ভোলায় থানা হাজতে যুবকের আত্মহত্যা

ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ হেফাজতে থাকা মো. হাসান (২২) নামে এক যুবক ভোলা সদর মডেল থানা হাজতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় জেলাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (৩১ মার্চ) রাত আনুমানিক ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মৃতের বাড়ি ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে। তার বাবার নাম মো. রফিকুল ইসলাম বলে জানা গেছে।
নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু শাহাদাৎ মো.হাচনাইন পারভেজ।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছেন, ঈদুল ফিতরের দিন দুপুরে পার্শ্ববর্তী ২২ বছর বয়সী দুই সন্তানের জননী হাসানদের বাড়ির ফ্রিজে গরুর মাংস রাখতে যান। এ সময় ওই নারীকে হাসান জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ জানান ভুক্তভোগী ওই নারী। পরে ওই তরুণী বিষয়টি তার পরিবারকে জানালে তার স্বজনরা হাসানকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে বেধরক মারধর করে পুলিশে দেন। ওই দিন বিকেলে পুলিশ হাসানকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করালে সন্ধ্যার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাসানকে রিলিজ দিলে পুলিশ তাকে ভোলা সদর মডেল থানায় নেন এবং থানা হাজতে রাখেন। ঈদের দিন দিবাগত রাত ১২টার দিকে থানা হাজতের টয়লেটের জানালার রডের সঙ্গে কাপড় পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেন।
পরে রাতে সিফট চেঞ্জ হওয়া থানার সেন্ট্রি হাজতখানায় গিয়ে হাজতের মধ্যে থাকা হাসানকে দেখতে না পেয়ে ভেতরের টয়লেটে গিয়ে দেখেন তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছেন। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে আনা হয়।
বিজ্ঞাপন
তবে হাসানের মা শাহনাজ পারভিন অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে হাসান বিবাহিত। ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করত। গত দুইমাস আগে তাকে বিবাহ করিয়েছি। ঈদের চাঁদ রাতে হাসান বাড়িতে আসে। ঈদের দিন দুপুরে আমি আর হাসানের স্ত্রী ঘরে ছিলাম না। আমাদের সঙ্গে জায়গা জমি নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে হাসানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন ওই নারী ও তার স্বজনরা। বাড়ি থেকে হাসানকে ডেকে নিয়ে তারা পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। আজ আমার ছেলে মারা গেছে, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার সর্বোচ্চ বিচার চাই।
হাসানের নানা আব্দুল হাফেজ মিঝি ও হাসানের স্ত্রী নুরুন নাহার বলেন, মঙ্গলবার ফজরের সময় স্থানীয় গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি হাসান ভোলা সদর থানা হাজতের মধ্যে আত্নহত্যা করেছে। খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে এসে দেখি হাসানের মরদেহ। হাসান সস্পূর্ণ নির্দোষ ছিল।
এ বিষয়ে ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু শাহাদাৎ মো. হাচনাইন পারভেজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্থানীয়রা হাসানকে ধর্ষণের অভিযোগে মারধর করে ভুক্তভোগী নারীসহ তাদের দুজনকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে হাসপাতালে থাকা ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে চিকিৎসা শেষে হাসানকে থানা হেফাজতে আনা হয়। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান ছিল। মামলা দায়ের প্রক্রিয়া চলাকালে হাজতের টয়লেটের জানালার রডের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে হাসান আত্মহত্যা করে। রাতের পরবর্তীত সেন্ট্রি হাজতে থাকা হাসানকে দেখতে গিয়ে দেখেন সে টয়লেটে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুঁলে রয়েছে। থানায় এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে পরে আর ধর্ষণ মামলা দায়ের হয়নি।
খাইরুল ইসলাম/আরকে