‘বিপ্লব সফল না হলে আমাদেরও মেরে ফেলা হতো’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বাউফলে ৬ জন শহীদ এবং ২৫ জন আহত হয়েছে বলে আমরা জানি। বাউফল সবদিক থেকে অন্যরকম শিক্ষায়, রাজনীতিতে এবং বিপ্লবেও। এই জুলাই বিপ্লবে বাউফলের আপামর জনগণ ঢাকায় বরিশালে বিভিন্ন জায়গায় অংশগ্রহণ করেছে এবং তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ মাধ্যমে আমরা এই স্বাধীনতা পেয়েছি।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (২৮ মার্চ) বিকেলে বাউফল উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জুলাই বিপ্লবে শহীদ, আহত যোদ্ধা ও সাংবাদিকদের সম্মানে দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন ।
মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, প্রত্যেকটি বিপ্লবের পর বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন হয়েছে এই বিপ্লবের চেতনা ধারণ করে। ১৯৭১ সালের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে কিন্তু তাদের দুঃশাসন অপশাসন ও দুর্নীতির কারণে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সপরিবারে নিহত হয়েছেন। পরে জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে দল গঠন করেন। সেই দল হওয়ার পরে ১৯৭৯ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি সরকার গঠন করে। এরপর ১৯৮২ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পরে আবার জাতীয় পার্টি নামে একটা দল আসে।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, সর্বশেষ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। আপনারা দেখেছেন আওয়ামী লীগ পরিবর্তনের কথা বলে বাংলাদেশের মানুষের ভোট নিয়ে এসেছেন। ১০ টাকায় চাল খাবো নৌকায় ভোট দেবো এই কথা বলেছেন, কিন্তু তারা সেই কথা রাখতে পারেনি। বাংলাদেশের মানুষের ওপর ফ্যাসিস্ট সরকার চাপিয়ে দিয়েছেন। তারা মানুষকে ভোট দিতে দেন নাই, দিনের ভোট রাতে দিয়েছেন। এমন কোনো জায়গা নেই যে তারা ভোট কারচুপি করে নাই। ১৫২ জনপ্রতিনিধি তারা জাতীয় সংসদে পাঠিয়েছিল যাদের কোনো ভোট ছিল না। এভাবে যখন বাংলাদেশের মানুষের ওপরে ফ্যাসিজম চাপিয়ে দেয় তখন কোনো রাজনৈতিক দল একক চেষ্টায়, সম্মিলিত চেষ্টায় যখন কোনো বিপ্লব সাধন করতে পারে নাই, এই ফ্যাসিজম হটাতে পারে নাই তখন তরুণ ছাত্র-জনতার আহ্বানে বাংলাদেশের মানুষ ছাত্র, শ্রমিক, জনতা সবাই নেমে আসেন।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, নাহিদ ইসলামকে রক্তাক্ত করে দেওয়া হয়েছিল এবং তার সাথে যারা ছিল অন্যান্যদের ডিবির হারুন গ্রেপ্তার করে রেখেছিল। আমার মনে আছে নাহিদ ইসলাম যখন ডিবির জেলের ভেতরে ছিল তখন তার পরিবারের সদস্যরা ও তার স্ত্রী আমার সাথে যোগাযোগ করত, কি করব এর থেকে পরিত্রাণের উপায় জানতে চাইতো। আমরা টাইম টু টাইম পরামর্শ দিয়েছি, পাশে থেকেছি।
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিপ্লবের অন্যতম এক নেতা আব্দুল হান্নান মাসুউদ। কোথাও আশ্রয় পাচ্ছিলেন না। তখন একজন আমাকে জানালে আমি আমার চেম্বারে নিয়ে আসতে বলি। পরে তার যাবতীয় কাগজপত্র, ব্যাগ, মোবাইল রেখে তাকে নিরাপদ জায়গাতে রাখার চেষ্টা করেছি। ওই সময়ে সকালে বিকেলে আমার অফিসে পুলিশ আসত, অফিস করতে পারতাম না। এরকম পরিস্থিতিতে আমরা জীবন মরণ সন্দিহান করেছিলাম যে বিপ্লব সফল না হলে আমাদেরও মেরে ফেলা হবে। আমরা বাংলাদেশে কোনোদিন শান্তিতে বসবাস করতে পারব বলে মনে হয়নি।
তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় নাগরিক পার্টির সব জায়গায় কমিটি হয়নি। ঈদের পর আমরা বাউফলের একটি সুন্দর কমিটি উপহার দেব।
মুজাহহিদুল ইসলাম শাহিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, জুলাই বিপ্লবে যারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন তাদের পরিবারের কোনো সদস্যকে কেউ হয়রানি করলে তাদেরকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা কোনো দুর্বৃত্তকে দলে আশ্রয় দিয়েন না। কারণ তারা অপকর্ম করলে তার দায় দলকেই বহন করতে হবে।
অধ্যাপক আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন— জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম মুসা, শহীদ মেহেদি হাসানের বাবা মোশারেফ হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার, মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অহিদুজ্জামান সুপন, বাউফল প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক জনকণ্ঠের নিজস্ব সংবাদদাতা কামরুজ্জামান বাচ্চু, বাউফল প্রেস ক্লাবের সভাপতি জলিলুর রহমান, বাউফল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদুল ইসলামের শ্বশুর মো. হারুন। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন- মো. মিজানুর রহমান।
আরিফুল ইসলাম সাগর/এমএ