সৌদির সঙ্গে মিল রেখে বিভিন্ন জেলায় ঈদুল ফিতর উদযাপন

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় রোববার (৩০ মার্চ) পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। রোববার চাঁদ দেখা গেলে সোমবার (৩১ মার্চ) সারা দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। তার আগেই বেশ কিছু জেলায় বিভিন্ন দরবার শরিফের অনুসারীরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আজ ঈদ উদযাপন করেছেন। ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
বিজ্ঞাপন
চাঁদপুর
সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামে ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় হাজীগঞ্জের সাদ্রা দরবার শরিফ মাঠে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞাপন
এ জামাতে ইমামতি করেন দরবার শরিফের পীর মুফতি জাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানি। অন্যদিকে সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল মাদরাসা মাঠে সকাল ১০টায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন সাদ্রা দরবার শরিফের পীর মাওলানা আরিফ চৌধুরী।
স্থানীয়রা জানান, প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ১৯২৮ সালে আগাম রোজা রাখাসহ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালনের নিয়ম চালু করেন সাদ্রা দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইসহাক (রহ.)। তার অনুসারীরা প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রোজা রাখা ও ঈদ উদযাপন করা শুরু করেন। সেই থেকে বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দা আরব দেশসমূহের সঙ্গে মিল রেখে রোজা এবং ঈদসহ ধর্মীয় উৎসব পালন করেন। এর মধ্যে জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, সমেশপুর, অলীপুর, ভোলাচোঁ, ঝাকনি, সোনাচোঁ, প্রতাপপুর ও সুরঙ্গচাইল গ্রাম, ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুরঙ্গচাউল, কাইতাড়া, উভারামপুর, টোরামুন্সিরহাট, মতলব উত্তর উপজেলার পাঁচানী, বাহেরচর পাঁচানী, আইটাদি পাঁচানী, দেওয়ানকান্দিসহ অর্ধশতাধিক গ্রামের মুসল্লিরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করেছেন।
লালমনিরহাট
বিজ্ঞাপন
ঈদের আগের দিনই ঈদ উদযাপন করছেন লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার ১০ গ্রামের ২০ শতাধিক পরিবার। রোববার সকালে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের মধ্যে দিয়ে ঈদের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে ওই সব পরিবার। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহবী মুন্সিপাড়ায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা ইমান আলী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহবি মুন্সিপাড়া জামে মসজিদ, চন্দ্রপুর ইউনিয়নের পানি খাওয়ার ঘাট আহলে হাদিস জামে মসজিদ ও একই ইউনিয়নের বোতলা এলাকায় এই ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগে রোজা ও ঈদ করেন এসব গ্রামের মুসল্লিরা। এছাড়াও পাটগ্রাম জোংগা ও বাউড়া, হাতীবান্ধার দইখাওয়াসহ বিভিন্নস্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
মুন্সিপাড়ার ঈদগাহ মাঠের সভাপতি কায়দে আজম জিন্নাহ বলেন, সারা বিশ্বে একই দিন ঈদ হবে। এ বিশ্বাস থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ২০১১ সাল থেকে এ এলাকার মানুষ, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, শবেকদর, শবে মেরাজসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন। সৌদি আরবের আকাশে চাঁদ দেখা গেলে আমরা ঈদ পালন করি। এতে ঈদের জামাতে ৫ শতাধিক মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অংশ নেন অন্য জামাতে।
পিরোজপুর
