২২ লাখ টাকায় লিবিয়ার জিম্মি দশা থেকে দেশে ফিরলেন লোকমান

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের নলী জয়নগর গ্রামের বাসিন্দা লোকমান হোসেন। সংসারে সচ্ছলতা আনতে পরিবারের মায়া ছেড়ে পাড়ি জমান বিদেশের মাটিতে। বিদেশে ঠিকই গিয়েছেন তবে দালালের খপ্পরে পড়ে হয়েছিলেন জিম্মি। সংসারে সচ্ছলতা তো দূরের কথা উল্টো সংসার থেকে নিতে হয়েছে টাকা। মোট ২৫ লাখ টাকা খুইয়ে বুধবার (২ এপ্রিল) লিবিয়ার জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) লোকমান হোসেনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
লোকমান হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১১ মাস আগে বাংলাদেশ থেকে কাজের খোঁজে পাড়ি জমাই লিবিয়ায়। সেখানে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য শাহ আলম নামে একজনকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দেই। কিন্তু শাহ আলম আমাকে বিক্রি করে দেয় অন্য এক দালালের কাছে। নতুন দালাল জিম্মি করে ইতালি নেওয়ার জন্য আরও টাকা দাবি করে। একপর্যায়ে কোনো উপায় না পেয়ে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য ১০ লাখ টাকা দেই সিলেটের হবিগঞ্জের শিরু ইসলাম নামে এক দালালকে। কিন্তু ১০ লাখ টাকা নিয়েও আমাকে ইতালি পাঠায়নি। সেখানে লিবিয়ার ত্রিপলির জহুরা ঘাট ওসামা ক্যাম্পের একটি রুমে বন্দি করে রাখে এবং মুক্তিপণের জন্য প্রতিদিন নির্যাতন করতে থাকে। আমাকে এতটা নির্যাতন করতো যে বাঁচার জন্য বাড়িতে টাকা চাইতাম। বাধ্য হয়েই মুক্তির জন্য বসতঘরের জমি বিক্রি করে দিয়ে মাদারীপুরের দাদন জমাদ্দারকে দিয়েছি ১২ লাখ টাকা। একটা সময় কোথাও টাকা না পেয়ে আমার তিন সন্তানকে বিক্রি করতে চেয়েছিলাম। আল্লাহ যেন মানুষকে এমন বিপদ আর না দেন।
লোকমান হোসেনের স্ত্রী রিমি আক্তার বলেন, লিবিয়ায় আমার স্বামীকে জিম্মি করে নির্যাতন করা হতো। তাকে অনেক অত্যাচার করেছে। তিনি বেঁচে আছেন কিনা সেটাও সন্দেহ ছিল। স্বামীকে মুক্ত করার জন্য দালালের বাড়িতে গিয়ে আমরা দিনের পর দিন থেকেছি। সে নিশ্চিত মুক্তি পেয়েছে সেটা জেনে সেখান থেকে আমরা এসেছি। ১১ মাস পরে দেশে ফিরেছে।
আরও পড়ুন
এ বিষয়ে সাপলেজা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কাজল খান বলেন, লোকমান বিদেশে যাওয়ার পর দালালরা তাকে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি করে। পাশাপাশি নির্যাতন করেছে। শুরু থেকে পরিবারটির পাশে ছিলাম। পরিবারটি সহায় সম্পত্তি সব বিক্রি করে তাকে মুক্ত করেছে। লোকমানের এখন ভালো চিকিৎসার প্রয়োজন। শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এ বিষয়ে মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুম বলেন, তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তার সার্বিক বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাফিউল মিল্লাত/আরএআর