৪ দিনেও বন্ধ হয়নি লোকালয়ে পানি প্রবেশ, দুর্ভোগে ১০ গ্রামের মানুষ

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর ভাঙনকবলিত বেড়িবাঁধ চার দিনেও সংস্কার সম্ভব হয়নি। এতে জোয়ারের পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় প্লাবিত ১০টি গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। ইতোমধ্যে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি ও মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বর্তমানে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিও ব্যাগ দিয়ে বিকল্প রিং বাঁধ তৈরির কাজ করছে। তবে ধীরগতির কারণে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনকালে অবৈধ পাইপ লাইন দ্রুত অপসারণের নির্দেশ দেন। তিনি আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কৃষ্ণা রায়কে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে বেড়িবাঁধের নিচে বসানো এসব পাইপ অপসারণের নির্দেশনা দেন।
স্থানীয় শিক্ষক আবু দাউদ জানান, ভাঙনকবলিত স্থানটি দীর্ঘদিন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। মূল যে পয়েন্টটি ধসে গেছে, সেখানে দীর্ঘদিন ধরে চিংড়ি ঘেরে পানি প্রবাহের জন্য অবৈধ পাইপ বসানো হয়েছিল। এ কারণেই বাঁধটি ধসে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমিন মোড়ল বলেন, নদীর লবণ পানি তোলার জন্য বাঁধ ছিদ্র করে পাইপ বসানোর কারণে বাঁধের নিচের মাটি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে মাটি ক্ষয়ে যাওয়ায় হঠাৎ করেই বাঁধ ধসে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে।
আনুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসেন জানান, শুধু আশাশুনি নয়, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, কালিগঞ্জ ও দেবহাটাসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ ছিদ্র করে পাইপ বসিয়ে নদীর লবণ পানি তোলা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, বাঁধ থেকে ১০০ মিটার দূরে চিংড়ি ঘের করার কথা থাকলেও অধিকাংশ চাষি তা মানছেন না। ফলে প্রতিবার সামান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগেও বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাখাওয়াত হোসেন বলেন, পানি প্রবাহ বন্ধে প্রাথমিক পর্যায়ে ভাঙন পয়েন্টে জিও টিউব দিয়ে ৩৫০ মিটার বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরের জোয়ারের আগে তিন লেয়ারের কাজের প্রথম লেয়ারের ২৪০ মিটার কাজ করা হয়েছে। জোয়ারের কারণে আপতত কাজ বন্ধ আছে। নদীতে ভাটা শুরু হলে আবার কাজ শুরু করা হবে।
আরও পড়ুন
তিনি আরও বলেন, আধুনিক পদ্ধতির জিওটিউব দিয়ে বাঁধের কাজ চলছে। এটি সফল হলে শুক্রবার-শনিবারের মধ্যে পানি আটকানো সম্ভব হবে। এখানে পানির উচ্চতা বেশি হওয়ায় প্রথম লেয়ারের কাজ শেষে দ্বিতীয় ও তৃতীয় লেয়ারের কাজ করতে হবে। পরে বাঁধের স্থায়িত্বের জন্য তার ওপরে মাটির কাজ করতে হবে।
অন্যদিকে পানিবন্দি পরিবারগুলো বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। দুর্গতদের সহায়তায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড ত্রাণ বিতরণ করছে। তবে ক্ষতিগ্রস্তরা দ্রুত বাঁধ সংস্কার ও স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন।
ইব্রাহিম খলিল/আরএআর