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশে ঈদের আগের দিনই ঈদ উদযাপন করেছেন পিরোজপুরের তিন উপজেলার ১০ গ্রামের ৮ শতাধিক পরিবার। রোববার সকালে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের মধ্যে দিয়ে ঈদের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে ওই সব পরিবার। শরীয়তপুরের শুরেশ্বর দরবার শরিফের মুরিদ পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মিরাজ খন্দকার একদিন আগে ঈদুল ফিতর উদযাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সকাল ৮টায় পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠী এলাকার মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদে ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া সকাল সাড়ে ৮টায় মঠবাড়িয়া উপজেলার কচুবাড়িয়া গ্রামের হাজী ওয়াহেদ আলী হাওলাদার বাড়িতে, জেলার নাজিরপুর উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের আল-আমি মসজিদে সকাল ৮টায় এবং মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের ভাইজোড়া গ্রামের খন্দকার বাড়িতে সকাল সাড়ে ৯টায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার শুরেশ্বর গ্রামের হজরত মাওলানা আহমেদ আলী শুরেশ্বর পীরের অনুসারীরা ১৫০ বছর ধরে প্রতি বছর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আগাম রোজা রাখাসহ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করে থাকেন। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ওইসব পরিবার আজ ঈদুল ফিতর উদযাপন করে।
ঝিনাইদহ
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঝিনাইদহের বিভিন্ন স্থানে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। জেলার হরিণাকুন্ডু পৌরসভার বল ফিল্ডের সামনেসহ চারটি স্থানে রোববার সকালে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপনের এমন ধারা গত ২৪ বছর ধরে চলে আসছে। ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মো. রেজাউল ইসলাম। হরিণাকুন্ডু পৌরসভার বলফিল্ডের সামনে ভালকি, নিত্যনন্দনপুর, কালীগঞ্জের বারোবাজার ও সদর উপজেলার একটি অংশের মুসল্লিরা পৃথকভাবে ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়
সাতক্ষীরা
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে সাতক্ষীরার ২৫টি গ্রামের মানুষ পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছেন। রোববার সকালে জেলার বিভিন্ন মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভাড়ুখালী আহলে সুন্নাত আল জামায়াত জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। সেখানে ইমামতি করেন মাওলানা মাহবুবুর রহমান। একই সময়ে বাওখোলা পূর্বপাড়া জামে মসজিদেও ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ইমামতি করেন মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. মোহাব্বত আলী।
ঈদের নামাজে ইসলামকাটি, গোয়ালচত্তর, ভাদড়া, ঘোনা, মিরগিডাঙ্গাসহ প্রায় ২০ গ্রামের মুসল্লিরা অংশ নেন। এতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও ঈদের জামাতে শরিক হন।
নোয়াখালী
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে নোয়াখালীর পাঁচটি গ্রামের মানুষ পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছেন। রোববার সকাল ৯টায় দুই তিন উপজেলার ১০টি মসজিদে একযোগে ঈদের জামাতে অংশ নেন এই চার গ্রামের মুসল্লিরা।
জানা যায়, বড় পীর আবু মুহম্মদ মহিউদ্দীন সৈয়দ আবদুল কাদির জিলানী (রহ.) এর মতাদর্শে তৈরি হয় কাদেরিয়া তরিকা। কাদেরিয়া তরিকার অনুসারী লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হরিণারায়নপুর, বসন্তবাগ ও ফাজিলপুর, রামভল্লবপুর গ্রামের বাসিন্দারা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি বছর একদিন আগে রোজা রাখে। এছাড়া ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করে থাকে। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে তারা প্রায় ১০০ বছর ধরে ঈদ জামাতের আয়োজন করে থাকেন।
কুড়িগ্রাম
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে কুড়িগ্রামের কয়েকটি গ্রামে রোববার ঈদুল ফিতরের জামাত অনিুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার ৫টি উপজেলার ৫টি গ্রামে প্রায় সহস্রাধিক নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর ঈদের নামাজ আদায় করেন।
