ডাকাত সন্দেহে মাইকিং, গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে নিহত ২

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে অটোরিকশার ব্যাটারি চুরির চেষ্টার অভিযোগে গণপিটুনিতে দুইজন নিহত হয়েছেন।
সোমবার (৩১ মার্চ) রাতে ঘোড়াশাল পৌর এলাকার ভাগদী কুড়াইতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- করতেতৈল গ্রামের আশরাফ উদ্দিনের ছেলে সাকিব ও রাকিব। এ ঘটনায় গ্রামবাসীর হাত থেকে ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে আশরাফ ও তার স্ত্রী আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র যায়, সোমবার ভোরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ব্যাটারি চুরির জন্য গ্রামে প্রবেশ করেন সাকিব ও রাকিব। পরে ব্যাটারি চুরির সময় পাশের বাড়ির একজন তাদের দেখে ফেলে চিৎকার করতে থাকে। পরে আশপাশের লোকজন বেরিয়ে ২ জনের মধ্য থেকে একজনকে আটক করতে সক্ষম হয়। কিন্তু অপরজন পালিয়ে যান। পরে স্থানীয়রা আটককৃত ওই চোরকে মারধর করে ছেড়ে দেয়। পরে দুপুরে ওই দুই চোর দলবল নিয়ে ওই গ্রামের শুক্কুরআলীর বাড়িতে হামলা চালায় এবং ওই অটোরিকশা চালক পাবেলকে মারধর করে। পরে তারা আবার রাতে ৩০ থেকে ৪০ জনের একটা দল নিয়ে সেখানে প্রবেশ করলে এলাকায় ডাকাত ঢুকেছে বলে মসজিদে মাইকিং চালানো হলে গ্রামের লোকজন তাদের ওপর হামলা করে। এতে গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে সাকিব নামে একজনের মৃত্যু হয় এবং গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।
অপরদিকে নিহতের স্বজনরা বলছেন, নিহত রাকিব ও তার বাবা আশরাফ উদ্দিন বিদেশে লোক পাঠাতেন। তাই দীর্ঘদিন যাবত তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল একদল দুর্বৃত্ত। কিন্তু তারা চাঁদা দিতে রাজি হয়নি। সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদ উপলক্ষে সাকিব ও তার বন্ধুরা ঘুরতে বের হন। তারা কর্তাতৈল এলাকায় বেড়াতে গেলে দুর্বৃত্তরা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় দুর্বৃত্তরা সাকিবকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে।
খবর পেয়ে তার ভাই রাকিব ও তার মা-বাবাসহ স্বজনরা ঘটনাস্থলে যায়। ওই সময় দুর্বৃত্তদের বাঁধা দিতে গেলে রাকিব ও তার মা-বাবাকেও এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
পরে তাদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাকিবকে মৃত ঘোষণা করেন। মুমুর্ষ অবস্থায় রাকিব ও তার মা-বাবাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু ঢাকায় আনার পথে রাকিব মারা যায়। তার মা-বাবাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
নিহতের চাচি হাজেরা বেগম বলেন, এলাকার কিছু দুর্বৃত্ত দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা চেয়ে আসছিল। চাঁদা না দেওয়ায় আজকে ঈদের দিন ঘুরতে গেলে সন্ত্রাসীরা সাকিব ও রাকিবকে কুপিয়ে হত্যা করে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।
পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন বলেন, চোর সন্দেহে পলাশের ভাগদী গ্রামের লোকজন সকালে একজনকে গণধোলাই দিয়েছে। পরে রাতেও চোর সন্দেহে কয়েকজনকে গণধোলাই দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসক একজনকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর আহত তিনজনকে ঢাকায় পাঠায়। সেখানে নেওয়ার পর কেউ মারা গেছে কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারিনি।
তন্ময় সাহা/এমএন