরা আরও একজন রাইডারের মোটরসাইকেলও ছিনতাই করে। পরে পুলিশ তাদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।
পুলিশ আরও জানায়, সম্প্রতি এভাবে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীরা রাইডারদের ভয় দেখিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে মোটরসাইকেল ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ হারাতে হচ্ছে রাইডারদের। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযানে নামে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
গ্রেফতার হলো কোম্পানীগঞ্জ থানার সজল আহমদ (২৪), সিলেটের শাহপরান থানার ইসলামপুর এলাকার খায়রুল ইসলাম রায়হান (২০), সুরমাগেইট এলাকার আল আমিন হোসেন শিমুল (২০), একই এলাকার জিহাদ (২০), কানাইঘাটের ঢালাইচর গ্রামের আলী হোসেন জনি (২৪), শিবনগর গ্রামের মারুফ আহমদ (২৭), শ্রীপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন।
এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে শেখ খায়রুল ইসলাম রায়হান, আল আমিন হোসেন শিমুল ও সজল আহমদ সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। তাদের মধ্যে রায়হান ও শিমুল সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য নাজমুল ইসলামের অনুসারী।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, নাজমুল ইসলাম মূলত সিলেটের টিলাগড়কেন্দ্রিক ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। এতে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন এলাকার উঠতি বয়সী তরুণ ও যুবক, ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজি মামলার আসামিরা। ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট শহরতলীর শিবগঞ্জ খরাদিপাড়ার আনন্দ-৬ বাসার বীর মুক্তিযোদ্ধা শারফান আলীর বাড়িঘরে হামলা করেন নাজমুল ও তার অনুসারীরা।
রড দিয়ে আঘাত করে ভেঙে দেন মুক্তিযোদ্ধার হাত। এ ঘটনায় শাহপরাণ থানায় মামলা হলেও এখনও নাজমুলকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়াও শাহপরাণ থানার জিআর মামলায়ও পলাতক রয়েছেন নাজমুল। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর করা সিলেটের নতুন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায়ও আছেন এ ছাত্রনেতা।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও মিডিয়া) লুৎফর রহমান বলেন, সম্প্রতি কোম্পানীগঞ্জসহ কিছু এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও সিলেটের শহরতলীতে অভিাযান চালিয়ে ছিনতাইকারীসহ চক্রের সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তুহিন আহমদ/এমএসআর