এদিন সকাল ৯টায় জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকের ছড়া ইউনিয়নের পাইকডাঙ্গা ও ছিট পাইকের ছড়া গ্রামের মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করে। এ ছাড়াও ফুলবাড়ী উপজেলা সদর ইউনিয়নের মাঝিটারী, রাজিবপুর উপজেলার করাতিপাড়া মদিনাতুল উলুম মডেল মাদ্রাসা মাঠ, চিলমারী উপজেলার অস্টমীরচর ইউনিয়নের হাজিপাড়া দারুসুন্নাহ মাদ্রাসা ও ইতিম খানা ঈদগা মাঠ এবং রৌমারী উপজেলার গয়টাপাড়া গ্রামে ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সহস্রাধিক নারী-পুরুষ অংশ গ্রহণ করেন।
রাজশাহী
সৌদির সঙ্গে মিল রেখে রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুঠিয়া পৌরসভার কৃষ্ণপুর গ্রামের একটি মসজিদে রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় কৃষ্ণপুর মুসলিম জামে মসজিদের বারান্দায় ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজের ইমামতি করেন স্থানীয় ইমাম রহিম গাজী। নামাজে মুসল্লিদের উপস্থিত ছিল মোট ১৯ জন। পুরুষ মুসল্লি ছিলেন ১৬ জন এবং নারী ছিলেন ৩ জন।
ঈদের নামাজ আদায় করা ব্যক্তিরা বলেন, আমরা আগে দেশের প্রচলিত নিয়মে ঈদের জামাত আদায় করতাম। ঈদের নামাজ আদায়ের পর একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন তারা।
জামালপুর
সৌদি আরবে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় তাদের সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালান করছেন জামালপুরের দুই উপজেলার ১৭ গ্রামের মানুষ। রোববার সকালে জেলার বিভিন্ন মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠে পবিত্র ঈদের নামাজ আদায় করেন ওই ১৭ গ্রামের প্রায় ২ হাজার মুসলমান।
এর আগে দেশের আকাশে কোথাও রমজান মাসের চাঁদ দেখা না গেলেও একই নিয়মে রোজা রাখেন ওই ১৭ গ্রামের মানুষ।
জানা গেছে, জেলার ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের রামভদ্রা, সাপধরীর ইউনিয়নের পশ্চিম মন্ডলপাড়া সরিষাবাড়ি উপজেলার বলারদিয়া, বাউসী, সাতপোয়া, পঞ্চপীর, সাঞ্চারপাড়, পাখাডুবি, বনগ্রাম, বালিয়া, হোসনাবাদ, পাটাবুগা, পুঠিয়ারপাড় ও বগারপাড়সহ ১৭টি গ্রামের মানুষ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আজ পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করছেন। তবে ওই ১৭টি গ্রামের মানুষের মধ্যে আজ কিছু অংশ ঈদ উদযাপন করলেও বেশিরভাগ মানুষ প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী দেশের আকাশে চাঁদ দেখে ঈদ পালন করার কথা জানিয়েছেন।
নরসিংদী
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মিল রেখে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আমলাব ইউনিয়নের আব্দুল্লাহ নগর মৌলভীবাড়ি দরবার শরিফে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়েছে। রোববার বেলা ১১টায় উপজেলার আব্দুল্লাহ নগর হযরত শাহ মোহাম্মদ মৌলভী আব্দুল হাফিজ দরবার শরিফ মাঠে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ এলাহাবাদ জাঁহাগিরিয়া শাহ সূফি মমতাজিয়া দরবার শরিফের অনুসারীরা ঈদের নামাজ আদায় করেন। ঈদের জামাতের ইমামের দায়িত্ব পালন করেন দরবার শরিফের খাদেম মাওলানা জহিরুল ইসলাম (ছোট্ট)।
মাদারীপুর
মাদারীপুরে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন ২৫ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় জেলার সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সদর উপজেলার চর কালিকাপুর ইউনিয়নের তাল্লুক গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। এই জামাতে কয়েকশ মুসল্লি নামাজ আদায় করেন।
ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করেন হাফেজ মাওলানা সিদ্দুকুর রহমান। নামাজ শেষে শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সকলে কোলাকুলি করে ঈদের আদন্দ ভাগাভাগি করে নেন।
