ঈদ আনন্দে মুখরিত রংপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলো

ঈদের দিন থেকেই ভ্যাপসা গরম। ছাতা ছাড়া বাইরে বের হওয়া যেন কষ্টকর। এমন অসহ্য গরমেও থেমে নেই ঈদ আনন্দ। গত দুই দিনের মতো ঈদুল ফিতরের তৃতীয় দিনেও রংপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোসহ দর্শনীয় স্থানে বেড়েছে মানুষের ভিড়। ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে রঙিন হয়ে উঠেছে দর্শনীয় স্থানগুলো।
প্রচণ্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে বিনোদন উদ্যান চিড়িয়াখানা, তাজহাট জমিদার বাড়ি, প্রয়াস সেনাপার্ক, ভিন্নজগতসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। পরিবার নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছেন মানুষজন। রংপুর ছাড়া উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে ছোট-বড় পরিবহনে করে আসছেন হাজারো বিনোদন পিপাসু মানুষ। তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে রংপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলো।
বুধবার (২ এপ্রিল) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রংপুর চিড়িয়াখানা বিনোদন উদ্যানসহ রংপুর শিশুপার্ক, তাজহাট জমিদার বাড়ি ও জাদুঘর, সিটি চিকলি বিনোদন পার্ক, প্রয়াস সেনাপার্ক, চিকলি ওয়াটার পার্ক ও রূপকথা থিম পার্ক ঘূরে দেখা যায় টিকিটের জন্য দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন। টিকিট কেটে প্রবেশ করতেও যেন রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে বিনোদনপ্রেমীদের।
তবে শহরের বিনোদন কেন্দ্রেই ঈদ আনন্দে মাতোয়ারা শিশু-কিশোরদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। গরম উপেক্ষা করে নিজেদের মতো করে ছুটে বেড়াচ্ছে। তাদের উল্লাসে প্রাণ ফিরেছে জনসমাগমশূন্য দর্শনীয় স্থানগুলোতে। সঙ্গে আছেন অভিভাবকরা। সবমিলে গরমও হার মেনেছে ঈদ আনন্দের কাছে।
এ ছাড়া রংপুর কালেক্টরেট সুরভি উদ্যান, টাউন হল চত্বর, শতবর্ষী কারমাইকেল কলেজ, কাউনিয়া তিস্তা রেলওয়ে সেতু, গঙ্গাচড়া মহিপুর তিস্তা সড়ক সেতু পয়েন্টে এখন মানুষ আর মানুষ। এসব স্থানে যেতে দীর্ঘ যানজটে পড়েছেন বিনোদনপ্রেমীরা।
রংপুর চিড়িয়াখানায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কিছু বন্যপ্রাণীর সংযোজন শিশু কিশোরদের উপস্থিতি বাড়িয়েছে। চিড়িয়াখানা ভেতরে প্রবেশের পর এক খাঁচা থেকে আরেক খাঁচায় হেঁটে দর্শনার্থীরা বিভিন্ন পশু-পাখি দেখছেন। আর বড়রা তাদের শিশুসন্তানকে বিভিন্ন পশুপাখির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন।
বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে জেব্রা, বাঘ ও সিংহের খাঁচার সামনে। বানরের ভেংচি কাটা আর লাফালাফি দেখতে বানরের খাঁচার সামনেও ছিল দর্শনার্থীর ভিড়। এ ছাড়া কুমির, ঘড়িয়াল, জলহস্তি, ঘোড়া, হনুমান, গাধা, ভাল্লুক, হরিণ, ময়ূর, উটপাখিসহ চিড়িয়াখানার সবগুলো খাঁচার সামনেই ছিল জটলা।
চিড়িয়াখানার ভেতরে রয়েছে আলাদা শিশুপার্ক। কয়েকবছর থেকে শিশুপার্কের পরিধি বাড়ায় টিকিট নিয়ে প্রবেশ করতে লম্বা লাইন দেখা গেছে। পার্কের ভেতরে দলবদ্ধভাবে শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী মানুষদের ঘুরতে দেখা যায়।
