মাথায় গুলি নিয়ে চলে গেলেন জুলাই বিপ্লবের তরুণ যোদ্ধা ‘হৃদয়’

পটুয়াখালীর বাউফলে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ‘জুলাই বিপ্লব’ এর তরুণ যোদ্ধা আশিকুর রহমান হৃদয় (১৭)। তিনি ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ১৮ জুলাই পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত হৃদয় উপজেলার পশ্চিম যৌতা গ্রামের রিকশাচালক আনসার হাওলাদারের ছেলে। জীবিকার তাগিদে ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করলেও পরে তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হয়ে ওঠেন।
আরও পড়ুন
প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবারের সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ‘জুলাই বিপ্লব’-এর সময় পুলিশের গুলিতে হৃদয়ের মাথায় তিনটি গুলি লাগে। তৎকালীন সরকারের কঠোর দমননীতির কারণে তিনি দীর্ঘদিন গোপনে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন।
সরকার পরিবর্তনের পর ৫ আগস্ট তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা তার মাথা থেকে দুটি গুলি অপসারণ করতে পারলেও, একটি গুলি ছিল জটিল স্থানে, যা বের করা সম্ভব হয়নি।
পরিবার জানায়, গত ২ এপ্রিল হৃদয় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাথাব্যথা ও জ্বর তীব্র হলে ৪ এপ্রিল দুপুরে তাকে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। তবে আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে তাকে সেখানে নেওয়া সম্ভব হয়নি। বিকেল ৩টার দিকে হৃদয়ের মৃত্যু হয়।
হৃদয়ের বাবা আনসার হাওলাদার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার রিকশা আর একটা গরু বিক্রি করে যতটা পেরেছি করেছি। কিন্তু ছেলেকে বিদেশে বা উন্নত চিকিৎসা করাতে পারিনি। চিকিৎসার অভাবেই ও চলে গেল।
বড় ভাই মো. সোহাগ ইসলাম আনিস বলেন, মাথায় গুলিটা থাকায় ও সব সময় ব্যথায় কষ্ট পেত। ওর উন্নত চিকিৎসার দরকার ছিল। কেউ সাহায্য করেনি। এটা একটা রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আ. রউফ বলেন, হৃদয়কে দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। তার অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। আমরা বরিশাল রেফার করি, কিন্তু সময়মত নেওয়া সম্ভব হয়নি। বিকেল তিনটায় সে মারা যায়।
আরিফুল ইসলাম সাগর/এমএসএ