জানা যায়, সুরেশ্বর দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা হজরত জান শরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী (রহ.) এর অনুসারীরা প্রায় দেড়শ বছর আগ থেকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখেন এবং ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করেন। তারই ধারাবাহিকতায় চাঁদ দেখা সাপেক্ষে সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে মাদারীপুর সদর উপজেলার চরকালিকাপুর, মহিষেরচর, পূর্ব পাঁচখোলা, জাজিরা, কাতলা বাহেরচর, তাল্লুক, চরগোবিন্দপুর, পখিরা, খোয়াজপুর, দৌলতপুর, কালিকাপুর, হোসনাবাদ, রঘুরামপুর, আংগুলকাটা, হাজামবাড়ি, বাহেরচর, কেরানীরবাট, কালকিনি উপজেলার রমজানপুর, কয়ারিয়া, রামারপুল, সাহেবরামপুর, আন্ডারচর, খাসেরহাটসহ জেলার ২৫টি গ্রামের মানুষ ঈদ উৎসব পালন করেন।
বরগুনা
বরগুনার বিভিন্ন উপজেলার কয়েকটি গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় এক দিন আগেই রোববার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। তবে বাংলাদেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামীকাল সোমবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বরগুনা সদর উপজেলাসহ ৬টি উপজেলার প্রায় ১৫-২০টি গ্রামে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। মির্জাখীল দরবার শরিফ, কদেরিয়া দরবার শরিফসহ বিভিন্ন দরবারের প্রায় কয়েক হাজার অনুসারীরা এক দিন আগেই ঈদ উদযাপন করেন।
পটুয়াখালী
পটুয়াখালীর বদরপুর দরবার শরিফসহ জেলার অন্তত ৩০টি গ্রামে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। রোববার সকাল ৯টায় বদরপুর দরবার শরিফে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামাত পরিচালনা করেন দরবার শরিফের সেজো পীর শাহ সাইয়েদ মো. আরিফ বিল্লাহ রাব্বানী।
প্রতি বছরের মতো এবারও বদরপুর দরবার শরিফের অনুসারীরা আরবি তারিখ অনুযায়ী চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে আগাম ঈদ উদযাপন করেন। জেলার গলাচিপা, কলাপাড়া, বাউফল, রাঙ্গাবালি ও দুমকি উপজেলার অন্তত ২৫ হাজার মানুষ এই বিশেষ ঈদ উদযাপনে অংশগ্রহণ করেছেন।
মৌলভীবাজার
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে মৌলভীবাজারে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন জেলার শতাধিক পরিবারের মুসল্লি। রোববার সকাল ৭টায় মৌলভীবাজার শহরের সার্কিট হাউস এলাকার আহমেদ শাবিস্তা নামক বাসায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণে মোনাজাত করা হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এখানে এ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
নামাজে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত নারী ও পুরুষ মুসল্লিরা অংশ নেন। নামাজে ইমামতি করেন আব্দুল মাওফিক চৌধুরী (পীর সাহেব উজান্ডি)।
বাগেরহাট
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করছেন বাগেরহাটের মোংলার সুন্দরবন ইউনিয়নের চটেরহাট বাজারের বাসিন্দারা। রোববার সকাল ৮টায় চটেরহাট বাজার জামে মসজিদে এই ঈদের জামাতের ইমামতি করেন মাওলানা আব্দুর রহমান। এতে শতাধিক মুসল্লি অংশ নেন।
নামাজ শেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। নামাজ শেষে একে অন্যের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি করেন মুসল্লিরা।
ভোলা
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগেই ভোলার ১০ গ্রামে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন সাতকানিয়া মির্জাখালী দরবার শরিফ ও সুরেস্বর দরবার শরিফের অনুসারীরা। রোববার সকাল ১০ টার দিকে বিভিন্ন মসজিদে ও ঈদগাহে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় দোয়া মোনাজাত করা হয়।
ভোলার সাত উপজেলার মধ্যে ভোলা সদর উপজেলা, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমুদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরায় উপজেলাতে সাতকানিয়া মির্জাখালী দরবার ও সুরেস্বর দরবার শরীফের প্রায় ৫ হাজার অনুসারী রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার অনুসারী রয়েছেন ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা টবগী ইউনিয়নের মুলাইপত্তন গ্রামে।
লক্ষ্মীপুর
