এখনো আ.লীগ নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে ময়মনসিংহের টিসিবি-ওএমএস

দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটেও ময়মনসিংহে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এবং ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ করছে পতিত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে গণঅভ্যুত্থানের বিপ্লবী শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মাঝে।
বিজ্ঞাপন
অভিযোগ উঠেছে, চলতি রমজানেও কম মূল্যে প্রয়োজনমতো চাল, ডাল, আটা, তেল, চিনি, খেজুরসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সাতটি পণ্য কিনতে পারছেন না নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষজন। কৃত্রিম সংকটে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও পণ্য কিনতে না পেরে প্রতিদিন ফিরে যাচ্ছেন শত শত মানুষ। আর এ সুযোগে এসব পণ্য বিতরণে নয়ছয় করে সরকারের ভর্তুকি লুটেপুটে খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট ডিলাররা। এতে বঞ্চিত হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের সাধারণ মানুষ।
সূত্রমতে, বর্তমানে ময়মনসিংহ জেলার ১৩টি উপজেলায় ২৬ জন ডিলার এবং সিটি কর্পোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডে মোট ৩৯ জন ডিলার কাজ করছেন ওএমএস প্রকল্পে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ জেলা ও সিটি এলাকায় প্রতি মাসে ৪৩৯ জন ডিলার টিসিবির পণ্য বিক্রি করছেন। আর টিসিবির উপকারভোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ২ হাজার ৯৭১ জন।
বিজ্ঞাপন
অভিযোগ রয়েছে, ২০২২ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি, মেয়রের প্রভাব খাটিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীরা এসব ডিলারশিপ ভাগিয়ে নেন। এর মধ্যে নগরীর বাঘমারা এলাকার বাসিন্দা ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরান বাবু, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মো. টিপু, কেওয়াটখালী এলাকার রাফা ট্রেডার্সের মালিক ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. রুকন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের ঘনিষ্ঠজন নগরীর কালীবাড়ী এলাকার আশরাফ ট্রেডার্সের মালিক আশরাফুল, ঘন্টি এলাকার আরিফ, শম্ভুগঞ্জ এলাকার যুবলীগ নেতা মিনহাজ, খাগডহর এলাকার আরেফিন ও নিরঞ্জন বাবু; এই ৮ জনের নিয়ন্ত্রণে চলছে জেলা ও সিটির টিসিবি এবং ওএমএস প্রকল্প।
আরও অভিযোগ, এই ৮ জনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে নামে-বেনামে একাধিক ডিলারশিপ। এর মধ্যে কাছের লোক, আত্মীয়স্বজন, স্ত্রী ও সন্তানদের নামেও ডিলার নেওয়া হয়েছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ছিটকে পড়লেও এখনো প্রকাশ্যে দাপটের সঙ্গে ময়মনসিংহের টিসিবি এবং ওএমএস নিয়ন্ত্রণ করছেন এই আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল কাদির বলেন, ২০২২ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ওএমএস-এর ডিলাররা এখনো কাজ করছেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর নতুন ডিলার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হলে ডিলারদের পক্ষ থেকে একজন উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। ফলে আদালতের নির্দেশে আগামী জুন পর্যন্ত তারাই বহাল থাকবেন। তবে জুনের পর ডিলার নিয়োগের কার্যক্রম শুরু হবে।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় টিসিবির সহকারী পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ডিসির সুপারিশের ভিত্তিতে সরেজমিনে তদন্ত করে ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে কে কোন দল করে তা আমাদের জানা নেই এবং কবে নাগাদ টিসিবির নতুন ডিলার নিয়োগ হবে তাও আমি জানি না। সরকারের সিদ্ধান্তেই নতুন ডিলার নিয়োগ হবে।
এমজেইউ