১২০০ কোটি টাকা ব্যয় করেও মৃতপ্রায় কুমার নদ

সারাবছর পানি প্রবাহ ও স্রোতময় ছিল মাদারীপুরের কুমার নদ। সময়ের বিবর্তনে অযত্ন, অবহেলা আর দখল-দূষণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে সেই নদী।
বিজ্ঞাপন
এর আগে ১২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করেও জৌলুস ফেরাতে পারেনি সরকার। গচ্ছা গেছে সরকারের এই বিপুল পরিমাণ টাকা। এদিকে নদটি পরিণত হয়েছে মৃত খালে। তবে পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে নদটি পুনরায় খননের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে নদীপাড়ের অবৈধ স্থাপনা দখল মুক্ত করে খননের আশ্বাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জানা গেছে, কুমার নদের তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছিল মাদারীপুর জেলা সদরের চরমুগরিয়া বন্দর ও রাজৈর টেকেরহাট বন্দর। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে এই নদ খননে দুই দফায় ১২০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়। কিন্তু সঠিকভাবে খনন না করায় নদতে স্রোত ফেরেনি। বর্ষাকালে কিছুটা পানি দেখা গেলেও কয়েক মাসের ব্যবধানে শুকিয়ে যায় নদটি।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুই দশক আগেও মাদারীপুর থেকে খুলনা যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন ছিল এই কুমার নদ। মাদারীপুরের সঙ্গে নৌপথে খুলনা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুরের যোগাযোগ ছিল। তখন এই নদের যেমন ছিল রুপ যৌবন তেমনি ছিল গভীরতা। খুলনা থেকে মাদারীপুরের চরমুগুরিয়া উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসতো বড় বড় স্টিমার। পানির গর্জন শুনে ভয় পেত নদ পাড়ের বসবাসরত মানুষ। পাল তুলে ছুটে যেতো বড় বড় নৌকা। কালের বিবর্তনে সেই নদ এখন মৃত প্রায়। হাসিনা সরকারের আমলে কুমার নদ খনন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে দুই কিস্তিতে ১২০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কুমার নদ এখনও মৃত প্রায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাজৈর উপজেলা টেকেরহাট এলাকার কুমার নদের জমি দখল করে অনেকেই স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। দখল আর দূষণে অস্তিত্বহীন কুমার নদী। সরু খালের মত বয়ে চলছে। নেই পানির স্রোত। কোথাও কোথাও নদীর মাঝেই সবুজ ফসলের ক্ষেত। প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে পানি। দূষণ আর অবৈধ দখলের কারণে নদটির এখন আর আগের রূপ নেই। নদের বেশকিছু অংশ এতটাই দূষিত হয়েছে যে, দুর্গন্ধে পশু-পাখিরাও এর পানি পান করতে পারে না।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় বাসিন্দা মোকসেদ শেখ বলেন, এই নদের পানি আগে সব কাজে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন ময়লা-আবর্জনায় দূষিত হওয়ায় পানি ব্যবহার করা যায় না। এখন গোসল করা তো দূরের কথা, পানির দুর্গন্ধের কারণে কাছেই যাওয়া যায় না।
আরেক বাসিন্দা মিনহাজ হাওলাদার বলেন, পরিবেশ রক্ষায় কুমার নদের দূষণরোধে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কয়েক বছর আগে এই নদ খননের জন্য ১২০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়। অথচ এখন এই নদের অস্তিত্ব নেই।
স্থানীয় এক যুবক হাফিজ তালুকদার জানান, কুমার নদটি দীর্ঘদিন যাবৎ মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। অনেক বছর আগে খনন করলেও কোনো লাভ হয়নি। বর্ষাকালে একটু পানি হয় তাও না হওয়ার মতো। কারণ এই নদীর সংযোগ টেকেরহাট বাশহাটার কাছে। ওইখান দিয়ে পানি প্রবাহ হয়। কিন্তু সেখানেই ভালো করে খনন করা হয়নি। তাই পানি প্রবেশ করতে পারে না। বড় সমস্যা হলো মাঝে বেশি খোঁজ করে দুই পাশে মাটি জমিয়ে রাখায় মানুষের দখল করতে সুবিধা পাচ্ছে।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের চৌধুরী বলেন, নদ খননের জন্য ডিপিপি প্রণয়ন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনেক আগে বিআইডব্লিউটিএ এর মাধ্যমে নদ খনন করা হয়েছিল। অবৈধ দখল উচ্ছেদেও কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।
আকাশ আহম্মেদ সোহেল/আরকে