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগেই ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছেন লক্ষ্মীপুরের ১১ গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ। রোববার সকাল ১০ টায় রামগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ পূর্ব নোয়াগাঁও তালিমুল কুরআন নূরানী মাদরাসা ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করেন শতাধিক মুসল্লি।
এ উপজেলার ৪টি ও রায়পুর উপজেলার একটি মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে নয়, হানাফি মাজহাব অনুসারে ঈদ পালন করছেন বলে জানিয়েছেন ইমাম ও মুসল্লিরা।
নারায়ণগঞ্জ
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের ২৩টি গ্রামে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। গ্রামগুলো হলো- সনমান্দী ইউনিয়নের বাংলাবাজার গিরদান, সাদিপুর ইউনিয়নের গণকবাড়ী, পশ্চিম গজারিয়াপাড়া,রতন মার্কেট, হলদাবাড়ি,দক্ষীণ গজারিয়াপাড়া, কোনাবাড়ি উত্তরপাড়া, কোনাবাড়ি, লস্করবাড়ি দক্ষিণপাড়া, গণকবাড়ি দক্ষিণপাড়া, কোনাবাড়ি পশ্চিম পাড়া, হাতুরাপাড়া, সাদিপুর বড় বাড়ি, পূর্ব গজারিয়াপাড়া,বারদী ইউনিয়নে চান্দেরপাড়া,জামপুর ইউনিয়নে আমগাঁও, বাসাবো, মুছারচর মধ্যপাড়া, বস্তল মধ্যপাড়া ও শামপুর কলতাপাড়া গ্রাম।
উপজেলার সনমান্দী ইউনিয়নের বাংলাবাজার গিরদানসহ চারটি স্থানে রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপনের এমন ধারা গত ১৫ বছর ধরে চলে আসছে। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
টাঙ্গাইল
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার শশীনাড়া গ্রামের ৪০টি পরিবার ঈদ উদযাপন করেছে। রোববার সকাল ৮টায় স্থানীয় মসজিদের মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার লাউহাটী ইউনিয়নের শশীনাড়া গ্রামের কিছু মুসুল্লি ২০১২ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদ পালন করে আসছে। রোববার সকাল ৮টায় স্থানীয় মসজিদের মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেন ওই গ্রামের প্রায় ৪০টি পরিবারসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা মুসল্লিরা। ঈদের নামাজ পড়ান হাফেজ এরশাদ হোসেন।
টাঙ্গাইল
দিনাজপুর
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দিনাজপুরে ৬ উপজেলায় ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিদের একটি অংশ। তারা প্রতি বছর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একই দিনে রোজা শুরু, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার নামাজ আদায় ও কোরবানি করেন।
রোববার দিনাজপুর শহরের দিনাজপুর শহরের বাসুনিয়া পট্টি পার্টি সেন্টারে, চিরিরবন্দর উপজেলার রাবার ড্যাম এলাকা, বিরামপুর উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের আয়রা গ্রামের নুরুলহুদা মাদ্রাসা মাঠ ও ৬ জোদবানি ইউনিয়নের খয়েরবাড়ী আমগাছি ঈদগা মাঠ, নবাবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের রাঘবেন্দপুর বাজার মাদ্রাসা মাঠ, কাহারোল উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গোরস্থান ঈদগাঁ মাঠ, বিরল থানাধীন ধর্মপুর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামে বনগাঁও জামে মসজিদে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করে কয়েক শতাধিক পরিবার।
ফেনী
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ফেনীর তিনটি স্থানে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সকালের দিকে পৃথক তিনটি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদনগর ইউনিয়নের পূর্ব সুলতানপুর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পৃথক দুইটি পাড়া ও পরশুরাম পৌরসভার কোলাপাড়া এলাকায় ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার মধ্যে ফরহাদনগর ইউনিয়নের পূর্ব সুলতানপুর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শাহ আমানিয়া জাহাগিরিয়া দরবার শরীফের মাওলানা মোহাম্মদ গোলাম নবীর ইমামতিতে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
