নৌকা আছে মাঝি নেই, রশি টেনে নদী পারাপার

নৌকা আছে মাঝি নেই। এমনকি বৈঠাও নেই। নদীর এপার থেকে ওপারে টানানে সাদা রঙের রশি টেনে পার হতে হয় ১৮ গ্রামের মানুষকে। যুগের পর যুগ রশি টানা একটি মাত্র নৌকায় চলছে নড়াইল সদর উপজেলার ৩ ইউনিয়নের বাসিন্দাদের পারাপার। একটি সেতুর অভাবে কাজলা নদীর এপার-ওপারে রশি বেঁধে পারাপার হচ্ছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়াসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে মুলিয়া বাজার। এ বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কাজলা নদী। প্রতিদিন এই নদী পার হয়ে আসা-যাওয়া করতে হয় স্থানীয়দের। তবে দীর্ঘ দিনেও এখানে সেতু নির্মাণ না হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের।
ঘাটের একটি মাত্র নৌকা দিয়ে এপার-ওপার রশি বেঁধে পার হতে হয় নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সকল বয়সী মানুষের। রশি টানা এই নৌকায় বছরের পর বছর কষ্ট করে নদী পার হচ্ছে মুলিয়াসহ পার্শ্ববর্তী ৩ ইউনিয়নের ১৮ গ্রামের মানুষ। ভোট আসলেই জনপ্রতিনিধিরা নদীতে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিপণ্য সরবরাহ, রোগী আনা নেওয়ায় চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন স্থানীয়রা।
পানতিতা গ্রামের সুব্রত সিকদার বলেন, ১২ বছর ধরে শুনছি এখানে একটি সেতু হবে। সেতু আর হয় না ভোগান্তিও কমে না। এমপি অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। টেন্ডার করে শুনলাম ব্রিজ হয়ে যাবে। ব্রিজের খবর নেই। আমাদের যে কষ্ট আসলে সেই কষ্ট রয়ে গেল।
মুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিহির রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, বর্ষায় যখন ঝড় বৃষ্টি হয়, তখন অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের নদী পারাপার নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে। রশি টানা এই নৌকা পারাপারে বিশেষ করে স্কুলের যে বাচ্চারা এদের যাতায়াতে অনেক কষ্ট।
মুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী শ্রেয়া বিশ্বাস বলেন, প্রতিদিন আমাদের ৪ থেকে ৫ বার খেয়া পার হতে হয়। এই জন্য আমাদের অনেক সমস্যা হয়। খেয়া যদি ওই পারে থাকে তাহলে পড়তে যেতে আধাঘণ্টা দেরি হয়ে যায়। সেই জন্য আমাদের একটা ব্রিজ দরকার। আর বর্ষাকালে খেয়া ঘাট পিচ্ছিল হয়ে যায়। আমাদের পারাপারে অনেক কষ্ট হয়।
মুলিয়া বাজারের ব্যবসায়ী সন্জয় বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এই খেয়া পার না হয়ে যদি তুলারামপুর হয়ে ঘুরে জেলা শহরে যাই তাহলে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার পথ যেতে হয়। নদীতে পারাপারে যদি একটা ব্রিজ হতো তাহলে আমাদের দুর্ভোগ দূর হতো। এই ঘাট পার হয়ে ৪ কিলোমিটারে পথ পেরিয়ে নড়াইল যেতে পারি।
এ বিষয়ে নড়াইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ কুমার কুন্ডু ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুলিয়া খেয়া ঘাটে সাড়ে চার শ মিটার একটা ব্রিজ দিতে হবে। পাশে একটা বাজার ও খাল আছে। আর এগুলো ওভার করে আসতে সাড়ে চার শ মিটার ব্রিজ হতে হবে। এটা রেজিস্ট্রারি হয়ে গেছে। মোটামুটি একটা ডিজাইনও করা হয়েছে। আমরা আশা করছি দ্রুত এটা বাস্তবায়িত হবে।
আরএআর