ঈদের আগে একসঙ্গে ৩ ছেলেকে হারিয়ে দিশাহারা মা-বাবা

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বাইশকুরা ইউনিয়নের টিকিকাটা গ্রামের মো. নাসির খাঁন ও শিউলি বেগম দম্পতির চার সন্তান। এর মধ্যে ছোট ছেলে পানিতে ডুবে মারা যায় দুই বছর আগে। বাকি তিন সন্তান মো. নাঈমুজ্জামান শুভ (২২), মো. শান্ত (১৪) ও মো. নাদিম (৮)। তিন ভাই মিলে পার্শ্ববর্তী বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায় যাচ্ছিলেন বড় ভাইয়ের বন্ধুর জন্য কেনা ঈদের নতুন পোশাক পৌঁছে দিতে। কিন্তু তাদের আর বাড়ি ফেরা হলো না। পথে রাজিব পরিবহনের বাসের চাপায় প্রাণ গেল আপন তিন ভাইয়ের।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের সোনারবাংলা এলাকার পাথরঘাটা-মঠবাড়িয়া সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, সকালে পাথরঘাটা থেকে রাজিব পরিবহনের একটি বাস ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। পরে পাথরঘাটা-মঠবাড়িয়া সড়কের রায়হানপুর ইউনিয়নের সোনারবাংলা নামক এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মোটরসাইকেলে থাকা আপন তিন ভাই ঘটনাস্থলেই নিহত হন। পরে স্থানীয় লোকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
দুপুরে নিহত তিন ভাইয়ের মরদেহ উপজেলার গুলিশাখালী গ্রামের নানা বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাদের মরদেহ দেখে মা-বাবাসহ আশপাশের মানুষের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। শেষবারের মতো একনজর দেখতে অসংখ্য মানুষ ওই বাড়িতে ভিড় করেন।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
নিহত তিন ভাইয়ের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর পর বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তার মা শিউলি বেগম। ঈদের আগ মুহূর্তে তিন সন্তানকে হারিয়ে বারবার কেঁদে উঠছেন তিনি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা শিউলি বেগম বলেন, আমার তো সব শেষ হয়ে গেল। দুই বছর আগে পানিতে ডুবে মারা গেল ছোট ছেলে। আজ মারা গেল একসঙ্গে তিনজন। হায়! আমার সন্তান কোথায় পাবো। বন্ধুর জন্য কেনা ঈদের জামা পৌঁছে দিতে গেল আর ফিরে আসলো না। এখন আসছে সবাই লাশ হয়ে।
নিহত তিন ভাইয়ের বাবা মো. নাসির খাঁন বলেন, আমি শ্রমিকের কাজ করি। বড় ছেলে শুভ ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করে আমাদের সংসার চালাতো, বাকি দুইজন পড়াশোনা করতো। আমার চার সন্তানের একজন আগে মারা গেছে, আর এখন তিনজন একসঙ্গে দুর্ঘটনায় মারা গেলো। আমি পুরো অসহায় হয়ে গেলাম। আমার সংসার এখন কীভাবে চলবে। পৃথিবীতে কি নিয়ে বেঁচে থাকবো।
মামা বুলু হাওলাদার বলেন, ওরা সবাই ঢাকায় থাকে। বড় জন গার্মেন্টসে চাকরি করে। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। বড় ভাগনে নাঈমুজ্জামান শুভ তার বন্ধুর পরিবারের জন্য ঢাকা থেকে আনা ঈদের পোশাক পৌঁছে দিতে গিয়েছিল আজ। পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজনই মারা গিয়ে পরিবারটা পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেল।
গুলিশাখালী গ্রামের বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, একই পরিবারের তিন সন্তানের মৃত্যুর খবর শুনে মহল্লায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এ ঘটনা খুবই বেদনাদায়ক।
এদিকে এ ঘটনায় ঘাতক রাজিব পরিবহনের বাসটিকে জব্দ করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন আইনে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন পাথরঘাটা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান।
শাফিউল মিল্লাত/এএমকে