টানা ৪১ দিন জামাতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল পেল ১০ শিশু-কিশোর

টানা ৪১ দিন মসজিদে তাকবিরে উলার সঙ্গে জামাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে পুরস্কার পেল নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ১০ জন শিশু-কিশোর। তাদের প্রত্যেককে পুরস্কার হিসেবে একটি করে বাইসাইকেল উপহার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৪৯ জনকে বিভিন্ন পুরস্কার প্রদান করা হয়।
মঙ্গলবার (১ এপ্রিল ) রাতে উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের বায়তুস সালাম জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে নবীপুর ছাত্রকল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে এসব পুরস্কার দেওয়া হয়।
জানা যায়, গ্রামের শিশুরা যাতে মসজিদে যেতে অভ্যস্ত হয়, নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারে এবং আল্লাহর পরিচয় লাভে ও সমাজে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করতে পারে এসব লক্ষ্যকে সামনে রেখে নবীপুর ছাত্রকল্যাণ সংস্থা এই ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রতিযোগিতায় শর্ত ছিল স্থানীয় শিশু-কিশোরদের বায়তুস সালাম জামে মসজিদ ও মসজিদে তাকওয়ায় গিয়ে জামায়াতের সঙ্গে টানা ৪১ দিন ধারাবাহিকভাবে নামাজ আদায় করা। পুরস্কার হিসেবে তাদের প্রত্যেককে একটি করে বাইসাইকেল প্রদান করা হবে।
প্রতিযোগিতায় সাড়া দিয়ে প্রথম দিকে অন্তত ৫৯ জন শিশু-কিশোর নামাজ আদায় শুরু করলেও চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত ১০ জন শিশু-কিশোর টিকে থেকে বিজয়ী হয়েছে। ঈদে পুরস্কার ও সাইকেল উপহার পেয়ে উল্লসিত শিশু-কিশোররা।
পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশু সাজ্জাদ হোসেন ও মো. রেদওয়ান ঢাকা পোস্টকে বলে, আমরা পুরস্কারের জন্য নামাজ আদায় করিনি। আমরা নিজেদের জন্য নামাজ পড়েছি। তবে ঈদে দারুণ উপহার পেয়ে আমরা উল্লসিত। তাছাড়া সাইকেলটি পেয়ে আমাদের প্রতিদিন মাদরাসা যাওয়া-আসার সুবিধা হবে। আমরা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।
নবীপুর ছাত্রকল্যান সংস্থার সভাপতি আইয়ুব খান ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রামের শিশুরা যাতে মসজিদে যেতে অভ্যস্ত হয়, নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারে এবং আল্লাহর পরিচয় লাভ ও সমাজে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করতে পারে সেজন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। এটি আমাদের একটি সাহসী উদ্যোগ ছিল। আর্থিকভাবে আমাদের একটু হিমশিম খেতে হলেও শিশুদের নামাজি করতে পেরে এবং তাদের খুশি করতে পেরে আমরা আনন্দিত।
এই উদ্যোগের সমন্বয়ক হাফেজ জাবেদ হোসেন, মাওলানা হাবিবুর রহমান, মো. নুর নবী হোসেন ও মাওলানা আব্দুল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো কোরআনের সেই বর্ণনা অনুযায়ী বাবা-মা এমন একটি সন্তান পাবে যে সন্তান হবে চক্ষু শীতলকারী। একই সঙ্গে সে সমাজের জন্যও একজন উপকারী বন্ধু হয়ে উঠবে। বিজয়ীরা একটানা ৪১ দিন ২০৫ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতে নামাজ আদায় করেছে। তারা ঠিকমতো নামাজ আদায় করছে কিনা তা হিসাব রাখার জন্য প্রতি ওয়াক্তে নামাজের পর শিশু-কিশোরদের নাম রেজিস্ট্রেশন ও ইমামের স্বাক্ষর সংগ্রহ বাধ্যতামূলক ছিল। যদি কেউ কোনো ওয়াক্তে অনুপস্থিত থাকত তখন তার গণনা বন্ধ করে দেওয়া হতো। এভাবে নিয়মিত হাজিরার ভিত্তিতে সর্বশেষ ১০ জন বিজয়ী হয়।
উপদেষ্টা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সমাজে যখন অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে, সেই সময়ে কিশোররা যদি মসজিদমুখী ও চরিত্রবান হয়, তাহলে সৎ ও ভালো মানুষ যেমন তৈরি হবে, তেমনি মা-বাবাও সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হতে পারবেন। এমন আয়োজন আমাদের সমাজে কিশোর গ্যাং মুক্ত করবে এবং শিশু কিশোরদের নামাজের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করবে।
মো. জাকির হোসাইন ও আমজাত হোসেন আজিমের সঞ্চালনায় এ সময় বায়তুস সালাম জামে মসজিদের সভাপতি মাওলানা মো. মোহাম্মদ ইলিয়াস, তাজুল ইসলাম মডেল একাডেমির প্রধান শিক্ষক খাইরুল্লাহ আজাদ, বিশিষ্ট শিক্ষা অনুরাগী মো. হারুনর রশীদ রুবেল, নবীপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনোয়ার উল্যাহ মাস্টারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
হাসিব আল আমিন/আরকে