পৃথিবীর কোনো প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে রোজা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাসহ যাবতীয় ধর্মীয় আচার পালন করেন তারা। একই সময় গ্রামের অপর একটি অংশ পূর্ব সুলতানপুর রশিদিয়া দরবার শরীফের মরহুম মাওলানা গোলাম কিবরিয়া পীরমিয়ার ছেলে মুহাম্মদ সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বে আরেকটি জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কয়েকটি গ্রামে রোববার (৩০ মার্চ) সকালে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দেবিনগর ইউনিয়নের মোমিনটোলা ও বাগানপাড়া এবং শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ছিয়াত্তর বিঘী গ্রামের কিছু মানুষ ঈদের নামাজে অংশ নেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দেবিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান জানান, দেবিনগরের মোমিনটোলা ও বাগানপাড়ায় কিছু মানুষ প্রতি বছরই সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখে এবং ঈদের নামাজ আদায় করে।
ফরিদপুর
ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গার ১০ গ্রামে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র রোজা পালন শেষে ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়েছে। রোববার এসব গ্রামের মানুষ তিনটি পৃথক জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
এসব জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮টায় মাইটকুমরা গ্রামে, সকাল ৯টায় রাখালতলী ও দশটায় সহস্রাইল দায়রা শরিফে।
মুন্সীগঞ্জ
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে মুন্সীগঞ্জের দুই উপজেলার অন্তত ১৫টি গ্রামে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হয়েছে। রোববার সকাল ৮টা হতে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ওই এলাকাগুলোতে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা সদরের শিলই ইউনিয়নের উত্তরকান্দি মাঝিবাড়ি ঈদগাহে জাহাগিরিয়া মাঠে সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হয় ঈদের জামাত। এতে স্থানীয় শতাধিক ব্যক্তি অংশ নেন।
জাহাগীর তরিকার অনুসারীদের মতে, পৃথিবীর যে কোনো স্থানে নব চন্দ্র দেখা দিলে সেই অনুযায়ী ঈদ পালন করা উচিত। তাই সৌদি আরবের সঙ্গ মিল রেখে ঈদ উদযাপন করেন তারা।
শেরপুর
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে শেরপুরের ৭টি গ্রামের কিছু মুসল্লিরা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে এসব গ্রামে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত আদায় করেন তারা।
প্রতিটি জামায়াতে শতাধিক করে মুসল্লির অংশগ্রহণের পাশাপাশি নারী মুসুল্লিরা পর্দার আড়ালে একই জামাতের সহিত ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজের পর পারস্পরিক কোলাকুলি শেষে তারা অংশ নেন প্রীতিভোজে। এরপর আনন্দ উল্লাসে মেতে থাকেন সারাদিন।
শরীয়তপুর
সৌদির সঙ্গে মিল রেখে শরীয়তপুরের ৩০টি গ্রামের মুসল্লিরা পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন। দেশের অন্যান্য মুসলমানদের থেকে একদিন আগে ঈদ উৎসব পালন করা এসব মুসল্লি সুরেশ্বরীর (রহ.) ভক্ত-অনুসারী।
রোববার (৩০ মার্চ) সকালে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর দরবার শরিফের মাঠে হাজারো মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন।
জানা যায়, জান শরীফ শাহ সুরেশ্বরী নামে এক সুফি সাধকের ভক্ত ও অনুরাগীরা শত বছর ধরে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে রোজা ও ঈদ পালন করে আসছেন। জেলায় সুরেশ্বর, কেদারপুর, চাকধসহ অন্তত ৩০ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ জান শরিফ শাহ সুরেশ্বরীর অনুসারী রয়েছে। রোববার সকালে সুরেশ্বর দরবার শরিফের মাঠে হাজারো মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। প্রতি বছরের মতো এ বছরও সুরেশ্বর দরবার শরিফে নির্দিষ্ট সময়ে পৃথক মাঠে ঈদুল ফিতরের নামাজের দুইটি জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের নামাজে ইমামতি করেন শাহ সুফি সৈয়দ বেলাল নূরী আল সুরেশ্বরী ও মাওলানা মো. জুলহাস উদ্দিন।
আরএআর