সেখানকার রাইডগুলো ব্যবহারে টিকেট কাটতেও ছিল ভিড় আর ভিড়। যার কারণে অনেকেই পছন্দের রাইডগুলো উঠতে পারছেন না। গতবারের মতো এবারও বাড়তি আনন্দ যোগ করেছে রোস্টারে। সেইসঙ্গে গ্রামীণ চিত্রের অবয়ব ছবি তোলা আর আড্ডা দেওয়া সব মিলিয়ে আনন্দ বেড়েছে কয়েকগুন। আই লাভ প্রতীক জড়িয়ে ছবি তোলার হুড়োহুড়ি দেখা গেছে। ভয় আর রোমাঞ্চের জন্য ভূতের ঘর-সংসার রয়েছে। যেখানে অনেকের প্রবেশে ভয় কাজ করলেও ভালোই শিহরণ জাগায় বলে জানিয়েছে একাধিক শিশু-কিশোর।
আরও পড়ুন
এদিকে চিকলি বিনোদন পার্ক সাজানো হয়েছে শিশু-কিশোরদের আকৃষ্ট করার মতো নানা আয়োজনে। বিলের বুকে স্পিডবোট চলছে দ্রুত বেগে এ পাশ থেকে ওপাশ। হই হুল্লোড়ে মেতে উঠছে সবাই।
একই চিত্র দেখা গেছে রংপুর নগরী থেকে একটু দূরের খলেয়া গঞ্জিপুরের ভিন্নজগত, পীরগঞ্জের আনন্দনগর, বদরগঞ্জের মায়াভুবন, কাউনিয়ার তিস্তা পার্ক, পীরগাছা-সুন্দরগঞ্জের আলী বাবা থিম পার্কেও। ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের মাঝে ঈদ উদযাপনের খোরাক যোগাচ্ছে এসব বিনোদনকেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থান।
কাউনিয়া তিস্তা রেল সেতু শতবর্ষী একটি পুরাতন রেল সেতু। তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত রেলওয়ে সেতুর পাশে ২০১২ সালে তিস্তা সড়ক সেতু তৈরি করা হয়। সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা তিস্তা নদীর তীরে আড্ডার আসর বসিয়েছে। ঈদকে ঘিরে তিস্তা রেল সেতুর নিচ থেকে গোধূলিলগ্নের অপরূপ রূপের অবলোকন আর একটু স্বস্তির বিনোদন পেতে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের মানুষের ভিড় বেড়েছে।
একই চিত্র গঙ্গাচড়ার মহিপুর ঘাটে। তিস্তা নদী বেষ্টিত এই ঘাটে রংপুর-লালমনিরহাট জেলার মানুষের পারাপারে নির্মিত গঙ্গাচড়া মহিপুর তিস্তা সড়ক সেতু। সেতুর নিচে একপ্রান্তে পানিতে ছুটে বেড়াচ্ছে নৌকা আর ছোট ছোট স্পিডবোট। সেতুর আরেক প্রান্তে বিশাল বালুচর। মনোরম পরিবেশে নদীর বুকে পাল তোলা নৌকায় ঘুরছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ বালুচরে প্রিয়জনের হাত ধরে হেঁটে হেঁটে গল্প করে সময় কাটাচ্ছেন। যেন এক টুকরো সমুদ্র সৈকতে আনন্দে মাতোয়ারা সবাই।
রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. মো. আমবার আলী তালুকদার জানান, গত কয়েক বছর থেকে এবার দর্শনার্থী বেশি লক্ষ্য করা গেছে। সবাই আনন্দচিত্তে চিড়িয়াখানায় ঘুরছেন, শিশুরা খুবই আনন্দ-উচ্ছ্বাসে সময় কাটাচ্ছে। বিনোদনপ্রেমীদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে পুলিশ সার্বক্ষণিক রয়েছে। তা ছাড়া পুরো চিড়িয়াখানা সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত।
প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পক্ষ থেকে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ রংপুর জোনের পুলিশ পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রংপুরের সব বিনোদন কেন্দ্রে পুলিশ রয়েছে, সেইসঙ্গে সাদা পোশাকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। আশা করি কোথাও সমস্যা হবে না।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএমকে